শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

বাংলাদেশকে কারাগারে পরিণত করেছে আলীগ

2_328981

 

প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ উদ্যাপন করলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশে শুক্রবার ঈদ হলেও যুক্তরাজ্যের মুসলমানরা ঈদ পালন করেছেন বৃহস্পতিবার। ঈদের দিন সকালে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছেলে তারেক রহমানের কিংসটনের বাসায় সময় কাটান তিনি। বিকালে লন্ডন প্রবাসী নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খালেদা জিয়া। ইলফোর্ডে লেকভিউ সেন্টারে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। বিএনপির যত নেতাকর্মী আছে, প্রত্যেকের নামে মামলা দিয়েছে। এই হল বাংলাদেশ, যেখানে মানুষ ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। দেশে কোনো মৌলিক অধিকার নেই, মানবাধিকার নেই, আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র নেই। আদালত সরকারের ইশারায় চলছে। সরকারের নির্দেশে যাকে-তাকে কারাদণ্ড দেয়া হচ্ছে।তিনি বলেন, দেশের মানুষকে মুক্ত করতে গণতন্ত্র ফেরাতে হবে। পুরো জাতি এখন মুক্তির অপেক্ষায়। বিএনপির পেছনে জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। বাংলাদেশের মানুষ অতিদ্রুত রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হবে। দুঃসময় কাটিয়ে শিগগিরই সুদিন আসবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এই আওয়ামী লীগ কিছুতেই ক্ষমতা ছাড়বে না। উনি গদি ছাড়বেন না। কারণ এত লুটপাট ও খুন করেছে যে ক্ষমতা ছাড়লে তারা পার পাবে না। তার দল ঐক্যের রাজনীতি করতে চায় দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যেও ভালো লোক ও দেশপ্রেমিক আছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবং তাতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাদের সঙ্গে নিয়েই তিনি দেশকে সামনের দিকে চালিয়ে নিতে চান।স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্য বিএনপি এ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত লোক সমাগমের কারণে নিরাপত্তারক্ষী ও স্বেচ্ছাসেবকদের বেশ বেগ পেতে হয়। একপর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মী ও নেতাদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উচ্ছৃংখল বেশকিছু নেতাকর্মী খালেদা জিয়ার মঞ্চে উঠার জন্য চরম বিশৃংখল অবস্থার সৃষ্টি করে। খালেদা জিয়ার সামনে এসে শুভেচ্ছা জানানোর নামে লাইন ভঙ্গ করে হুড়মুড় করে সবাই একসঙ্গে আসতে থাকলে মঞ্চ থেকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দাঁড়িয়ে সবাইকে হৈচৈ ও বিশৃংখলা বন্ধ করে লাইন ধরে আসার জন্য আহ্বান জানান। কিন্তু কিছুসংখ্যক উচ্ছৃৃংখল নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ডে অনেকেই নেত্রীর সঙ্গে দেখা না করেই চলে যান এবং অনেক সিনিয়র নেতা পিছনে চুপচাপ বসে থাকেন। ওই সময়ে কেউ কেউ অভিযোগ করেন, বিএনপির বিদ্রোহী গ্র“পের লোকজনই এ বিশৃংখল পরিবেশের সৃষ্টি করে। এ অবস্থার মধ্যে দীর্ঘক্ষণ ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে লাইনে থেকেও অনেকে খালেদা জিয়ার কাছে পৌঁছতে পারেননি। কেউ কেউ মঞ্চের সামনে জড়ো হয়ে মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে থাকলে অনুষ্ঠানে বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়।খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানও অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। ব্রিটেনের ইন্টারন্যাশন্যাল ডেভেলপমেন্ট মিনিস্টার ব্যারোনেস সন্দ্বিপ ভার্মা তারেক রহমানের আমন্ত্রণে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে যোগ দেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের গত নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ, যুক্তরাজ্য সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ও কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ডা. কেএমএ মালিক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নসরুল্লাহ খান জুনায়েদ, কাউন্সিলর আয়শা বেগম, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এমএ সালাম, ব্যারিস্টার আবু সায়েম, হুমায়ুন কবির, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার তারিক বিন আজিজ, বিএনপি নেতা শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস, মুজিবুর রহমান মজিব, সাবেক ছাত্র নেতা পারভেজ মল্লিক, নাজমুল হাসান জাহিদ, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ খান, আবদুস সাত্তার, শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন, নাসিম আহমেদ চৌধুরী, দেওয়ান মোকাদ্দিম চৌধুরী নিয়াজ, নাসির আহমেদ শাহিন, আবুল হোসেন, আবদুস সালাম প্রমুখ।বক্তব্যের শুরুতেই খালেদা জিয়া বলেন, এই প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে ঈদ করছি। কিন্তু এখানে আপনাদের সবাইকে কাছে পেয়ে মনে হচ্ছে, আমি যেন দেশেই আছি। খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে এখন সরকারবিরোধীদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হচ্ছে না। পুলিশের মাধ্যমে এ সরকারকে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কাউকে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। আমরা আশাবাদী, মানুষই একদিন রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হবে। শেখ হাসিনার সরকারকে অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকার উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, তারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে। আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য সংবিধানকে পরিবর্তন করে নিজেদের মতো করেছে। দেশে সেই বাকশালের মতো অবস্থা চলছে।দেশে সংবাদপত্রের কোনো স্বাধীনতা নেই দাবি করে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকরা সত্যি কথা লিখতে পারেন না। সত্যি কথা লিখলে তাদের নামে মামলা হয়, জেল হয়। যারা টকশোতে সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের সমালোচনা করেন তাদের টকশোতে আসতে দেয়া হয় না। সংবাদপত্রে বা টেলিভিশনে বিরোধী দলের কিছু প্রচার করতে দেয়া হয় না। তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারেক রহমানের সত্য বক্তব্যে তাদের গায়ে জ্বালা ধরে যায়।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় আতংক হল খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। কিছু হলেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নাম। একদলীয় পার্লামেন্টে বসে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও জিয়াউর রহমানকে গালিগালাজ করা ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ নেই।এ সরকারের পক্ষে পদ্মা সেতু করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বাংলাদেশের জনগণ বিএনপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে। আর বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ইনশাআল্লাহ দুটি পদ্মা সেতু তৈরি করবে।বাংলাদেশকে বাঁচাতে সবার ঐক্যবদ্ধ হতে হবে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি শান্তি, উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও জনগণের কল্যাণে বিশ্বাস করে। তাই আমরা জাতিকে বিভক্ত করে নয়, বরং ঐক্যবদ্ধ করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করতে চাই। যাতে ব্রিটেনের মতো নিরপেক্ষ ভোট হবে। আর এই ভোটে জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে সেই হবে জনগণের প্রতিনিধি। ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে জয়ের মধ্যে কোনো শান্তি নেই, কোনো আনন্দ নেই। বাংলাদেশের মানুষ পরিবর্তন দেখতে চায়।