সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের ঘোষণা ওবামার

40997_b2

সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসকে ধ্বংস করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ফলে ইরাকে আইএস-এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যে সামরিক অভিযান চলছে তা পরিচালিত হবে সিরিয়াতেও। বুধবার স্থানীয় সময় রাতে জাতীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন। তবে এ ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে রাশিয়া। তারা বলেছে সিরিয়ায়
জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জাতিসংঘের সমর্থন ছাড়া এমন অভিযান এক ধরনের আগ্রাসন। ওদিকে এ অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশ নিচ্ছে না বৃটেন। আইএসকে ভেঙে দেয়া ও চূড়ান্ত ধ্বংস করার যে ঘোষণা ওবামা দিয়েছেন তা ওবামার আগের মধ্যপ্রাচ্য নীতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো বলে ব্যাখা করেছেন সিএনএন-এর জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান প্রতিনিধি জিম স্কুইটো। এর আগে ওবামা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহী দলগুলোকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ প্রদানে শীর্ষ উপদেষ্টাদের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এবারে তিনি সেটাই করার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন চেয়েছেন। ইরাকে আইএস-এর বিরুদ্ধে অভিযান এতদিন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল ইরাকি বাহিনীদের সঙ্গে কাজ করা মার্কিন উপদেষ্টাদের সুরক্ষা ও আইএস-এর হাতে ইয়াজিদি সংখ্যালঘুদের হত্যাযজ্ঞ প্রতিহত করা পর্যন্ত। এবারে তিনি অন্যান্য আইএস লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলার অনুমোদন দিয়েছেন। ওবামা বলেন, আমি এটা স্পষ্ট করে বলেছি যে, আমাদের দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ সন্ত্রাসীরা যেখানেই থাকুক না কেন খুঁজে বের করবো। অর্থাৎ সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে আমি দ্বিধাবোধ করবো না। আমেরিকাকে হুমকি দিলে, পালানোর জায়গা খুঁজে পাবে না- এটাই আমার প্রেসিডেন্সির প্রধান মূলনীতি। তবে এ অভিযানে বিদেশের মাটিতে কোন মার্কিন সেনাকে স্থলযুদ্ধে পাঠানো হবে না। জোরদার হবে বিমান হামলা। এর পাশাপাশি আরও ৪৭৫ জন সামরিক উপদেষ্টা যাচ্ছেন ইরাকে। ওবামা বলেন, সমন্বিত ও নিরবচ্ছিন্ন সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলের মধ্য দিয়ে আইএসকে নির্মূল করা হবে। এছাড়াও তিনি বুধবার ইরাকি বাহিনীকে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার সামরিক সহায়তা দিয়েছেন। এ সহায়তার আওতায় থাকছেন উত্তর ইরাকে আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে যুদ্ধরত কুর্দি যোদ্ধারা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেরি হার্ফ বলেন, এ সহায়তার মধ্যে থাকতে পারে গোলাবারুদ, ছোট অস্ত্র, যান, সামরিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। আইএস-এর বিরুদ্ধে অভিযানে সমর্থন জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্র এ সপ্তাহে ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আইএস’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জর্ডান ও সৌদি আরবের সুন্নি নেতাদের যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য প্রচারণা চালাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি মঙ্গলবার ইরাকে যান। সেখান থেকে গতকাল তিনি পৌঁছেন সৌদি আরবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি উপদেষ্টা লিসা মোনাকোর-ও সেখানে যাওয়ার কথা। সিনিয়র এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, আমাদের এ মিশনে সৌদি আরব তাদের স্পষ্ট সমর্থন দিয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ আরব অংশীদাররা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। আইএস-এর হুমকির প্রেক্ষিতে আরও কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ার জন্য এতদিন ওবামার সমালোচনা করেছেন রক্ষণশীল মার্কিনিরা। এমনকি ডেমোক্রেট দলের কেউ কেউ ছিলেন সমালোচকদের দলে। আইএস-এর হাতে দুই মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফোলি ও স্টিভেন সোটলফের শিরশ্ছেদ করার ভিডিও প্রকাশের পর এ সংগঠনের ব্যাপারে মার্কিন জনগণের সচেতনতা বেড়েছে। ওবামা বলেন, এসব সন্ত্রাসীকে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে তাদের হুমকি মধ্যপ্রাচ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। অভিযান বিস্তৃত করে সিরিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারণের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সিরিয়ার বিরোধী দলগুলো। ওবামার কঠোর সমালোচক রিপাবলিকান নেতা মাইক রজার্স এটাকে ‘সঠিক দিকে উৎসাহব্যঞ্জক পদক্ষেপ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ বন্ধে তৎপর, শান্তিতে নোবেল জয়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এমন একটি বক্তব্য হয়তো কখনওই দিতে চাননি। সিএনএন-এর প্রধান রাজনৈতিক বিশ্লেষক গ্লোরিয়া বোর্গার বলেন, যে প্রেসিডেন্ট ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ বন্ধের জন্য প্রচারণা চালিয়েছেন তার জন্য এ বক্তব্য দেয়া ছিল কঠিন।