সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মোদীর বৈঠক এড়াচ্ছেন মমতা

image_160091.2
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি আসছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বদলে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। যোজনা কমিশনের পরিবর্তে কী ধরনের সংস্থা হবে, তা নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীদের রায় নেবেন মোদী। তাছাড়া বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে তিনি আলাদাভাবেও কথা বলবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বৈঠকে না থাকার অর্থ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর মুখোমুখি কোনও সাক্ষাত্‍ এখনও হল না। এ বার একটা সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু কলকাতায় অনুষ্ঠান আছে বলে মুখ্যমন্ত্রী এলেন না। অন্য মুখ্যমন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একবার সৌজন্য সাক্ষাত্‍ করে গিয়েছেন। কিন্তু মমতা সেটাও করেননি। অবশ্য কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী যখন দিল্লিতে এসেছিলেন, তখন মোদী বিদেশে ছিলেন।রাজ্যে এখন তৃণমূল ও বিজেপি-র মধ্যে নিয়মিত সংঘাত হচ্ছে। সারদা, খাগড়াগড়ের ঘটনা, পাড়ুই-সহ প্রতিটি বিষয় নিয়েই তৃণমূল ও বিজেপি-র বিরোধ এখন নিত্য ঘটনা। আর সেই বিরোধের জের পড়েছে সংসদেও। কংগ্রেস সহ অন্য বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃণমূল এখন সংসদে মোদী ও সরকারের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। রাজ্যসভায় সরকারকে আটকাতে সবচেয়ে সক্রিয় হলেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। এটা ঘটনা যে, নিরঞ্জন জ্যোতির বেফাঁস কু-মন্তব্য নিয়ে মোট ন’টি বিরোধী দলকে একসঙ্গে নিয়ে এসে রাজ্যসভা অচল করার অনেকটা কৃতিত্ব ডেরেকের প্রাপ্য। শুক্রবার ডেরেক আরেক বিরোধী নেতাকে সঙ্গে নিয়ে মায়াবতীর বাড়িতে গিয়ে যৌথ বিবৃতিতে তাঁর সই নিয়ে এসেছেন। মোদী সরকার, বিশেষ করে অরুণ জেটলি যেখানে মায়াবতীর সমর্থন পাওয়ার জন্য ঝাঁপিয়েছিলেন, সেখানে দলিত নেত্রীকে নিজেদের দিকে নিয়ে আসাটা কম কৃতিত্বের নয়। সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে মায়াবতীকে পাওয়া মানে বিরোধীদের বড় জয়। তৃণমূল ও কংগ্রেসের কৌশলে গত ছ’ মাসের মধ্যে এই প্রথমবার রাজ্যসভায় রীতিমতো চাপের মুখে নরেন্দ্র মোদী। এই অবস্থায় মোদী-মমতা সাক্ষাত্‍ হলে সেটা হত সকলের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্ত্ত এ বার সেটা হচ্ছে না। লোকসভায় নিয়মিত তৃণমূলের নেতৃত্বে বিরোধী সাংসদরা নরেন্দ্র মোদীকে ‘ধোঁকাবাজ প্রধানমন্ত্রী’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন। সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু বার কয়েক আপত্তি জানিয়েও স্লোগান থামাতে পারেননি। বিজেপি নেতারাও এখন সংসদে, বিশেষ করে লোকসভায়, তৃণমূলকে পাল্টা আক্রমণ করছেন। এই প্রবল বিরোধ, সরাসরি সংঘাতের আবহের মধ্যে মমতা কিন্ত্ত প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি হওয়াটা এড়িয়ে গেলেন। রবিবারের বৈঠকে মোদীর প্রধান আলোচ্য বিষয় হল, যোজনা কমিশনের জায়গায় যে সংস্থা হবে, তার চেহারা কী হবে, সেটি কী কাজ করবে তা ঠিক করা। যোজনা কমিশনের জন্ম ১৯৫০ সালে। তারপর ৬৪ বছর ধরে দেশের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করা, রাজ্যের যোজনা বরাদ্দ ঠিক করে দেওয়া, বিভিন্ন মন্ত্রকের যোজনা ঠিক করে দেওয়ার মতো কাজ করে এসেছে এই সংস্থা। কিন্ত্ত মোদী মনে করছেন, বর্তমান সময়ে কমিশনের আর দরকার নেই। তার জায়গায় অন্য সংস্থা তৈরি করা দরকার, যাদের ভূমিকাও বদলে যাবে। শুক্রবারই মোদী লোকসভায় জানিয়েছেন, সরকার বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলেছে, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা হয়েছে, অনেকেই নানা ধরনের সুপারিশ করেছেন, এ বার তিনি মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। তবে কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রীরা মোদীর পরিকল্পনার বিরোধিতা করবেন। কংগ্রেসের মত হল, যোজনা কমিশনকে উঠিয়ে দেওয়া উচিত নয়। বরং যদি দরকার হয়, তাদের সময়োপযোগী করা হোক। তাঁদের ভূমিকার বদল হোক। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু যখন কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন, তখন তিনি যোজনা কমিশনের স্থাপনার প্রয়াস করেছিলেন। স্বাধীনতার পরে নেহরু এই কমিশন গঠন করেন। ফলে এই সংস্থার দীর্ঘ ইতিহাস আছে, আলাদা গুরুত্ব আছে। কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীরা মোদীকে সে কথাটাই বলবেন। সংসদের মতো এখানেও বিরোধী দল-শাসিত রাজ্যগুলির মধ্যে একটা ঐক্য দেখা দিতে পারে। তা যদি হয়, তা হলে কিন্ত্ত একটা বিচিত্র অবস্থা দেখা দেবে। একদিকে থাকবে বিজেপি-র সাতজন মুখ্যমন্ত্রী এবং পাঞ্জাবের প্রকাশ সিং বাদল, অন্ধ্রের চন্দ্রবাবু নাইডু, তেলেঙ্গানার কে চন্দ্রশেখর রাও। ওডিশার নবীন পট্টনায়েক ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীও মোদীর দিকে থাকবেন। অন্যদিকে বাকিরা। ফলে যোজনা কমিশনের বিলোপের প্রশ্নেও মোদীকে বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে। এখনও পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, এই বৈঠকের পর মোদী আলাদাভাবে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বসবেন। সেখানে প্রতিটি রাজ্যের সমস্যা নিয়ে কথা হবে। স্বচ্ছতা-সহ অন্য বিষয়ে মোদী তাঁর মত জানাবেন। মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলাটাই মোদীর লক্ষ্য। কিন্তু সেখানে আপাতত বাদ থাকছে পশ্চিমবঙ্গ।