সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে কমানোর চিন্তা

pic-20_129266

বর্তমানে মেয়েদের বিয়ের সর্বনিু বয়স ১৮ বছর। নতুন যে আইন করা হচ্ছে তাতেও বিয়ের বয়স ১৮ বছরই নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ থেকে কমানো যায় কি না তা খতিয়ে দেখতে আইন মন্ত্রণালয় এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৪’ নীতিগত অনুমোদন করা হলেও মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানোর কোনো রাস্তা আছে কি না তা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন সনদ, দেশের প্রচলিত বিভিন্ন আইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য মন্ত্রিসভা পরামর্শ দিয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী জানান, বর্তমানে ১৮ বছরের কম বয়সী নারী এবং ২১ বছরের কম বয়সী পুরুষকে নাবালক ধরা হয়। কিন্তু বিয়ের জন্য নির্ধারিত বয়স কমানো যায় কি না তা পর্যালোচনার জন্য আজ (সোমবার) মন্ত্রিসভা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে অনুশাসন দিয়েছে। এর কারণ হলো, আমাদের দেশে বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বেশির ভাগ মেয়ের বিয়ে হয়। জলবায়ুগত কারণে এ দেশের নারীরা ১৮ বছরের আগেই বিয়ের উপযুক্ত হয়। এ কারণেই আইনে নারীদের বিয়ের বয়স কমানোর বিধান রাখা যায় কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।তবে কাজটি সহজ নয় বলে জানিয়েছেন ওই মন্ত্রী। তাঁর মতে, বাংলাদেশ জাতিসংঘ ঘোষিত নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও) সই করেছে। শিশু অধিকার সনদেও সই করেছে। এর পরও দেশে বিভিন্ন আইন রয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে বিষয়টি সাংঘর্ষিক হবে। এর পরও কোনো রাস্তা বের করা যায় কি না তা দেখা হবে। আইন মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো দেখে আবার খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসবে। তখনই আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।
গতকালের মন্ত্রিসভায় সাজা ও জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী, বাল্যবিবাহের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ সাজা হবে দুই বছর, জরিমানা হবে ৫০ হাজার টাকা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এ সাজা দেবেন। তবে বিয়ে বাতিলের বিষয় থাকলে তা করবেন পারিবারিক আদালত। অপরাধী নারী হলে শুধু আর্থিক দণ্ড হবে, কারাভোগ করতে হবে না।বর্তমান বাল্যবিবাহ আইনটি অনেক পুরনো। ১৯২৯ সালে প্রণয়ন করা হয়েছে এটি। বিদ্যমান আইনে বাল্যবিবাহের অপরাধের জন্য এক হাজার টাকা জরিমানা ও সর্বোচ্চ তিন মাসের সাজার বিধান রয়েছে। যারা বাল্যবিবাহ করেছে, যারা বিয়েটি পরিচালনা করে এবং যারা বাল্যবিবাহের অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারা এই দণ্ডের আওতায় পড়বে।
খসড়া আইনে বাল্যবিবাহের সঙ্গে জড়িত তিন শ্রেণির ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। শিশু বিবাহকারী এ শাস্তির আওতায় আসবে। বাল্যবিবাহ যারা পরিচালনা করবে তারাও শাস্তির আওতায় আসবে। এমনকি বাল্যবিবাহের সঙ্গে জড়িত মা-বাবা বা অভিভাবককেও শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।বাল্যবিবাহের বয়স প্রমাণের পদ্ধতির বিষয়ে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও এসএসসির সনদের মাধ্যমে বয়স প্রমাণ করতে হবে। কোনো ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা বা কর্মচারী বাল্যবিবাহের সংবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে জানাবেন। কোনো ব্যক্তি এ-সংক্রান্ত বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিলে তাকেও খসড়া আইনে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। মিথ্যা তথ্যদাতাকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। বাল্যবিবাহসংক্রান্ত তদন্তের কাজ ৬০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। কোনো কারণে এ সময়ের মধ্যে সম্ভব না হলে আরো ৩০ দিন সময় পাওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট আদালত ১৮০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করবেন। কোনো কারণে বিয়ে বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট সম্পদের মালিকানাও ফেরত দিতে হবে। অর্থাৎ বিয়ের সময় কনেপক্ষ যে উপহার সামগ্রী পায় বা অন্য যেকোনো উপায়ে যে সম্পত্তি অর্জন করে এসব ফেরত দিতে হবে। বাল্যবিবাহের বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা রয়েছে আইনে। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের জন্য সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি দিয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে।বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা জানান, মন্ত্রিসভায় বিয়ের বিদ্যমান বয়স কমানো যায় কি না তা পর্যালোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে অনুশাসন দেওয়া হয়েছে।
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ছাড়াও গতকাল মন্ত্রিসভায় কাস্টমস আইন ২০১৪-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ওপর সারচার্জ আরোপ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ তাদের দুটো বিষয় মন্ত্রিসভাকে অবহিত করেছে।