সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

মানুষ হত্যাকারীদের সাথে কোন সংলাপ হবে না : তোফায়েল

image_193631.sangsod
রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, জঙ্গি, নাশকতাকারী, শিশুসহ নিরীহ মানুষ হত্যাকারীদের সাথে কোন সংলাপ হবে না।
তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া ভুল করেছেন। এর পর ২০১৯ সালে এ সংসদের মেয়াদ পূর্তির ৯০ দিন পূর্বের যে কোন দিন পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে কোনো নির্বাচন এ দেশে হবে না।
তিনি আল-কায়দা প্রধান জাওয়াহিরির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আল-কায়দার সাথে হাত মিলিয়ে এদেশে সন্ত্রাসী জঙ্গী কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
গত ১৯ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনের শুরুর দিন সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সংসদে ভাষণ দেন।
গত ২০ জানুয়ারি চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করলে সরকারি দলের ডা. দীপু মনি তা সমর্থন করেন।
রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আজ ২২তম দিনে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক, সরকারি দলের আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বেগম সিমিন হোসেন রিমি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, গোলাম রাব্বানী, এডভোকেট নাভানা আক্তার ও ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে তখন সেই উন্নয়নের চাকা পেছনের দিকে ঠেলে দিতে বেগম খালেদা জিয়া হরতাল-অবরোধের নামে পেট্রোল বোমা দিয়ে শিশুসহ নিরীহ খেটে-খাওয়া মানুষকে হত্যা করছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতা পূর্ব ও স্বাধীনতা-উত্তর অনেক আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে। কখনো পেট্রোল বোমা দিয়ে নিরীহ মানুষকে খুন করা হয়নি। এটা বর্বর দস্যুদের কাজ। যখন আল-কায়েদা প্রধান আল জাওয়াহিরি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তাদের নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত করা হচ্ছে। ঠিক এর পরেই বাংলাদেশে আজ জঙ্গি ও নৈরাজ্য কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ থেকে প্রমাণ হয় বেগম খালেদা জিয়া আল-কায়েদার সাথে হাত মিলিয়ে আইএস, তালেবানদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এসব করছে।
তিনি বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে বলেন, কোথায় হরতাল কোথায় অবরোধ সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছে। এমনকি সব কল-কারখানায় স্বাভাবিক উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। শুধু বোমা মেরে নিরীহ মানুষদের হত্যা করা হচ্ছে।
তোফায়েল আহমেদ স্বাধীনতার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তখন বলা হয়েছিল বাংলাদেশ বিশ্বের সাহায্য ছাড়া চলতে পারবে না। হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন বাংলাদেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি। আজ বঙ্গবন্ধুর আদর্শে তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা সবক্ষেত্রেই এগিয়ে নিয়ে তাদের সেই মন্তব্যকে অসত্য প্রমাণ করেছেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪৩ বছরে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের ভিত্তিকে বিস্ময়কর অবস্থানে পৌঁছেছে। উন্নয়নের সব সূচকেই ঊর্ধ্বগতি। খাদ্য ঘাটতির দেশ বাংলাদেশ এখন খাদ্য রফতানির দেশে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের রফতানি আয় ৩০ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৩ বিলিয়ন ডলার। রেমিটেন্স ২৫ বিলিয়ন ডলার।
তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদন ২০০৬-০৭ সালের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই সময় খাদ্য উৎপাদন ছিল ২৭৮ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটি ৮২ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। ২০০৬-০৭ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। বর্তমানে ১৩ হাজার ২৮৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অর্থনীতিতে সে সময় শিল্প খাতের অবদান ছিল ২৫ শতাংশ। বর্তমানে ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ। সে সময়ে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। বর্তমানে বাজেট ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। এভাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচনসহ সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সামাজিক ক্ষেত্রে সবখাতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশে এ অগ্রগতি আজ জাতিসংঘসহ সারা বিশ্বে স্বীকৃত। এ ধারা অব্যাহত রেখে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, যে মুহূর্তে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১ অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে সে সময় বেগম খালেদা জিয়া চরম নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিচ্ছেন। এত নিষ্ঠুরতা, জঙ্গি কার্যক্রম, নৈরাজ্য চালিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রগতির যাত্রা ব্যাহত করার ক্ষমতা কারো নেই।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, শিল্প কারখানায় শিশু শ্রম বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ স্বাস্থ্যসম্মত ও শ্রম বান্ধব পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ফলে দেশের শিল্প সেক্টরে শৃংখলা ফিরে এসেছে।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনকে প্রতিহত করার জন্য ২০ দল এমন কোন কাজ নেই যা তারা করেনি। সংবিধান সম্মতভাবে ওই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই নির্বাচনকে বাতিল করে আরেকটি নির্বাচন দিতে হবে এর কোন যৌক্তিকতা নেই। এই দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট পেট্রোল বোমা মেরে শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। অসংখ্য মানুষ আগুনে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তিনি পেট্রোল বোমা বন্ধে মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানান।
ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের দিকদর্শন।
তিনি বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে বলেন, দেশের মানুষের জন্য তার কোন মমতা নেই। এদেশের মানুষের জন্য যার মমতা নেই, তার এই দেশে থাকার কোন অধিকার নেই। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে দেশে গণজাগরণের বীজ বপণ হচ্ছে। যা একদিন বিস্ফোরণ ঘটবে, এতে বেগম খালেদা জিয়া ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাবে।
সরকারি দলের অন্য সদস্যরা বলেন, বিএনপি দেশে জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করতে চায়। এটা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধেই নয়, এটা দেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র।
উৎস- কালেরকন্ঠ