আকাশ ইকবাল ॥ প্রতিদিন রাতে বাবা দোকান থেকে একটা করে আদরের দুই বছরের কন্যা ফাবিহার জন্য একটা করে চীপস নিয়ে আসতো। বাবা বাবা করে আসা মাত্র মায়ের কোল থেকে বাবার কোলে ঝাপিয়ে যেতো। সেদিন বাবা চিপস এর সাথে তালের পিঠা তৈরীর জন্য চালের গুড়ি করতে আতপ চাল ও নিল কারন মেয়ে তালের পিঠা খাবে বলেছে। সে রাতে ফাবিহার বাবা আর বাড়ী ফিরেনি। শিশু ফাবিহা কেঁদে কেঁদেই ঘুমিয়েছে। সকালে উঠে বলছে ‘বাবা কই ? আমার চিফস কই ? তালের পিঠা খাওয়াবে বলেছে বাবা, বাবা কই ? ’
অবুঝ শিশু জানে না তখনো রাতে সন্ত্রাসীরা তার বাবাকে গুলি করে হত্যা করেছে। শিশূটিকে বাবার মৃতদেহের পাশে নিয়ে বলছে বাবা ঘুমিয়েছে মা। এসসময় সকলের কান্না আর আর্তচিৎকারে মলিয়াইশ গ্রাম জুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া।
চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার ১০নং মিঠানালা ইউনিয়নের সাধুবাজারে শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় মেজবাহ উদ্দিন (৩৫) নামের এক ব্যবসায়ীকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে।
গতকাল রবিবার বিকাল ৫টায় পোষ্টমর্টেম শেষে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
মেজবাহ উদ্দিন ১০নং মিঠানালা ইউনিয়ন মলিয়াইশ গ্রামের দর্জি বাড়ীর মৃত জামান উল্লার ছয় ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ছোট ছেলে। তার পিঠে একটা গুলি ও মাথার পিছনে জখমের চিহৃ দেখা পাওয়া গেছে। পুলিশের এএসপি (সার্কেল) সীতাকুন্ড সালাউদ্দিন শিকদার ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন।
মেজবাহ উদ্দিন স্থানীয় সাধুবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। পরিবারের সদস্যগন জানান প্রতিদিন রাত ১১-১২ টায় মধ্যে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরে। কিন্তু গতকাল রাতে রাত ২টা বেজে যাওয়ার পরও বাড়ি ফিরছেনা দেখে তার স্ত্রী ফাতেমা কানিজ সিমা (২৫) মেজবা উদ্দিনের মাকে জানালে বাড়িতে থাকা বড় ভাই নুর নবী (৪২) মেজবাহ উদ্দিনের বন্ধু একই এলাকার আকবরকে মোবাইল করে। এই সময় আকবর উত্তরে বলে মেজবাহ ১১টায় দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরেছে। এই সময় নুর নবী বন্ধু আকবরকে একটু এগিয়ে আসতে বলে বাড়ির মাঝপথে আসলে রাস্তার উপর মেজবাহ উদ্দিনের লাশ পড়ে থাকতে দেখে। মেজবাহ উদ্দিনের বড় ভাই নুর নবী জানান, প্রতিদিন মেজবাহ উদ্দিন তার ব্যবসায়ের বিক্রয়ের টাকা রাতে বাড়িতে আসার সময় সাথে করে নিয়ে আসেন। নিশ্চই সে টাকার জন্য সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। তার বড় ভাই আরো বলেন, মেজবাহ উদ্দিন এলাকায় ডিসের ব্যবসা করেন। এতে পাশের এলাকার ডিসের ব্যবসায়ীদের সাথে ও কোন দ্বন্ধ থাকতে পারে বলে জানায়।
এলাকার আবুল হোসেন বলেন, মেজবাহ খুব ভালো ছেলে ছিল। কখনো কারে সাথে দুই কথা হয়েছে বলে শুনি নাই দেখিও নি। তার ব্যবসায়ের টাকা জন্য তাকে খুন করেছে। বড় মুদি ও সারের দোকান, মোবাইল বিকাশ, আবার কয়েকটি পিকআপ ও আছে তার। মলিয়াইশ সাধুর বাজারের ভূঞা মার্কেটের মালিক ও সে।
মেজবাহ উদ্দিন ব্যাক্তিগত ভাবে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলনা। এলাকার গরীব দুঃখীদের সেবা করতো। কারো সাথে কোন প্রকার দন্ধও ছিলনা। মাত্র তিন বছর আগে মেজবাহ উদ্দিন বিয়ে করে। সে ঘরে দুই বছরের একটি কন্যা শিশু ফাবিহা রয়েছে।
মেজবাহ উদ্দিনের মা বলেন, আমার মেজবাহ কোনদিন কারো সাথে ঝগড়া করেনি। আমি আমার সন্তান হত্যাকারীদের বিচার চাই। মেজবাহ উদ্দিনের দই বছরের একটি কন্যা শিশু রয়েছে। যে এখনো কথা বলতে শিখেনি। বুঝতে ও পারছেনা তার বাবা তাকে আর কখনো ¯েœহ করবেনা। যদি বুঝতে পারতো নিশ্চই সেও বাবার হত্যা কারীদের বিচার চাইতো।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার মাঝখানে মেজবাহ উদ্দিনের তাজা রক্ত ও তার পায়ে পড়ার সেন্ডেল পড়ে আছে। পড়ে আছে তার ছোট আদরের একমাত্র কন্যা শিশুকে তালের পিঠা খাওয়ার চাউল। কিন্তু হলনা আর খাওয়া।
এদিকে মেজবাহ এর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর বিকাল ৫টায় তাদের পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এই বিষয়ে মীরসরাই থানার ওসি ইমতিয়াজ ভুইঁয়া জানান শীঘ্রই উক্ত ঘটনার প্রকৃত অপরাধিদের বিচারের আওতায় আনা হবে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী চট্টগ্রাম উত্তর এর সার্কেল এএসপি শহিদুল ইসলাম বলেন আমরা পুরো ঘটনা তদন্ত করছি। থানার জ্যোষ্ঠ কর্মকর্তা এসআই শফিকুর রহমান জানান উক্ত ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।