রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

সাব্বিরের সেঞ্চুরি ম্লান করে দিয়ে মুশফিকদের জয়

c18c702b5cacf5518a607adcce020025

ক্রীড়া প্রতিবেদক ।।

বিফলে গেল সাব্বির রহমানের প্রথম টিটোয়েন্টি সেঞ্চুরি। তার সেঞ্চুরিটা হার মানল মুশফিকের ৮১ রানের ইনিংসটার কাছে। এবারের বিপিএলে রান হচ্ছেনা দেখে বেশ দুশ্চিন্তা হচ্ছিল আয়োজকদের মাঝে। এবার রানের বন্যা বইয়ে গেল। আর সে রান বন্যার ম্যাচে শেষ ওভারের ম্যাজিকে রাজশাহী কিংসকে ৪ রানে হারিয়েছে বরিশাল বুলস। পুরো ম্যাচের সবকটি ওভারেই চারছক্কার ফুলঝুরি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিল মিতব্যয়ী একটি ওভার। সাব্বির রহমানের অসাধারণ সেঞ্চুরিতে রানের পাহাড় টপকে জয়ের আশা জাগিয়েছিল রাজশাহী কিংস। কিন্তু পারলনা তারা শেষ ওভারে ৯ রান তুলে নিতে। শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারের ম্যাজিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতল বরিশাল বুলস। বরিশালের ১৯২ রান তাড়া করতে নেমে রাজশাহী শেষ পর্যন্ত থমকে যায় ১৮৮ রানে। শেষ ওভারে দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে রাজশাহীর দুই ব্যাটসম্যানকে রান নিতে দেননি থিসারা পেরেরা। মাত্র চারটি রান নিতে পেরেছেন নুরুল হাসান ও আবুল হাসান। আর তাতেই বাজিমাত বরিশালের। টসে হেরে ব্যাট করতে নামা বরিশালের শুরুটা ভাল হয়নি। প্রথম ওভারেই দিলশান মুনাবিরাকে ফেরান ফরহাদ রেজা। রানের খাতা খুলতে পারেননি মুনাবীরা। ২১ রানে যেতে ফিরেন ডেভিড মালান। ২১ রানে দুই উইকেট হারিয়ে যখন বিপদে দল ঠিক তখনই প্রতিরোধ গড়ে তুলেন শাহরিয়ার নাফিস ও মুশফিকুর রহিম। এ দুজন উল্টো চড়াও হয়ে বসে রাজশাহীর বোলারদের উপর। তৃতীয় উইকেটে দুজন গড়েছেন ১১২ রানের জুটি গড়ে তোলে। এবারের বিপিএলে এটিই প্রথম শতরানের জুটি। দুজনই তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। ৬৩ করে শাহরিয়ার নাফিস বিদায় নিলেও মুশফিক শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৫২ বলে ৮১ রানে। শাহরিয়ার নাফিস তার ৪৪ বলের ইনিংসটিতে ৪টি চার এবং ৪টি ছক্কার মার মেরেছেন। অপরদিকে মুশফিকের ৫২ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৫টি চার এবং ৪টি ছক্কার মার। থিসারা পেরেরার ১১ বলে তিন ছক্কায় করা ২৪ রানে বরিশাল পৌঁছে যায় ১৯২ রানে। যা এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর।

বিশাল সে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রাজশাহীর শুরুটা আরো খারাপ। দলের খাতায় এক রান যোগ হতেই ফিরেন রাকিবুল হাসান। সাব্বিরের সাথে ৪৮ রান যোগ করলেও প্রথম ম্যাচে ৬৩ রান করা মোমিনুল ফিরেন ১২ রান করে। এরপর কেবলই সাব্বির শো। একাই দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন সাব্বির। রাজশাহী জয়ের পথেই ছিল সাব্বিরের ব্যাটে। বিপিএল রেকর্ড গড়া ইনিংসে দলকে টেনে নিচ্ছিলেন সাব্বির প্রায় একাই। তবে শেষ করে আসতে পারেননি কাজ। ফিনিশারের ভুমিকাটা ঠিকভাবে পালন করতে পারলেন না অধিনায়ক ড্যারেন স্যামিও। সাব্বির শুরু করেছিলেন আল আমিনকে চার মেরে। এরপর আর থামাথামি নেই। এক পাশ থেকে কিছুক্ষণ মোমিনুল, পরে সামিত প্যাটেল সঙ্গ দিয়েছেন সাব্বিরকে। আক্ষরিক অর্থেই অন্যরা ছিলেন স্রেফ ছায়া হয়ে। সাব্বিরের ব্যাটে ছিল টর্নোডো। ১৪ রানে মনির হোসেনের বলে পয়েন্টে সহজতম ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান আল আমিন হোসেনের হাতে। নিজের অর্ধশতক স্পর্শ করেন ২৬ বলে। এরপরও ছুটতে থাকেন একই গতিতে। সাব্বিরের সামনে যেন বল ফেলার জায়গাই পাচ্ছিলেন না বরিশালের বোলাররা। ৫৩ বলে সাব্বির ছুঁয়ে ফেলেন সেঞ্চুরি। বিপিএলে যেটি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দ্রুততম সেঞ্চুরি। মাইলফলক ছোঁয়ার ওভারেই টানা দুটি চার ও ছক্কায় আরও এগিয়ে যান জয়ের দিকে। শুরুতে যার হাতে জীবন পেয়েছিলেন, সেই আল আমিনকে ছক্কা মারতে গিয়েই শেষ পর্যন্ত আউট হন সাব্বির। মালানের দারুণ ক্যাচ হয়ে যখন ফিরছেন সাব্বির তখন তার নামের পাশে ৬১ বলে ১২২। চারছক্কা সমান ৯টি করে। ২৪ বলে তখন রাজশাহীর জয়ের জন্য দরকার ৩৪ রান। হাতে ৫ উইকেট। উইকেটে রয়েছেন অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। পেন্ডুলাম হেলে তাদের দিকেই। দলকে এগিয়েও নিচ্ছিলেন স্যামি। কিন্তু ১৯ তম ওভারে রায়াদ এমরিটের স্লো ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে গেলেন স্যামি। ফিরলেন ১৯ বলে ২৭ রান করে। রাজশাহীর পরাজয় যেন লেখা হয়ে গিয়েছিল তখনই। শেষ ওভারে জয়ের জন্য রাজশাহীর দরকার ৯ রান। মুশফিক বল তুলে দিলেন পেরেরার হাতে। প্রথম বলে আবুল হাসান নিলেন এক রান। দ্বিতীয় বলে নুরুল হাসান নিলেন এক রান। তৃতীয় বল থেকে আবুল হাসান পারলেননা কোন রান নিতে। চতুর্থ বল থেকে একরান নিয়ে স্ট্রাইক দিলেন নুরুল হাসানকে। পঞ্চম বলটি আবারো ডট। শেষ বলে জয়ের জন্য দরকার ৫ রান। কিন্তু নুরুল হাসানকে এক রানের বেশি নিতে দিলেননা পেরেরা। ফলে ৪ রানের অসাধারণ এক জয় নিয়ে উল্লাসে মাতে বরিশাল বুলস। বরিশালের পক্ষে ৩টি উইকেট নিয়েছেন আল আমিন হোসেন। তবে ম্যাচ সেরার পুরস্কারটি উঠেছে সেঞ্চুরিয়ান সাব্বির রহমানের হাতে।