সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

আজ ও রবিবার জামায়াতের হরতাল

pic-02_130128

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ের প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার ও আগামী রবিবার সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী। এ ছাড়া আগামীকাল শুক্রবার সাঈদীর জন্য দোয়া দিবস ও শনিবার বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।
গতকাল বুধবার দুপুরে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান যৌথ বিবৃতিতে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা এবং রবিবার ভোর ৬টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করবে জামায়াত। হরতাল পালন করতে জামায়াতের কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, যেকোনো মূল্যে হরতাল পালন করতে হবে। তবে কোনো ভায়োলেন্স (সহিংসতা) করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে, সে জন্য নন-ভায়োলেন্স (অহিংস) পিকেটিং করতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের কেশবপুর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সামাদ মাস্টার মোবাইল ফোনে গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, হরতাল কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ আছে। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করা যাবে না বলে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ আছে। বগুড়া শহর জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখানে সাত উপজেলা পরিষদের মধ্যে পাঁচটিতেই জামায়াতের নেতারা চেয়ারম্যান। ইচ্ছা করলে আমরা সমগ্র উত্তরাঞ্চল অচল করে দিতে পারি। কিন্তু কেন্দ্র থেকে কোনো প্রকার সহিংসতা না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই আমরাও হরতালে স্বাভাবিকভাবে পিকেটিং করার জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি।’
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ওই রায়ের পর সারা দেশে সহিংস বিক্ষোভে নামে জামায়াতকর্মীরা। তাদের তাণ্ডবে প্রথম তিন দিনেই পুলিশসহ অন্তত ৭০ জন নিহত হয়। গাড়ি, বাড়ি এমনকি বিদ্যুৎকেন্দ্রও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল : হরতালের সমর্থনে গতকাল রাজধানীর গুলশান, বাড্ডা, গুলিস্তান, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল দুপুর ২টার দিকে গুলশানে মিছিল বের করে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা। তবে লাঠিপেটা করে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। গুলিস্তানেও একটি মিছিল করেছে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, বুধবার (গতকাল) দুপুর ১টার দিকে বাড্ডার ক্যামব্রিয়ান কলেজের কাছে হঠাৎ মিছিল বের করে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
দেশজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তা : জামায়াতের ডাকা হরতালকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন দায়িত্ব পালন করছে। বিজিবিকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অসাদুজ্জামান খান বলেছেন, জানমালের নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার জানিয়েছেন, হারতালকে কেন্দ্র করে কেউ ফৌজদারি অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে সারা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর নজর রাখা হচ্ছে। সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে গতকালও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হরতালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপরাধ মোকাবিলার প্রস্তুতি পুলিশের রয়েছে।’ গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইজিপি বলেন, ‘পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা হয়েছিল। পুলিশ প্রতিহত করতে পেরেছে। পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে মনোবল ভাঙা যাবে না।’
হরতালে গাড়ি চলবে রাজধানীতে : হরতাল চলাকালে আজ রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায় গাড়ি চলাচল অব্যাহত রাখা হবে। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি গতকাল এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুসারে, সমিতির অন্তর্ভুক্ত পরিবহন কম্পানিগুলো হরতাল চলাকালে রাস্তায় গাড়ি নামাবে। যাত্রী পাওয়া সাপেক্ষে আন্তজেলা রুটের গাড়িও চলাচল করবে।
হরতালের বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল আহ্বান করা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক এবং আদালত অবমাননার শামিল। জনবিরোধী এ হরতাল মালিক-শ্রমিকরা কখনো সমর্থন করে না।
হরতালের দিন গাড়ি চলাচলে যাতে কোনো ধরনের বাধা না আসে, সে জন্য রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।