বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ; কাদের মোল্লার শেষ ঠিকানা ফাঁসির মঞ্চ

????? ????? ??????? ????? !

মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার শেষ ঠিকানা এবার বলে দিল সুপ্রীম কোর্ট।অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রিভিউ শুনানি শেষে আদালত কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করেছে।এখন শুধু অপেক্ষার পালা।
সকাল ৯টা ২০ মিনিটে শুনানির শুরুতেই কাদের মোল্লার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক এই আবেদনের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।
পরে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন তাকে মূল আবেদনের শুনানি (অন মেরিট) শুরু করতে বলেন।এ সময় ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, রিভিউয়ের গ্রহণযোগ্যতার (মেনটেইনেবল কি-না) বিষয়ে আদালত এখনো কোনো আদেশ দেয়নি। তার আগেই মূল রিভিউয়ের শুনানি কীভাবে হবে?এ পর্যায়ে বিচারক বলেন, “রিভিউ মেনটেইনেবল না- এটা আমরা বলছি না। আপনি যদি বলেন এটা ‘মেনটেইনেবল’, সে বিষয়েও কোনো তর্কে যাচ্ছি না। আপনাকে অন মেরিট শুনানির সুযোগ দিচ্ছি। আপনি গ্রাউন্ড বলেন।”
এরপর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) বিষয়ে যুক্তি দিতে শুরু করেন কাদের মোল্লার আইনজীবী। তারপর রাষ্ট্রপক্ষে রিভিউয়ের বিরোধিতায় যুক্তি দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।মাঝখানে বেলা ১১টা থেকে আধঘণ্টা বিরতি দিয়ে শুনানি চলে বেলা ১১টা ৫০ পর্যন্ত। শুনানি শেষে বিচারকরা এজলাস থেকেনেমে যান। জানানো হয় অল্প সময়ের মধ্যেই আদেশ দেয়া হবে।

কাদের মোল্লা
আব্দুল কাদের মোল্লা ১৯৪৮ সালে ফরিদপুরের আমিরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি আমিরাবাদ ফজলুল হক ইনস্‌টিটিউট থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন. ১৯৬৬ সালে ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়নের সময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র রাজনৈতিক শাখা ইসলামি ছাত্র সংঘে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে কলেজ শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। স্নাতোকত্তর অধ্যয়ন করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের সময় তিনি ইসলামি ছাত্র সংঘের শহীদুল্লাহ হল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন।১৯৭১ সালে জামায়াত নেতারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে কারন তারা বিশ্বাস করতেন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশকে ভাগ করে আলাদা করলে এটি ইসলামের বিরুদ্ধে যাবে। সুতরাং ইসলামি ছাত্র সংঘের সদস্য হিসেবে কাদের মোল্লা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আধাসামরিক বাহিনী আলবদরে যোগ দেন।কিন্তু বাংলাদেশ যুদ্ধে জয় লাভ করে স্বাধীনতা অর্জন করে ও নতুন সরকার রাজনীতি থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান সেনাবাহিনীর একদল সদস্যের হাতে নিহত হওয়ার পর, নতুন সরকার জামায়াতকে পুনরায় রাজনীতি করার অনুমতি প্রদান করে। কাদের মোল্লা দলে সক্রিয় হতে থাকেন। তিনি দলের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। তার জনপরিচিতির জন্য তিনি বাংলাদেশ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন।
২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কাদের মোল্লাসহ কয়েকজন জামায়াত নেতার বিরোদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। ২০০৮ সালে তার বিরোদ্ধে পল্লবী থানায় আরো একটি মামলা হয়। ১৩ জুলাই, ২০১০ তারিখে কাদের মোল্লাকে পল্লবী থানা এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল তার বিরোদ্ধে যুদ্ধাপরাধ অভিযোগের তদন্ত শুরু করে এবং ২০১১ সালের ১ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের ও সর্বপোরী মানবতাবীরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। ২৮শে ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নেন এবং ২০১২ সালের ২৮শে মে ট্রাইব্যুনাল-২ খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী ছয়টি অভিযোগের বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।পরবর্তীতে ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সাজা বাড়িয়ে ফাঁসির আদেশ দেয়।এর আড়াই মাসের মাথায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে সরকারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার দণ্ড কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু আসামিপক্ষের আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ সৈয়দ মাহমুদ হোসেন রাতে এক আকস্মিক আদেশে ফাঁসি কার্যকর বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত স্থগিত করে দেন।এ রায়ের ফলে অনেক দিন ধরে আন্দোলন করে আসা গণজাগরণ মঞ্চে উল্লাস চলছে।

Leave a Reply