রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

আওয়ামী লীগের শাসন ফরমালিন যুগ

26163_4

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুরো শাসনামলই ফরমালিনের যুগ বলে আখ্যায়িত করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, আওয়ামী লীগ রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজের সব কিছুতেই ফরমালিনের প্রয়োগ খুব দক্ষভাবে করছে। পদ্মা সেতু, ব্যাংক-শেয়ারবাজার থেকে শুরু করে সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে ফরমালিন দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। শুধু ফরমালিন নয়, আওয়ামী লীগের বিষে ছেয়ে গেছে পুরো দেশ। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। ‘বিএনপির জন্মই অবৈধ’- প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের যে বিধিবিধানে বিএনপির জন্ম হয়েছে দেশে ’৭৫-পরবর্তী সেই বিধিবিধানেই আওয়ামী লীগের পুনর্জন্ম হয়েছে। জিয়াউর রহমানের কল্যাণেই আওয়ামী লীগ বাকশাল থেকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসে। তাই বিএনপিকে অবৈধ বলার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের জন্মের বিষয়টিও দেখতে হবে। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালের ১৭ই মে জিয়াউর রহমানের সহযোগিতায় শেখ হাসিনা ভারত থেকে দেশে ফিরেছিলেন এবং কাকতালীয়ভাবে ৩০শে মে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বিচারপতিদের হুমকি দিচ্ছেন অভিযোগ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, নারায়ণগঞ্জ ও ফেনীর ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে মিডিয়ায় শামীম ওসমান ও নিজাম হাজারীর নাম এসেছে। কিন্তু এখনও তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। উল্টো প্রধানমন্ত্রী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিচারকদের হুমকি দিয়েছেন। তার এই হুমকি বিচারকাজকে প্রভাবিত করবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। তার বক্তব্যে স্বৈরতান্ত্রিক, একনায়কতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী চেহারা প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। শেখ হাসিনা প্রচ- অহঙ্কার নিয়ে সরকার পরিচালনা করছেন। এ জন্য তিনি বলেছেন, আই ডোন্ট কেয়ার। এর মাধ্যমে প্রমাণ হলো, তিনি জনমতের কোন পরোয়া করেন না। মির্জা আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী অহংকার ও আত্মম্ভরিতা থেকে এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। এই অহংকার ও আত্মম্ভরিতা ত্যাগ করে অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করুন। তা না হলে অতীতের স্বৈরাচার সরকারের মতোই জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে আপনার সরকারের পতন ঘটাবে। মির্জা আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সেই রাজনৈতিক দল যারা ১৯৭৫ সালে মাত্র ১১ মিনিটে বিল পাস করে সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ, সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল। তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসন কায়েম করেছিল। আজও আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে। তিনি বলেন, আজ বিরোধী দল কোন কথা বলতে পারছে না। ঢাকা মহানগরে কোন সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। প্রশাসন জিয়াউর রহমানের শাহাদত বার্ষিকীতে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিতে অনেক জায়গায় বাধা দিয়েছে। আজও (রোববার) রাজধানীর লালবাগ, সদরঘাট, চকবাজার, ধোলাইখাল এলাকায় অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভেঙে দেয়া হয়েছে। মির্জা আলমগীর বলেছেন, বিএনপি কারও দয়ায় চলে না। জনগণের ভালবাসা ও সমর্থন নিয়ে এগিয়ে চলছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অবৈধ শক্তিকে সমর্থন দিয়েছেন। ১৯৮৬ সালে বলেছিলেন এরশাদের অধীনে যারা নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান হবে। কিন্তু তিনি সেই নির্বাচনে গিয়েছিলেন। জাতীয় পার্টি-জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করেছে। ২০০৭ সালে মইন-ফখরুদ্দিন সরকারকে বলেছিলেন আন্দোলনের ফসল। তাদের বৈধতা দেয়ার কথাও বলেছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে দিয়েছেনও। তিনি বলেন, বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বহুবার ধ্বংসের চেষ্টা হয়েছে। ১৯৮১ সালের ৩০শে মে স্বাধীনতার শত্রুরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে মনে করেছিল, দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি ধ্বংস হয়ে যাবে। বিএনপির কথা বলার কেউ থাকবে না। জামায়াত সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, জামায়াতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আরও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তবে আওয়ামী লীগ তাদের আগের অবস্থানে আছে কিনা তা নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজনের মধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে ফেসবুকে ভুয়া একাউন্ট খোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে মির্জা আলমগীর বলেন, গত কয়েক দিন ধরে তারেক রহমানের নামে ভুয়া ফেসবুক একাউন্ট খোলা হচ্ছে। ওই একাউন্টে অরুচিকর বক্তব্য প্রকাশ করা হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে তারেক রহমানের নিজস্ব কোন ফেসবুক একাউন্ট কিংবা ব্লগ একাউন্ট নেই। ওই সব ফেসবুক ও ব্লগে কোন বক্তব্য প্রকাশ হলে তার দায়দায়িত্ব তারেক রহমান কিংবা বিএনপি নেবে না। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ, ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব আবদুস সালাম, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহদপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।