রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

কাঁদলেন কাঁদালেন শেখ হাসিনা

pic-11_85583

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার মানুষের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুভেচ্ছা গ্রহণের একপর্যায়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার সময়কার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কাঁদলেন শেখ হাসিনা। তাঁর কান্না ছুঁয়ে গেল অন্যদেরও, কেউ কেউ চোখ মুছলেন।
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার সকালে গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় এ দৃশ্যের অবতারণা হয়। সেদিনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চিন্তাও করিনি কোথায় থাকব, কোথায় উঠব?
দুটো স্যুটকেস হাতে নিয়ে ফিরে আসলাম।’ কঠিন দিনগুলোর কথা দলীয় নেতা-কর্মীদের সামনে তুলে ধরতে গিয়ে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি শেখ হাসিনা। কণ্ঠ ভারী হয়ে আসার পরও কথা চালিয়ে যাওয়ার একপর্যায়ে হুহু করে কেঁদে ওঠেন তিনি। কথা থামিয়েই মাঝে মাঝে চোখ মোছেন। কাঁদতে কাঁদতেই তিনি বলেন, ‘একদিন আব্বাকে স্বপ্নে দেখলাম। আমি আব্বাকে বলছি, আপনি কোথায়? আওয়ামী লীগ যদি ভেঙে যায়, আমরা দেশে ফিরতে পারব না। আব্বা বললেন, চিন্তা করিস না। পার্টি ইউনাইটেড থাকবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘শুধু একটাই চিন্তা। দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।’
দেশে ফেরার পরও দীর্ঘদিন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের নিজেদের বাড়িতে ঢুকতে পারেননি শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমাকে ৩২ নম্বরে ঢুকতে দেয়নি। রাস্তায় বসে মিলাদ পড়ি। জিয়ার (তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান) নির্দেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। দরজার সামনে বসে থাকতাম। লেকের পাড়ে বসে থাকতাম। যত সহজে বলতে পারছি, তখন এত সহজ ছিল না।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কথা উল্লেখ করে আবার কণ্ঠ ভারী হয়ে এলো শেখ হাসিনার। বললেন, ‘মাত্র ১৫ দিন আগে দেশ ছেড়ে গিয়েছিলাম। ভাগ্যের এই বিপর্যয় ঘটবে ভাবতে পরিনি। সবাইকে ছেড়ে গেলাম। একদিন দেখি নিঃস্ব। কোথায় যাব, কী করব, জানি না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল টিটো আমাদের সব দায়িত্ব নেন।’
জার্মানি থেকে ভারতে আসার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তখনো ভাবিনি সব হারিয়েছি। কেউ বলছে, মা বেঁচে আছে। শুনি, রাসেল বেঁচে আছে। ভারতে এসে ইন্দিরা গান্ধীর কাছে সব জানতে পারলাম।’
সেই সময়ে বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষও ঝরে শেখ হাসিনার কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘আব্বার ফরেন মিনিস্টার ওই সময় দেশের বাইরে ছিলেন। ১৬ তারিখ (১৬ আগস্ট, ১৯৭৫) তাঁর সঙ্গে দেখা হলো। একটা স্টেটমেন্ট দিতে বললাম। দিলেন না। আব্বার মন্ত্রীদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাই নাই। একটা প্রেস কনফারেন্স করে নাই। খোঁজও নেয় নাই। এরপর এক্সাইলেই (নির্বাসনে) ছিলাম।’
গণভবনের অনুষ্ঠানের শুরুতেই আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনসহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যান্য কর্মসূচি : এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে গতকাল বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ। সকালে সারা দেশের দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়, সকাল ১০টায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আওয়ামী লীগসহ দলের নেতা-কর্মীরা, সেখান থেকে দলের নেতারা গণভবনে গিয়ে দলীয় সভাপতিকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সকালে আওয়ামী লীগের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দলের নেতারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি এবং যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগ সভাপতি হয়ে দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন।
জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে ছয়টি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। এগুলো হলো- সামরিক শাসনের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ নির্মূলে পদক্ষেপ এবং নারীর ক্ষমতায়ন।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহের সভাপতিত্বে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা এতে বক্তব্য দেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। গতকাল দুপুরে মধুর ক্যান্টিনের সামনে থেকে আনন্দ মিছিলটি বের হয়। মিছিল শেষে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশ হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান।