সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

image_172517

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির ১১তম দিন আজ। বাংলা ভাষা নিয়ে পাকিস্তানিদের চক্রান্ত শুরু হয় বহু আগে থেকেই। এর চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (সিএসপি) পরীক্ষা থেকে বাংলাকে বাদ দেয়া হয়। ১৯৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তখনকার কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমানের নাজিরা বাজারের বাসায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতা অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল যায়।

প্রতিনিধিদল শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জানতে চায় সিএসপি পরীক্ষা থেকে বাংলা ভাষাকে কেন বাদ দেয়া হলো। এ নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের তুমুল বিতর্ক হয়। পরে মন্ত্রী প্রতিনিধিদলকে বলেন, এটা নিতান্তই ভুলবশত হয়েছে। একই সালে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর পরীক্ষা থেকেও বাংলা ভাষাকে বাদ দেয়ার চক্রান্ত শুরু হয়।

ঐ পরীক্ষা উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকায় নৌবাহিনীর পরীক্ষায় বাংলা মাধ্যম বাদ দেয়ার বিষয়ে ‘ভুলের পুনরাবৃত্তি’ শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়। পরে এ সম্পাদকীয় ১৯৪৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সিলেট থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক নওবেলাল’ পত্রিকায় পুনর্মুদ্রিত হয়। এরপর তমদ্দুন মজলিশের অধ্যাপক আবুল কাসেম পূর্ব-পাকিস্তানের মন্ত্রী হাবিবুল্লাহ বাহার ও নূরুল আমিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।

রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে রক্ষার আন্দোলনে শহীদদের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর ক্রোধের আগুনে সেদিন সারাদেশ হয়ে ওঠে মিছিল ও বিক্ষোভে উত্তাল। পাকিস্তান সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা এক মাস ঢাকা শহরে সভা-মিছিল সমাবেশের ওপর ১৪৪ ধারা জারি করে। তমদ্দুন মজলিশের রাজনৈতিক ফ্রন্টের আহ্বায়ক আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু ছাত্রজনতা ১৪৪ ধারা অমান্য করার পাশাপাশি শোক পালন করতে থাকে। বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থল ত্যাগ করে ছাত্রদের মিছিলে যোগ দেন।

প্রথমে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে এবং একপর্যায়ে তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। আর রচিত হয় নতুন এক অধ্যায়।

অমর একুশ নানাভাবে প্রতিফলিত হয়েছে আমাদের সাহিত্যে। কবিতায়, গানে, গল্পে, উপন্যাসে ঠিকানা হয়েছে মহান ভাষা আন্দোলনের। প্রতিফলিত হয়েছে একুশের চেতনা। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতেই পুলিশের গুলিবর্ষণ ও ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে মাহবুবুল আলম চৌধুরী লেখেন ১২০ লাইনের দীর্ঘ কবিতা_’কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি।’

বাংলাদেশের নবীনতম কবি-সাহিত্যিকও একুশকে চেতনায় ধারণ করে লিখেছেন, এখনো লিখছেন, ভবিষ্যতেও লিখবেন। বাংলা সাহিত্য তার বুকে ধরে রাখবে একুশকে চিরদিন।