অসহায় ফিলিস্তিনি নারী-শিশুদের কান্না, কূটনৈতিক তৎপরতা, জাতিসংঘের হুশিয়ারি আর বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড়- কোনো কিছুতেই ভ্রুক্ষেপ করছে না ইসরাইল। প্রায় একতরফা হামলা চালিয়ে শত শত বেসামরিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে দেশটি। ৮ জুলাই থেকে অব্যাহত বর্বর এ হামলায় ৮শ’র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি। গাজা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। অধিবাসীদের খাবার ফুরিয়ে যাচ্ছে। রয়েছে বিদ্যুৎ, পানি আর ওষুধের তীব্র সঙ্কট। লাখ লাখ নারী-পুরুষের দিন কাটছে চরম আতঙ্কে। গোলা ও ক্ষেপণাস্ত্রের শব্দে তাদের ঘুম ভাঙছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই অতি আপনজন লাশ হয়ে যাচ্ছেন। শুক্রবারও গাজার বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। এতে নিহত হয়েছেন প্রায় দশ জন। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলায় গর্ভবতী নারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। তবে নিহত ওই নারীর গর্ভস্থ শিশুটি বেঁচে গেছে। বিবিসি, আলজাজিরা ও এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এসব তথ্য দিয়েছে।
গাজার জরুরি বিভাগের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা জানিয়েছেন, শুক্রবার গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের একটি বাড়িতে বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি সেনারা। এতে ২৩ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি গর্ভবতী নারী নিহত হয়েছেন। তবে তার গর্ভস্থ সন্তানটি বেঁচে গেছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, শিশুটি ভালো আছে। তবে সে খুব কাঁদছে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে আরেকটি বিমান হামলায় ১২ ও ১৫ বছরের দুই ছেলেসহ ইসরাইলবিরোধী নেতা সালাহ হুসেইন নিহত হয়েছেন। গাজা উপত্যকায় দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলবিরোধী লড়াই করে আসছিলেন সালাহ। আল-কুদরার এএফপিকে জানান, এর আগে বৃহস্পতিবার প্রায় ১০০ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন। তিনি জানান, ইসরাইলে ছোড়া গোলার আঘাতে তিনজন নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় গত ১৮ দিনে ৮১৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার। এছাড়া প্রায় সোয়া এক লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। যাদের অধিকাংশ জাতিসংঘের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরাইলে ৩২ জন সেনা এবং তিনজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি নেতারা পশ্চিম তীরে রমজানের শেষ শুক্রবার ‘বিক্ষোভের দিন’ পালনের ঘোষণা দিয়েছিল। গাজা হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলে ইসরাইলি পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ইসরাইলি পুলিশ ২০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে। রামাল্লা থেকে অন্তত ১০ হাজার বিক্ষোভকারী পূর্ব জেরুজালেমের উদ্দেশে যাওয়ার পথে ইসরাইল এ হামলা চালায়। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ বিক্ষোভের ডাক দেয়া হয়। বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, সন্ধ্যায় জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদে যাওয়ার পথে বাধা দেয় ইসরাইলি পুলিশ। সেখানে ৫০ বছরের কম বয়সী পুরুষদের ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। অন্যদিকে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বলেছে, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিরা পাথর ছুড়ে বিক্ষোভ করে ও টায়ার জ্বেলে সড়ক অবরোধ করে। ইসরাইলি পুলিশ বিক্ষোভ দমনে অস্ত্র ব্যবহার করে।এদিকে হামাস সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার তারা ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবের বিমানবন্দরে রকেট হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও এ হামলার কথা স্বীকার করা হয়েছে। এই নিয়ে চলতি সপ্তাহে দ্বিতীয়বারের মতো ইসরাইলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিতে হামলা চালাল হামাস। হামাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে বেন গুরিয়নে তিনটি এম৭৫ রকেট ছুড়েছে কাশেম ব্রিগেডের সদস্যরা।গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে। যুদ্ধবিরতি ইস্যু নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য সফরে আছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। শুক্রবার জন কেরি মিসরে বান কি মুন ও মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পরে বান কি মুন মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শুকরির সঙ্গে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে ইসরাইল ও হামাসের সংঘাত বন্ধের বিষয়ে আলোচনা করেন। তবে কোনো রকম কূটনৈতিক তৎপরতা বা জাতিসংঘের হুশিয়ারিতে ভ্রুক্ষেপ নেই ইসরাইলের। গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে দেশটি। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিনে নিহত হওয়া সাধারণ মানুষের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি এসব ঘটনার জন্য হামাসকে দায়ী করেছেন। মানবিক কারণে যুদ্ধবিরতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন হামাস নেতা খালেদ মিশাল। কিন্তু তিনি শর্ত দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধবিরতির আগে গাজায় ইসরাইলের অবরোধ তুলে নিতে হবে।