রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

খালগুলোতে অবৈধ দখলের জন্য সরছে না পানি : মীরসরাইতে পাহাড়ী ঢলে তলিয়ে গেছে নিন্মাঞ্চল

mirsorite panir nicheপলাশ মাহবুব ॥ গত কয়েকদিনের টানা বর্ষনে গতকাল শনিবার ২৫ জুলাই পর্যন্ত তলিয়ে গেছে মীরসরাইয়ের ১৬ টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার নিন্মাঞ্চল। বিভিন্ন ইউনিয়নের অন্তঃত ২৫ টি গ্রামের হাজার হাজার পরিবার এখন পানিবন্ধি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে মতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার জন্য খালগুলোর হাটবাজার অংশে অবৈধ দখলের কারনে পানি সরতে পারছে না বলে সকলের অভিযোগ।
৭ নং কাটাছরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ার সবুজ জানান সেখানে বামনসুন্দর ও বাড়িয়াখালি গ্রামে ঘরবাড়ী পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেক দূর্ভোগ পোহাচ্ছে জনগন। তিনি জানান গতকাল শনিবার দুপুওে দুর্গাপুর গ্রামে জলের উপর দাঁড়িয়ে একটি জানাযা পড়তে হয়েছে। মৃত লাশ ও অনেক দূর্ভোগ করে দাফন করতে হয়েছে।
১২ নং খৈয়াছরা ইউনিয়নের ইউনিয়নের পশ্চিম খৈয়াছরা গ্রামের জনৈক জসিম উদ্দিন জানান সেখানে মিরাজ উদ্দিন প্রধানের বাড়ী থেকে মকরম আলী চৌধুরী পর্যন্ত কয়েক শত পরিবার এখন পানির নিচে বসবাস করছে। রান্নাঘর, বসত ঘর সহ সবি এখন জলের উপর। এই বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহেদুল্লাহ চৌধুরী এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আবুতোরাব বাজারের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল সহ বিভিন্ন এলাকার খাল গুলোর উপর অবৈধ দোকান পাট নির্মান করায় পাহাড়ী পানি দ্রুত সরতে পারছে না। তাই এই জলাবদ্ধতা। আবার মীরসরাই পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট, গোভানিয়া এলাকার বাড়িঘর রাস্তা ঘাট। ফেনাফুনি গ্রামের শত শত ঘরবাড়ি সবি এখন জলের নীচে।
এই বিষয়ে মীরসরাই পৌর মেয়র এম শাহজাহান বলেন গোভানিয়া ও আমবাড়ীয়া এলাকায় আমি সরেজমিনে গিয়ে এলাকাসীকে জরুরী ভিত্তিতে কিছু সাহায্য পাঠিয়েছি । কিন্তু যা নিতান্তই সামান্য, এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত জরুরী ত্রাণ প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
উপজেলার ওচমানপুর ও ইছাখালী ইউনিয়নে পূর্ব থেকেই পানিবন্দি হয়েছিল দুইটি গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবার। গত দুদিনের টানা বৃষ্টিতে দূর্ভোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে আরো কয়েক শত পরিবার। তলিয়ে গিয়ে মাছের প্রকল্পগুলো ভেসে গেছে লক্ষ কোটি টাকার মাছ। দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর নেই খাবারের সন্ধান।
মীরসরাইয়ের নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়া আহমেদ সুমন গতকাল তাৎক্ষনিক তাদের মাঝে কিছু খাবার বিতরন করলে ও জলাবদ্ধতা বেড়ে যাওয়ায় তাদের দূর্ভোগ আরো বেড়ে যায়।
৫নং ওচমানপুর ইউনিয়নের উক্ত বাঁশখালি ও ৬নং ইছাখালি ইউনিয়নের সাহেবদীনগর গ্রামের পানিবন্দি পরিবারগুলো গতকাল শনিবার ( ২৫জুলাই ) পর্যন্ত প্রায় দশদিন ধরে দূর্ভোগের মধ্যে কাটাচ্ছিল শত শত পরিবার। ঘরবাড়ী ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে অর্ধশতাধিক পরিবার। ৫নং ওচমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের তৈরি, সরকারি খাল দখল করে বাঁধ তৈরির কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালি দখলদারদের কারণে এই সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে।
৩ নম্বর জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর সোনাপাহাড় এবং বারইয়াহাট পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শুধুমাত্র অপরিকল্পিতভাবে বহুতল বাড়ি এবং মার্কেট নির্মাণের ফলে দুইশ পরিবার গত ৩ দিন ধরে পানি বন্দি রয়েছে। ১ নম্বর করেরহাট ইউনিয়নের কিছু অংশে ও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার শত শত পুকুর পানিতে ডুবে গেছে। ১৭টি কাঁচা ঘর দেবে গেছে। বর্তমানে কয়েক’শ ঘর-বাড়ি পানিতে ডুবে আছে। গ্রামীণ সড়কগুলোর অবস্থা নাজুক। গ্রামের অধিকাংশ সড়কে ৩ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত পানি উঠেছে।
এদিকে পাহাড়ী ঢলের কারণে গ্রীস্মকালীন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলায় সবচেয়ে বেশী উৎপাদিত শাকসবজি বরবটি, ঢেঁডশ, পুঁইশাক, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গাসহ বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি জমি এখন পানির নীচে।
বিশেষ করে খাল গুলোর উপর অবৈধ দখলের জন্যই এমন জলাবদ্ধতা বলে সর্বজনের মন্থব্য। উপজেলার আবুতোরাব, বামনসুন্দর দারোগার হাট ও শান্তির হাট বাজারের উপর হাটের বুক চীরেই রয়েছে প্রধান খাল। কিন্তু রহস্যজনকভাবে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না এইসব দখল উচ্ছেদে। তবে এই বিষয়ে উপজেলার ১৩ নং মায়ানী ইউপি চেয়ারম্যান কবির নিজামী বলেন গত অর্থবছরে বিএডিসি (বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশান) কর্তৃক আবুতোরাব খালটি খননের বরাদ্ধ এলে ও তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রহস্যজনকভাবে বাজার অংশে অবৈধ দখল উচ্ছেদ না করে খাল ও কাটাননি আর । আর এতে জলাবদ্ধতা নিরসনের সম্ভাবনাই বন্ধ হয়ে যায়। বরং অবৈধ স্থাপনা নির্মানকারীরা বাকি খাল দখলে ও উৎসাহিত হয়। তিনি আরো বলেন ইউএনও যদি উদ্যোগ নিতেন আমরা ও সহযোগিতা করতে পারতাম।