শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মীরসরাইয়ে দুই গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি

mirsori chobi 23-7 -15-2 নিজস্ব প্রতিবেদক :: মীরসরাই উপজেলার ওচমানপুর ও ইছাখালী ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুইটি গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবার। মৎস্য প্রকল্পের লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেছে। উপজেলার ৫নং ওচমানপুর ইউনিয়নের বাঁশখালি ও ৬নং ইছাখালি ইউনিয়নের সাহেবদীনগর গ্রামের পানিবন্দি পরিবারগুলো গতকাল বুধবার পর্যন্ত এক সপ্তাহ ধরে দিন কাটাচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে। টানা বৃষ্টিতে এই এলাকার কোন কোন ঘরে কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে। বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে ৩০টিরও অধিক পরিবার। অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের তৈরি ও সরকারি খাল দখল করে বাঁধ তৈরির কারণে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক বসতবাড়ির আঙ্গিনায় হাঁটু পানি, মাছের ঘের ডুবে গেছে পানিতে। এলাকার মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে হাঁটু সমান পানিতে। অনেককে ঘরে পানি উঠায় রাস্তায় এসে বসে থাকতে দেখা যায়।পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।

পানিবন্দি হোসেনুজ্জামান বলেন, পানি বসতঘরে উঠে যাওয়ায় এখন রাস্তায় এসে উঠেছি। পানি না নামলে রাস্তায় দিনযাপন করতে হবে। পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় যাব এই চিন্তায় এখন আর চোখে ঘুম আসেনা। একই অবস্থা তাঁর অপর ভাই নাদেরুজ্জামানেরও। তারাও বসতঘর ছেড়ে রাস্তায় উঠে এসেছে।mirsori chobi 23-7-15
বাঁশখালি গ্রামের জলদাশ পাড়ার ফুলেশ্বরি জলদাশ জানান, রান্নাঘরে পানি উঠে যাওয়ায় চুলোয় জ্বলছেনা আগুন ফলে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন তারা। তিনি বলেন জলদাশ পাড়ার ৭০টি পরিবারের চিত্র একই।
মাছচাষী আনোয়ার সওদাগর বলেন, পানিতে ইতিমধ্যে ৩ লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেছে। জলাবদ্ধতার এই সমস্যা দূর না হলে আমাদের পথে বসতে হবে। অপর মাছচাষী আলমগীরও জানান একই সমস্যার কথা। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষী হারুন অর রশিদ, নাছির উদ্দিন, নিজাম উদ্দিনসহ আরো অনেকে।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান বসতঘরে পানি উঠে পড়ায় ইতিমধ্যে বাড়ি ছেড়েছে অনেক পরিবার। বাঁশখালি গ্রামের দিনমজুর মিয়া খান পার্শ্ববর্তি সোনাগাজি শ্বশুর বাড়িতে ও আলমগীর গিয়ে উঠেছে পাশের গ্রামের বোনের বাড়িতে। আর যে পরিবারগুলো এখনো বসতঘরে আছে তারাও পোহাচ্ছে চরম দুর্ভোগ। এছাড়া স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা পড়েছে সীমাহীন দুর্ভোগে। দুটো পোশাক নিয়ে স্কুলে রওনা দিচ্ছে অনেকে। আর যাদের দুটো নেই ওরা ভেজা পোশাকেই যেতে হবে। গ্রামবাসীরা জানান ইতিমধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকেও এই সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানকে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতেও বলেছেন। কিন্তু এর পরও গ্রামবাসীরা এখনো পানির নিচে।
এই বিষয়ে মীরসরাইয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়া আহমেদ সুমন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সরেজমিনে গিয়ে এ সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।
৫নং ওচমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের তৈরি এবং সরকারি খাল দখল করে বাঁধ তৈরির কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী দখলদারদের কারণে এই সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য দখলদারদের কাছ থেকে খাল দখলমুক্ত করতে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।