শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মার্চ পর্যন্ত মাঠে থাকছে যৌথবাহিনী

6019

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনোত্তর নাশকতা ও সহিংসতা মোকাবিলায় আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে। সারা দেশে যৌথবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করলেও বিশেষ নজরে থাকবে জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত ১৯ জেলা। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সাতক্ষীরা, নীলফামারী, কুমিল্লার কোম্পানীগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, লালমনিরহাটসহ বেশ কিছু জেলায় যৌথবাহিনীর অভিযানে সফলতার বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র। বিশেষ করে নির্বাচনোত্তর জামায়াত-শিবিরের নাশকতা মোকাবিলা করার জন্য যৌথবাহিনীর অপারেশনের তীব্রতা আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊধর্্বতন কর্মকর্তারা। যৌথবাহিনীর অপারেশনে ক্ষিপ্রতা বাড়াতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এবং র্যাবের সদর দফতর থেকে ইতোমধ্যে সব ব্যাটালিয়নে বিশেষ নির্দেশনাও পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সূত্র। বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ১৭টি জেলার বাইরে চাঁদপুর, জয়পুরহাটসহ আরও কয়েকটি জেলায় বিজিবির সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ইতোমধ্যে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। তিনি আরও জানান, গত কয়েক বছরে নতুন করে ছয়টি নতুন ব্যাটালিয়ন, চারটি রিজিওনাল হেডকোয়ার্টার বাড়ানোর মাধ্যমে বিজিবির বলয় বাড়ানো হয়েছে। এতে সীমান্ত এলাকা থেকে কোনো বিজিবি সদস্য কমানো হয়নি। সরকার যতদিন চাইবে ততদিন রিজার্ভ ফোর্স দিয়েই বিজিবি সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে জনগণকে সেবা দিতে সক্ষম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, স্পর্শকাতর এলাকায় পুলিশ বিভাগের গতি আনতে সম্প্রতি পুলিশের এক ডিআইজি, দুই অতিরিক্ত ডিআইজি ও পাঁচ পুলিশ সুপারকে বদলি করা হয়েছে। বদলি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রেলওয়ের ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি, সাতক্ষীরা ও দিনাজপুরের পুলিশ সুপারও আছেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে শীঘ্রই পুলিশের ঊধর্্বতন পর্যায়ে আরও রদবদল করা হবে। পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, শনিবার (গতকাল) দেশের বিভিন্ন এলাকার ভোটকেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এগুলো গুরুত্বসহকারে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তবে সারা দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে পুলিশের কৌশল কি হবে?_ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে জনগণের জানমাল রক্ষার ব্যাপারে পুলিশ সদস্যরা প্রস্তুত। এদিকে র্যাব সূত্র জানায়, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অস্ত্রসজ্জিত হেলিকপ্টার নিয়ে টহল দেবে র্যাব সদস্যরা। ওই সব এলাকায় বাড়ানো হচ্ছে গোয়েন্দা তৎপরতা। একই সঙ্গে থাকবেন ইউনিফর্ম পরিহিত বিশেষ টিম। অপরাধীদের শনাক্ত করতে ব্যবহার করা হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রেলপথে বা মহাসড়কে যারা অগি্নসংযোগ, ভাঙচুর বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যারা এসব ধ্বংসাত্দক কর্মকাণ্ডে মদদ দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় কৌশল প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে নাশকতাকারীদের দেখামাত্র গুলি করার বিষয় নিয়েও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। পরিস্থিতির প্রয়োজনে এ নির্দেশ দেওয়া হবে। এ ছাড়া আগাম তথ্য সংগ্রহ করে সরকারের উচ্চ পর্যায়কে অবহিত করার জন্য বিশেষ সহায়তা চাওয়া হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে যে কোনো উপায়ে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে সরকারের এসব নির্দেশনা মানতে প্রশাসন ও পুলিশকে সহায়তা করতে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী এবং স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে দলীয় নেতা-কর্মী বা জনপ্রতিনিধিদের গাফিলতি পাওয়া গেলে তাদের দায়ী করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া পুলিশ-র্যাব-বিজিবি-আনসারকে সমষ্টিগতভাবে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, দেশের মানুষের জানমাল রক্ষার জন্যই সরকার যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে বলেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি প্রয়োজনে আরও বাড়তে পারে। এটি যৌথবাহিনীর কর্মকাণ্ডে আরও গতি আনবে। এর পরও যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাব সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন।

 

উৎস- বাংলাদেশ-প্রতিদিন

Leave a Reply