শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

আজহারের ফাঁসি, আজ ও কাল হরতাল

57089_f2

 

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে  মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছে ট্রাইব্যুনাল। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল এ রায় ঘোষণা করে। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক। আজহারুলের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিই প্রমাণিত হয়েছে। এরমধ্যে তিনটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। রায়ের পর্যবেক্ষণে একাত্তরে নির্যাতিতা নারীদের যথাযথ সম্মান ও তাদের বিষয়টি স্কুল-কলেজের পাঠ্য পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেয়া হয়। রায় ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় সহিংস কর্মসূচি কাম্য নয় বলেও মন্তব্য করে ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণার পর কাঠগড়ায় উপস্থিত আজহারুল ইসলাম বিচারকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, এটা ফরমায়েশি রায়। আমি নির্দোষ। আল্লাহর আদালতে আপনাদের বিচার হবে। রায়ে প্রসিকিউশন, সরকার ও গণজাগরণ মঞ্চ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবার ও দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। অন্যদিকে, এ রায়কে অষ্টম আশ্চর্য হিসেবে অভিহিত করে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাজনৈতিক আবেগতাড়িত হয়ে বিচার করার কোন সুযোগ আদালতের নেই। আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ন্যায়ভ্রষ্ট হিসেবে আখ্যায়িত করে বুধ ও বৃহস্পতিবার হরতাল আহ্বান করেছে জামায়াত। এ দুই দিন ভোর ছয়টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত হরতাল পালিত হবে। ২০১০ সালের ২৫শে মার্চ যাত্রা শুরু করা ট্রাইব্যুনালের এটি পঞ্চদশ রায়।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল ভোর থেকেই হাইকোর্ট সংলগ্ন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুড়ে নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এসময় এসব এলাকার যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দোয়েল চত্বর থেকে হাইকোর্ট সংলগ্ন রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল ও তার আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদস্যদের। এছাড়া, পুরো এলাকা ছিল বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে। এসময় বিশেষ পাস ছাড়া ট্রাইব্যুনালের অভ্যন্তরে কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে আসামি এটিএম আজহারুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনালের এজলাসের কাঠগড়ায় এনে হাজির করে পুলিশ। এর আগে সকাল ৯টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তায় পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যানে করে তাকে ট্রাইব্যুনালের কয়েদখানায় নিয়ে আসা হয়। সাদা পাঞ্জাবির ওপর ঘিয়ে রঙের সোয়েটার পরিহিত আজহার এসময় ছিলেন কিছুটা বিমর্ষ। সময় তখন ১১টা ১০ মিনিট। ট্রাইব্যুনালে তখন পিনপতন নীরবতা। এরই মধ্যে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে অন্য দুই বিচারপতি ট্রাইব্যুনালে তাদের জন্য রক্ষিত নিজ নিজ আসন গ্রহণ করেন।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম তার বক্তব্যের শুরুতে বলেন, উপস্থিত বিজ্ঞ প্রসিকিউশন, বিজ্ঞ ডিফেন্স ও সাংবাদিকবৃন্দ, আজ আমরা এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলার  রায়ের জন্য দিন ধার্য করেছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা এই মামলার  রায়  ঘোষণা করবো। এ মামলার শেষ দিন বলেছিলাম, আজও বলছি ফৌজদারি মামলায় দুই পক্ষকে খুশি করে রায় দেয়া সম্ভব নয়। আমরা সংবিধান ও আইনানুযায়ী শপথবদ্ধ। আইন ও সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করে আমরা রায় দেই। আইনের মাধ্যমে আমাদের বিচার করতে হয়। আমাদের বিচার বিশ্লেষণে যদি কোন ভুল হয়, তাহলে আইনগতভাবে তার প্রতিকার রয়েছে। যদি কোন পক্ষ আমাদের রায়ে সংক্ষুব্ধ বা খুশি না হন, তাহলে উচ্চ আদালতে আপিল করার মাধ্যমে প্রতিকার পেতে পারেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে সহিংস কর্মসূচি ঘোষণা আমরা আশা করি না। এটি কাম্যও নয়। আবার বিশেষ রায়ের ক্ষেত্রে বিচারপতিদের ওপর মানসিক চাপ প্রয়োগও ঠিক নয়। আমরা রায় হওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখি। বিবৃতি বা সহিংস কর্মসূচি দিয়ে রায় পরিবর্তন করা যায় না। রায় পরিবর্তনের জন্য আইনানুগভাবে চেষ্টা করতে হয়। সে সুযোগ আছে। আইনের শাসনে বিশ্বাসী মানুষ রায় পছন্দ না হলে আপিলে যাবেন। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় দেশের ভেতরের কয়েকটি এবং বাইরের কয়েকটি মিডিয়া আমাদের ট্রাইব্যুনালের রায় সম্পর্কে এমনভাবে মন্তব্য করে যেন ট্রাইব্যুনালে এ দেশের ধর্মীয় নেতা ও ইসলামিক ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিচার করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা এখানে বিচার করছি একাত্তরের মানবতাবিরোধী  অপরাধের। কে কোন দল করেন সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। এরপরই ১৫৮ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়ে শোনান বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক। বিচারপতি আনোয়ারুল হক ১১টা ১৭ মিনিটে রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন। তিনি অভিযুক্ত আজহারের জন্ম-পরিচয়, তার রাজনৈতিক জীবন, একাত্তরে তিনি কিভাবে, কোন অবস্থানে ছিলেন এসব  বিষয়ে বিশদ বর্ণনা দেন। এছাড়া, আজহারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দাখিলকৃত ছয়টি অভিযোগও পর্যায়ক্রমে পড়ে শোনান তিনি। দুপুর ১১টা ৪৫ মিনিট থেকে রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়ে শোনান বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে রায়ের মূল ও দণ্ডাদেশ সম্পর্কিত অংশ পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।
রায়ে সন্তুষ্ট: রাষ্ট্রপক্ষ
জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রায়ের পর প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবার ও দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় পাবার পর যে অভিযোগে আজহার খালাস পেয়েছেন সে অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।  রায়ের প্রতিক্রিয়ায় প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, রায়ে আমরা খুশি। আমরা মনে করি, মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট সাক্ষ্য ও তথ্য প্রমাণ হাজির করতে পেরেছিলাম। এই রায়ে শহীদ পরিবার ও একাত্তরে নির্যাতিতা নারীরা কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পাবেন। তিনি বলেন, একাত্তরে বীরাঙ্গনাদের বিষয়ে সমাজের যে নীরবতা ছিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে সেই নীরবতা দূরে সরে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক হান্নান খান বলেন, রায়ে আমরা খুশি। সঠিক তথ্য প্রমাণের মাধ্যমে আমরা তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেছি। রায়ে জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।
রায়ে অসন্তোষ আসামিপক্ষ
জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় তার আইনজীবী তাজুল ইসলাম রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই রায় অষ্টম আশ্চর্য। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। আজহারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণগুলোর ভিত্তিতে তার ফাঁসি তো দূরের কথা, রাষ্ট্রপক্ষকে জরিমানা করা উচিত। তিনি বলেন, যে তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আজহারের ফাঁসি হয়েছে, তার একজন সাক্ষী দেড় কিলোমিটার, আরেকজন দুই কিলোমিটার এবং অপরজন তিন কিলোমিটার দূর থেকে আজহারকে দেখেছেন। এসব তথ্যের ভিত্তিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া যায় না। তবে আদালতের কাজ আদালত করেছে। আমরা ন্যায় বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে যাবো। তাজুল বলেন, রাজনৈতিক আবেগতাড়িত হয়ে বিচার করার কোন সুযোগ আদালতের  নেই। অথচ এখানে আবেগতাড়িত হয়ে অনেক কিছুই এসেছে। ট্রাইব্যুনালের রায় সঠিক হয়নি। এসব তথ্যের ভিত্তিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া যায় না। তবে আদালতের কাজ আদালত করেছে। আমরা ন্যায় বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে যাবো। আশা করি সেখানে আমরা ন্যায়বিচার পাবো।
যে অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড:
প্রমাণিত দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামি আজহার ও তার সঙ্গীয় পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা একাত্তরের ১৬ই এপ্রিল তার নিজ এলাকা রংপুরের বদরগঞ্জ থানার মুকসেদপুর ও ধাপপাড়ায় ১৫ জন নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালিকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর সেখানে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে।
প্রমাণিত তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামি আজহার একই বছরের ১৭ই এপ্রিল  নিজ এলাকা রংপুরের বদরগঞ্জের ঝাড়ুয়ারবিল এলাকায় এক হাজার ২শ’রও বেশি নিরীহ লোককে ধরে নিয়ে হত্যা করেন। এরপর সেখানে  লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করেন।
প্রমাণিত চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৭ই এপ্রিল রংপুর কারমাইকেল কলেজের অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন রায়সহ চারজন অধ্যাপক ও একজন অধ্যাপক পত্নীকে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে অপহরণ করে দমদম ব্রিজের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন আজহার ও পাকিস্তানি সেনারা।
প্রমাণিত পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৫শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যে রংপুর শহর ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নারীদের ধরে এনে টাউন হলে আটকে রেখে ধর্ষণসহ শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। একই সঙ্গে নারীসহ নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙালিদের অপহরণ, আটক, নির্যাতন, গুরুতর জখম, হত্যা ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এ আসামি। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আজহারকে ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
প্রমাণিত ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রংপুর শহরের গুপ্তপাড়ায় একজনকে  শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। একই বছরের ১লা ডিসেম্বর রংপুর শহরের বেতপট্টি থেকে একজনকে অপহরণ করে রংপুর কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে নিয়ে আটক রেখে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন ও গুরুতর জখম করেন আজহার ও তার সঙ্গীরা। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আজহারকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
‘ফরমায়েশি রায়’
মৃত্যুদণ্ডের রায় শোনার পর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম এ রায়কে ফরমায়েশি রায় বলে মন্তব্য করেন। এজলাসে দাঁড়িয়ে বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আল্লাহ আপনাদের বিচার করবেন। সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে এটিএম আজহারকে ট্রাইব্যুনাল-১ এর এজলাসের কাঠগড়ায় নিয়ে আসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর আগে সকাল ৯টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আজহারকে পুলিশের বিশেষ প্রিজন ভ্যানে করে কড়া নিরাপত্তায় ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে ট্রাইব্যুনালের কয়েদখানায় তাকে রাখা হয়। রায় ঘোষণার পুরোটা সময় এজলাসের কাঠগড়ায় নির্দিষ্ট চেয়ারে বসেছিলেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহার। সাদা পাঞ্জাবি ও ঘিয়ে রঙের সোয়েটার পরিহিত আজহার ছিলেন নির্বিকার। রায় পড়ার সময় বার বার মাথা উঁচিয়ে এজলাসের বিচারপতিদের দিকে নজর ছিল তার। রায়ে দণ্ডদান সম্পর্কিত ঘোষণাটি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার ছেড়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যান আজহার। এসময় আঙ্গুল উঁচিয়ে তিনি উচ্চস্বরে বলতে থাকেন ‘ফরমায়েশি রায়, ফরমায়েশি রায়। আল্লাহ আপনাদের বিচার করবেন ইনশাআল্লাহ।’ এসময় দুজন পুলিশ সদস্য তাকে জাপটে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দেন। রায় ঘোষণা তখনও শেষ হয়নি। ট্রাইব্যুনালের তিনজন বিচারপতি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে উঠে দাঁড়ানোর মুহূর্তে আবারও উঠে দাঁড়ান আজহার। চিৎকার করে বলতে থাকেন ‘আমি নির্দোষ। আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর। আল্লাহ আপনাদের বিচার করবেন।’ এসময় উত্তেজিত আজহারকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য এজলাস থেকে বের করে ট্রাইব্যুনালের নিচে কয়েদখানায় নিয়ে যান। একপর্যায়ে আজহারের আইনজীবী তাজুল ইসলামসহ অন্য আইনজীবীরা তার সঙ্গে দেখা করেন। পরে আজহারের বরাত দিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, তিনি (আজহার) বলেছেন তিনি নির্দোষ। তাকে বিনা দোষে সাজা দেয়া হয়েছে। তবে মৃত্যুদণ্ডের ভয়ে তিনি ভীত নন।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ আওয়ামী লীগের
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের ফাঁসির আদেশ হওয়ায় জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল দুপুরে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত দলের সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। হাছান মাহমুদ বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আজহারকে আদালত ফাঁসির নির্দেশ দেয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। এতে জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রায়কে স্বাগত জানাই। এসময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একজন ‘ভদ্রবেশী সিরিয়াল মিথ্যাচারী’ আখ্যায়িত করে হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ মিরপুরে ককটেল ফাটায়নি, শিক্ষিকাকে ইট মেরে হত্যা করেনি। অথচ এর জন্য মির্জা ফখরুল আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন। হরতালের আগের দিন অতীতের মতো যেভাবে পেট্রলবোমা ছুড়ে জীবন্ত মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করা হয়েছে, এর দায়দায়িত্ব শুধু ঘটনার সঙ্গে যারা সরাসরি যুক্ত ছিল, তাদের একার নয়। এর নির্দেশদাতা হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের ওপর বর্তায়। জনগণ এসব নৃশংস মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের নির্দেশদাতাদেরও বিচার চায়।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।