রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

কয়েক মাসেই জমে উঠেছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তহাট ।। উৎসবমুখর মিলনমেলা

6100930a243e5be011874026ea485853
পলাশ মাহবুব মীরসরাই ।। ওপারে ভারত, এপারে বাংলা, মাঝখানে কাঁটাতার এর প্রাচীর। এক সময়কার অভিন্ন জনপদ, সেই সূত্রে অনেকেরই আত্মিয় স্বজন রয়েছে উভয়দিকেই। ভারত পাকিস্তান বিভক্তির পর কেউ আর সহজে কাউকে পায় না। ইচ্ছে হলেই মাসি পীসি কিংবা বন্ধু স্বজন কারো সাথে ভাব বিনিময় আর সম্ভব নয়। দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দি পেরিয়ে তা এখন আবার সম্ভব করে দিলো বাংলাদেশের ছাগলনাইয়া আর ভারতের ত্রীপুরা রাজ্যের শ্রীনগর সীমান্তহাট। দুদেশের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য সম্প্রিতীর এক অকৃত্রিম ভাব বিনিময় পরিল িত হচ্ছে এই হাট টিতে। চলতি বছরের গত ১৩ জানুয়ারী উদ্বোধন হওয়া এই সীমান্তহাট গত কয়েকমাসে দুদেশের সুফলভোগী জনগোষ্ঠির মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। সপ্তাহের একদিন প্রতি মঙ্গলবার দিনভর যেন এখানে উৎসবমুখর পরিবেশ। সকাল ১১ টা থেকে দুদেশের বিক্রেতারা স্ব স্ব সামগ্রী নিয়ে দোকান সাজাতে থাকে। দুপুর ১ টা থেকে আসতে থাকে ক্রেতারা । বিকেল ৫ টা থেকে আবার সবাই চলে যায় যে যার গন্থব্যে। এরি মধ্যে কেউ করছে পছন্দের কেনাকাটা। কেউ ওপারের মাসি কিংবা দাদীমার জন্য পাঠানো পিঠা পায়েস পৌছে দিচ্ছে ওপারের বাহকের হাতে। কিংবা নিজেই খাইয়ে দিচ্ছে কাউকে। এ যেন আরেক জনমের বন্ধন জেগে উঠেছে পূনর্বার।

বিশেষত দেখা গেছে বাংলাদেশী ক্রেতারা আগ্রহ দেখাচ্ছে ভারতীয় প্রসাধনি, স্টীল, মসলা চা সহ নানা পন্যের দিকে। আর ভারতীয়রা বাংলাদেশী পুকুর জলাশয়ের মাছ, কাপড়, প্লাষ্টিক, শুটকী ও মৌসুমী পণ্যের দিকেই ঝুঁকছে বেশী। হাটে উভয় দেশের ২৮ টি করে দোকান রয়েছে। অনেকে আবার বাংলাদেশ ভারতীয় যৌথ উদ্যোগে ও ব্যবসা করছে।

সম্প্রতি উক্ত সীমান্তহাটে সরেজমিনে এলে বাজার পরিদর্শনে আসা ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী শহিদুল ইসলাম জানান তাঁর একান্ত উদ্যোগে এই হাটটি বাস্তব রূপ লাভ করেছে, তাই বাজারে মূল্য অবৈধ কিছু আসছে কিনা বা মূল্য নিয়ন্ত্রিত আছে কিনা তা দেখতে এসেছেন তিনি। এসময় তিনি বলেন এখানকার স্থানীয় জনগন এই বাজার স্থাপনে অনেক সহযোগিতা করেছে। উপজেলার নিজস্ব রাজস্ব থেকেই তিনি এই সীমান্তহাট প্রতিষ্ঠা করেছেন। তবে স্থানীয় লোকজন এখানে অনেকেই বিনামূল্যে জমি ও দিয়েছেন। আবার অর্থায়নে সর্বাধিক অংশগ্রহণ করেছে ভারত, তা ও তিনি স্বীকার করেন। ইউএনও আরো বলেন, এখন আমাদের দেশের ক্রেতাদের সুবিধার্থে কিছু অংশের কাঁচা রাস্তাটি প্রশস্থকরণসহ কার্পেটিং উদ্যোগ ও নিবেন শীঘ্রই।

এসময় সাথে থাকা ছাগলনাইয়া থানার ওসি রাশেদ খান চৌধুরী বলেন, সীমান্ত এলাকায় দায়িত্বরত বিজিবি খুবই সুশৃংখলভাবে এই হাটটি পরিচালনা করছেন তবু আমরা ও শৃংখলা রক্ষায় যথেষ্ট সচেষ্ট এখানে। স্থানীয় মধুগ্রাম বিজিপি ক্যাম্পের কমান্ডার জাহাঙ্গির বলেন, এখানে একটি বিষয়ে জনসচেতনতা প্রয়োজন তা হলো অনেকেই না জেনে কোনো প্রকার অনুমতি ও পাস সংগ্রহ ছাড়াই হাটে চলে আসছে। কিন্তু ইউএনও অফিস থেকে ভোটার আইডি কার্ড ও ছবি দিয়ে পাস সংগ্রহ ছাড়া এলে আমরা তাঁদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। ফেনী থেকে হাটে বাজার করতে আসা জনৈক আইনজীবি দম্পতি পরিবার নিয়ে কেনাকাটা কালে তাদের অনুভূতি জানতে চাইলে আইনজীবি জহির উদ্দিন বলেন স্বাধীনতার ৪১ বছর পর এভাবে দু-অঞ্চলের ভাতৃত্ব বন্ধনের উদ্যোগে আমরা খুবই আনন্দিত। মীরসরাইয়ের করেরহাট থেকে হাটের এক ক্রেতা এনায়েত হোসেন নয়ন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন এই সম্প্রিতিতে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে, এমন উদ্যোগ আরো আগে নেয়া হলে আমাদের উভয় পারেরই মঙ্গল হতো। বাজারে আসা ভারতের শ্রীনগরের সুকান্ত পল্লীর একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী পান্না দে ও রাকেশ নাথ বলে’’ এহি হাট বহুত আচ্ছা লাগতা হে, ইহা বহুত আচ্ছা আচ্ছা চিজ মিলতা হে’’ চট্টগ্রামের সর্বশেষ জনপদ মীরসরাই উপজেলার করেরহাট হতে মাত্র কয়েক কিলোমিটার অদূরেই এই সীমান্তহাট। ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের মোকামিয়া গ্রাম এবং ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার শ্রীনগর থানার কৃষ্ণনগর এলাকায় এই হাট। চট্টগ্রাম থেকে বারইয়াহাট-ছাগলনাইয়ার চয়েস বাসে করে একদম হাটের সামনেই ১শত গজ অদূরে নামতে পারবে। গত ১৩ জানুয়ারী ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী শ্রীমতি নির্মলা শীতারাম ও বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ হাটের উদ্বোন করেন। মার্চের শেষ প্রান্ত অবধি এই বাজার উদ্বোধনের কয়েকমাস অতিবাহিত হলেও এখনি দুপারেই মানুষের মধ্যে প্রতি মঙ্গলবার উৎসবমুখর ভাবে হাটে আসতে দেখা যাচ্ছে। এতে করে খুব শীঘ্রই হাটটি অনেক বড় আকারে সম্প্রসারণসহ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে রূপ লাভ করতে পারে বলে অনেক পর্যবেক্ষকের মন্তব্য।