সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

আবার নতুন কারো সন্ধানে

untitled-32_80852

 

সেই চিরচেনা হাসি মুখে নিয়ে এলেন তিনি। দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করলেন বিসিবি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। এরপর মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলে বিসিবি অফিস থেকে বেরিয়ে গেলেন শেন জার্গেনসেন। চলে গেলেন আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গন থেকেই। চেনা হাসির বদলে অচেনা বিষণ্নতাকে সঙ্গী করে।

ব্যাপারটা একরকম অনুমিতই ছিল। ই-মেইল করে শেন জার্গেনসেনের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেওয়া, সেটিকে আবেগী সিদ্ধান্ত হিসেবে বিসিবির চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, ওই তত্ত্ব আবার এই অস্ট্রেলিয়ানের উড়িয়ে দেওয়া এবং বিদেশ থেকে ফিরে বিসিবি প্রেসিডেন্টের ঝাঁঝালো প্রতিক্রিয়া- ঘটনা পরম্পরায় বাংলাদেশে জার্গেনসেন-অধ্যায় শেষের সব ইঙ্গিত মিলছিল। সেটি ভুল প্রমাণ করতে পারত কেবল নাজমুল হাসানের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান কোচের একান্ত বৈঠক। সেটি হয়নি। ওই বৈঠক শেষে কাল নিশ্চিত হয়ে গেল, জার্গেনসেনের ‘সাবেক’ হয়ে যাওয়া। গর্ডন গ্রিনিজ-ডেভ হোয়াটমোর-জেমি সিডন্সের কাতারে তাঁর চলে যাওয়া।

বিসিবির মিরপুর অফিসের করিডরে কাল ছিল সংবাদকর্মীদের মাছি থিকথিকে ভিড়। বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুলের সঙ্গে কোচ জার্গেনসেনের বৈঠকের ফল তাঁদের জানালেন কোচ বেরিয়ে এসে। নিজের আর থাকার ইচ্ছা নেই স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন, তবে জুনে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ পর্যন্ত বিসিবি তাঁকে ধরে রাখবে কি না, নিশ্চিত ছিল না তা। বোর্ডসভা থেকে বেরিয়ে এসে তা নিশ্চিত করলেন বিসিবি প্রধান, ‘চিঠিতে জার্গেনসেন বলেছে, ভারতের বিপক্ষে সিরিজ পর্যন্ত বললে ও থাকতে পারে। এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে আলোচনায় সেও বলেছে আমিও বলেছি, যদি ছেড়েই দেওয়া হয়, তাহলে ওকে এখনই ছেড়ে দেওয়া ভালো। বোর্ডসভার অন্যদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখনই ওকে ছেড়ে দেওয়ার।’ হুট করে কেন বাংলাদেশ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন জার্গেনসেন, এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করেছেন নাজমুল, ‘আমি ওর সঙ্গে লম্বা বৈঠক করেছি। জানার চেষ্টা করছিলাম, পদত্যাগপত্র দেওয়ার কারণ কী। বুঝলাম, অনেক ফ্যাক্টর আছে। তবে সবচেয়ে বড় যে ব্যাপারটা বলেছে, সেটি হলো ছয় বছর ধরে ও দেশের বাইরে আছে। এখন অস্ট্রেলিয়ার কাছেপিঠে যদি ভালো কোনো প্রস্তাব পায়, সেটি ওর কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’

বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সের পতন নিয়ে চিন্তার স্রোত ছিল বিসিবির অন্দরমহলে। কিন্তু সেটি কোচ পাল্টে ফেলার মতো নয় বলে জার্গেনসেনকে আশ্বস্ত করেছিলেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট, ‘বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সও সাম্প্রতিক সময়ে ভালো হচ্ছিল না। তবে আমি ওকে বলেছি, এই দল নিয়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজ-নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমরা ভালো করেছি। এটি তাই বড় ইস্যু না।’ কোচ নিয়ে বোর্ড পরিচালকদের বিভিন্ন মন্তব্য জার্গেনসেনের পদত্যাগে প্রভাবকের ভূমিকা রেখেছে বলে খবর। তবে বিসিবি প্রধানের সঙ্গে আলোচনায় অস্ট্রেলিয়ান কোচ বিষয়টি উল্লেখ করেননি বলে জানালেন নাজমুল, ‘আজ আমি ওকে এ বিষয়ে সরাসরি কিছু জিজ্ঞেস করিনি। তবে কী কী কারণে পদত্যাগ করেছে, সেটি জানতে চেয়েছি। সেখানে ও এই ব্যাপারটির উল্লেখ করেনি।’

জার্গেনসেন তো গেলেন, তাঁর শূন্য চেয়ারে বসবেন কে? এ বিষয়ে খোঁজখবর করার জন্য পাঁচ সদস্যের বিশেষ এক কমিটি গঠন করা হয়েছে কালকের বোর্ডসভায়। জাতীয় দলের সাবেক তিন অধিনায়ক আকরাম খান, নাঈমুর রহমান ও খালেদ মাহমুদের সঙ্গে সেখানে আছেন আরো দুই বিসিবি পরিচালক মাহবুব আনাম ও জালাল ইউনুস। জুনে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগে নতুন কোচ পেয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বিসিবি প্রেসিডেন্ট, ‘এই বিশেষ কমিটি নতুন কোচ ও সাপোর্ট স্টাফদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেবেন। আশা করি, এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে তা পেয়ে যাব। যদি তা না পাই, তাহলে স্থানীয় কোনো কোচকে দিয়ে ভারতের বিপক্ষে সিরিজটি চালিয়ে নেব।’ বিসিবি প্রধান যা-ই বলুন না কেন, বিশ্ব ক্রিকেটের বর্তমান বাস্তবতায় এক-দেড় মাসের মধ্যে নতুন কোচ পাওয়া খুব কঠিন। নাজমুল অবশ্য জানালেন পাঁচ-ছয়জন সম্ভাব্য প্রার্থীর সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ করেছে বিসিবি, ‘দেড় মাসের মধ্যে নতুন কোচ পেয়ে যাবার সম্ভাবনা খুব বেশি। আমরা এখন পর্যন্ত পাঁচ-ছয়জনের সঙ্গে কথা বলেছি। সমস্যাটা হচ্ছে, কোনো কোচই তো বেকার বসে নেই। প্রত্যেকেই কোথাও না কোথাও কাজ করছে। সেখান থেকে ওই চাকরি বাদ দিয়ে এখানে আসার ব্যাপার আছে।’

ভারতের বিপক্ষে ‘ঠেকার কাজ’ স্থানীয় কোচ দিয়ে চালাতে হলে বিসিবি সে পথে হাঁটবে। তবে পূর্ণ মেয়াদে এখনই স্থানীয় কোচের দিকে না ঝোঁকার কথা জানালেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট, ‘স্থানীয় কোচের প্রতি আমাদের আগ্রহ আছে। তবে সবার সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, দল এখন যে অবস্থায় আছে আর সামনেই যেহেতু বিশ্বকাপ- এ অবস্থায় দলের দায়িত্ব নেওয়ার মতো রেডিমেড স্থানীয় কেউ নেই। এ মুহূর্তে তাই বিদেশি কোচই আমাদের অগ্রাধিকারে আছে। তবে ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিদেশি কোচের সঙ্গে স্থানীয় কোচদের অ্যাটাচড রাখার ব্যাপারটি আমরা মাথায় রাখব।’