শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞে বিশ্ব বিবেক চুপ কেন?

3_132280

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। নৃশংস এ হত্যাযজ্ঞে চুপ থাকায় পশ্চিমা সরকার ও দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনা করেন তিনি। শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আক্রমণে যেভাবে শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে- তার তীব্র ঘৃণা জানাই, নিন্দা জানাই। অবাক হয়ে যাই বিশ্ব বিবেক কিভাবে চুপ করে থাকে!বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসার ৮৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরও বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আআমস আরেফিন সিদ্দিক, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রেবেকা মোমিন, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান প্রফেসর মমতাজ বেগম প্রমুখ। এছাড়া জন্মদিন উপলক্ষে বেগম মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন সংগঠন। ছিল নানা কর্মসূচিও।শেখ হাসিনা বলেন, এখানে একটা মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে কত কংগ্রেসম্যানের চিঠি পাই। কত প্রতিবাদ পাই, কত কিছু। আর আজকে শত শত শিশুকে গুলি করে মারা হচ্ছে, নারীদের মারা হচ্ছে, অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের মারা হচ্ছে। এখন এদের বিবেক নাড়া দেয় না কেন? প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, এই যে সভ্য দুনিয়া নিজেদের সভ্য বলে মনে করে, তারা কেন এখন চুপচাপ? এ বিষয়ে দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে কত মানবাধিকার সংস্থা, কত কিছু। একটু কিছু ঘটনা ঘটলে ছুটে যাচ্ছে। কেউ পার্বত্য চট্টগ্রামে ছুটে যাচ্ছেন। কেউ চর এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন। কেউ এখানে যাচ্ছেন। কেউ ওখানে যাচ্ছেন। এখন তাদের কণ্ঠ একেবারে নীরব কেন? অনুষ্ঠানে উপস্থিত আওয়ামী লীগের নারী সংগঠনগুলোকে এর প্রতিবাদ জানাতে বলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নয় মাস পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে বাংলাদেশের নারী ও শিশু হত্যাকাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মনে রাখবেন, একটা ঘটনা অন্য কোথাও ঘটলে আমরাও যে রেহাই পাব- তা নয়। আমরা কিন্তু রেহাই পাইনি। আমাদের একাত্তরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরীহ ফিলিস্তিনি মা ও শিশুদের রক্তমাখা ছবি দেখে তার মা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ও ছোট ভাই রাসেলের কথা মনে পড়ে যায়। এ সময় তিনি আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগের নারী সংগঠনগুলোর উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, যেখানেই এ ধরনের নির্যাতন চলবে, সেখানেই বাংলার মায়েরা-মেয়েরা প্রতিবাদ করবে- এটা আমি চাই। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে আরও বলেন, একাত্তর সালে আমাদের বাংলাদেশে তো এভাবে নারীদের নির্যাতন করা হয়েছে, শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। এত যুগ পর একই চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সব কর্মকাণ্ড এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে পর্দার আড়ালে গুরুত্বপূর্ণ ও বিচক্ষণ ভূমিকা পালন করেন শেখ ফুজলাতুন্নেসা মুজিব মন্তব্য করেন অনুষ্ঠানের বক্তারা। তারা আরও বলেন, ইতিহাস অবশ্যই বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর কৃতিত্বের পাশে রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সচেতন এই মহীয়সী দেশপ্রেমিকের অবদান মূল্যায়ন করবে।বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী পালিত : আলোচনা সভা, দোয়া-মিলাদ ও শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৮৪তম জন্মবার্ষিকী পালন করেছে।খালেদা জিয়াকে একদিন আগে বা পরে জন্মদিন পালনের অনুরোধ : আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার আসল জন্মদিন হলেও জাতীয় স্বার্থে একদিন আগে বা পরে পালন করা উচিত। ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে শুক্রবার বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৮৪তম জন্মবার্ষিকীতে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন তিনি। যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার মৃত্যুদিনে বিএনপি আনন্দ-উল্লাস করে থাকে। আমরা যদি ৩০ মে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে শেখ হাসিনার জন্মদিন বানিয়ে আনন্দ-উল্লাস করি তাহলে তাদের কেমন লাগবে? তারা বিতর্কিত ওই জন্মদিন পালন করলেও আমরা পাল্টা কোনো কর্মসূচি দিই না।’
‘বিতর্কিত জন্মদিন বানিয়ে পালনকারীদের সঙ্গে অর্থবহ সংলাপ করা সম্ভব নয়’ বলেও সাফ জানিয়ে দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমরা সংলাপের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু যারা বিতর্কিত জন্মদিনের মাধ্যমে জাতির শোক দিবসে আনন্দ-উল্লাস করে থাকেন তাদের সঙ্গে অর্থবহ সংলাপ ও সমঝোতা কিভাবে হতে পারে? তারা ওই জন্মদিন পালনের মাধ্যমে আমাদের আবেগে আঘাত করেন।’ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওসারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তৃতা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ। এছাড়া বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আওয়ামী মহিলা লীগ বঙ্গমাতার স্মরণে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। এর আগে সকালে বঙ্গমাতার সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী বিভিন্ন সংগঠন। সকাল সাড়ে ৮টায় বনানী গোরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ বঙ্গমাতার সমাধিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে।