বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

বঞ্চিত জনতার বাঞ্চিত করণীয়

মঈন উদ্দিন আহমদ চৌধুরী (সেলিম)

শোষিত-বঞ্চিত মানুষ অপ্রাপ্তির যন্ত্রনায় কাতর, অভাব অনটন এর নির্মম কষাঘাতে ধরাশায়ী, মানবতা এবং মানবিক মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্ব জীবনালয়কে চরম দূর্বিসহ করে ফেলে ঠিক তখনও মানুষ আশার বাণী শুনতে চান। নিরাশার অন্ধকার থেকে পরিত্রানের উপায় সন্ধানের নিরন-র চেষ্টায় অবিচল থাকে। শত যাতনা সহ্য করেও ঘুরে দাঁড়ানোর মহাপ্রয়াসে মানুষ নামীয় ভাগ্য বিধাতাদের উপর আস’া-বিশ্বাস রাখেন মানবেতর জীবন যাপনকারী মানুষেরা। দুঃখ-কষ্টে ভারাক্রান- অথচ স্বপ্নচারী মানুষেরা ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন থেকে কখনও বিচ্যুত হয় না। এটাই বাঙ্গালীপনার চিরন-ন রীতি ও কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা। শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে অবহেলিত আত্মপ্রত্যয়ী মানুষেরা সঙ্গত যৌক্তিকতায় বরাবরই বিশ্বাস স’াপন করেন ক্ষমতাসীনদের উপর। এমনতর ধারাবাহিকতায় স্বাধীন জাতির অংশ বিশেষ হিসেবে সর্বস-রের বঞ্চিত মীরসরাইবাসীও হতাশায় বিপন্ন শেষ ভরসাটুকু জাগিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। আত্মবিশ্বাসী মানুষদের ধারণা একদিন না একদিন এই সমাজ পরিবর্তন হবে এবং সেই সাথে অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনের ঘোর  অমানিশাও কেটে যাবে কিন’ কবে-কখন? পার্শ্ববর্তী সমসাময়িক জেলা ও উপজেলা সমূহে স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি যে উন্নতি এবং অগ্রগতি সাধিত হয়েছে সে অনুযায়ী তুলনামূলক বিবেচনায় মীরসরাই অনেকটাই পিছিয়ে আছে। শিক্ষা, স্বাস’্য, কৃষি, বিদ্যুৎ, কর্মসংস’ান সৃষ্টি ও বেকারত্ব নিরসন, গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস’া, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নসহ পর্যাপ্ত অগ্রগতি মীরসরাই’র ললাটে জোটেনি তা সর্বজন স্বীকৃত বাস-বতা। প্রত্যাশিত উন্নতি না হওয়ার প্রকৃত কারণটা সবাই কম-বেশী অবগত আছেন। করণীয় দায়িত্ব পালনে জনপ্রতিনিধিবৃন্দের চরম ব্যর্থতা দৃশ্যমান তবে নির্বাচকমন্ডলী বা জনগণের দায়ও এতে কম নয়। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি ওয়াদা পালন ও অঙ্গীকার বাস-বায়নে বাধ্য করতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন চাপ থাকেনা বিধায় প্রতিনিধিরা আত্মকেন্দ্রিক বা স্বার্থপর হয়ে উঠেন। জনপ্রতিনিধিদের উপর জনগণ কর্তৃক দায়বদ্ধতার সার্বক্ষণিক চাপ প্রয়োগ অব্যাহত থাকলে জনদাবীর প্রতি তাঁরা এত বেশী উদাসীন ও বেপরোয়া হতে সাহস পেতেন না। প্রতিনিধি নির্বাচিত করার পরক্ষণে আর যেন জনতার কিছু করার নেই এই বাস-বতাকে স্বাবলম্বন করে ক্ষমতাবান গোষ্ঠি দুঃশাসন অপশাসনে লিপ্ত হয়ে জনগণের প্রকৃত অধিকার   পদদলিত করতে অনুপ্রাণিত হয়। বঞ্চিত জনতা স্বউদ্যোগে একবার যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাসত্মায় নেমে আসতে পারেন তাহলে এর চূড়ান- ফলাফল জনগণের অনুকূলেই আসবে। ভাগ্য পরিবর্তনে যে জাতি বা ব্যক্তি স্বপ্রনোদিত হয়ে আন্দোলিত হবে না তাঁদের প্রাপ্তি কখনো সুপ্রসন্ন হবে না এমনকি মহান সৃষ্টিকর্তাও তখন অলস ভাগ্যাহতদের সহায়তা দিতে আবির্ভূত হবেন না। সাহসী বীর বাঙ্গালী যাঁরা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে দেশটাকে শত্রু মুক্ত করে স্বাধীনতার লালসূর্য ছিনিয়ে এনেছেন সেই বীরযোদ্ধারা জনসেবক নামক মুষ্টিমেয় মানুষদের নিকট মাথানত করে আত্মসমর্পন করতে পারেন না। বীরদর্পে অন্ধকার অতিক্রম করে আলোর ঠিকানায় পদার্পণ করাই যাঁদের আদর্শিক প্রথা, কেন তাঁরা হতাশায় অবসন্ন হয়ে প্রতিনিয়ত মার খাবে? অধিকার সুরক্ষায় বজ্রকঠিন কণ্ঠে একবারও কি বলতে পারি না- ‘জাগো জাগো অধিকার বঞ্চিত সকল মানুষ জাগো’। হৃদয়ে কি ধারণ করতে পারি না- ‘দূর্নীতিবাজ অপশাসক নিপাত যাক, নিপাত যাক।’ সত্যের প্রলাপ অসত্যের বেসাতি করে যাঁরা আমাদেরকে যুগ থেকে যুগান-র বঞ্চনার সাগরে ভাসিয়েছে তাদের সঙ্গে আর কোন আপোষ নেই। অতীত ও বর্তমানের যারাই আমাদেরকে ঠকিয়েছে তাঁরা এক এবং অভিন্ন। জনতার কাঠগড়ায় সমভাবেই তারা অভিযুক্ত। সামনেই বিচারালয়। সে বিচারে সাক্ষী প্রমাণে নির্ধারিত করতে হবে অপরাধী বিচারক কর্র্তৃক পুরষ্কৃত হবে নাকি তিরষ্কৃত হবে। বর্তমান কে তো আমলে নেবোই ঠিক তেমনিভাবে অতীতকেও চুলচেরা বিশ্লেষণ করে অপরাধসমূহ উপস’াপন করা বাঞ্চনীয়। সাধারণ অবহেলিত মানুষদের মূল্যায়ন দল বা রাজনীতি নির্ভর কাম্য নয়। কে বা কারা জনতাকে ক্ষতিগ্রস’ করার জন্য দায়ী সে যেই হোক না কেন অপরাধীর তালিকায় সংশ্লিষ্ট জনেরা অন-ভুক্ত হবেই। সামপ্রতিক বিষয়কে প্রাধান্য দিতে যেয়ে বিগতদের মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের বিষয়কে একবিন্দুও ছাড় দেওয়া যৌক্তিক হবে না। যাই হোক, যে কথা বলছিলাম, সামনে বিচারালয়। অর্থাৎ জাতীয় সংসদ ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। পুরোনো রেওয়াজ মতে আমরা কেবলমাত্র নির্বাচনের মুহূর্তেই আমলনামার হিসাব কিতাব ও হালখাতা করি। সে অনুযায়ী সময় খুবই নিকটে। বুঝে শুনেই ভোটটা প্রয়োগ করতে হবে নচেৎ আবারো পরবর্তীতে মেয়াদ পর্যন- অপেক্ষায় থাকতে যা হবে মহসাগরে সাঁতরানোর সামিল। এমতাবস’ায়, দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল বঞ্চিত অবহেলিত গণমানুষকে এক কাতারে সামিল হয়ে সামনে যে নির্বাচন তাতে সম্মিলিতভাবে সৎ, যোগ্য ও জনদরদী মানুষকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে সচেষ্ট থাকার শপথ গ্রহণ করি।

লেখক : নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক

Leave a Reply