সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

ভারতকে ক্রিকেট শেখালো নিউজিল্যান্ড

ক্রীড়া প্রতিবেদক : তৃতীয় ম্যাচটির জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতেই পারে ভারত। কেননা ম্যাচটি হারতে হারতে টাই হয়ে গিয়েছিল। কিছুটা কৃতিত্ব রবীন্দ্র জাদেজাকে দিতেই হবে। শেষ মুহূর্তে ওমন ব্যাটিং করে দলকে ম্যাচে জিইয়ে রাখা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। সেই যাই হোক পঞ্চম ও শেষ ম্যাচের পর ওই তৃতীয় ম্যাচটিই নিউজিল্যান্ড সমর্থকদের গলায় কাঁটার মতো বিধছে। কারণ ম্যাচটি টাই না হলে হোয়াইটওয়াই যে হতে হতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতকে।

হোয়াইটওয়াশের লজ্জা থেকে বাঁচতে আর নিজের দেশের ক্রিকেটভক্তদের একটি স্বস্তির বাতাস দিতে মাঠে নেমেছিল মাহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত।
ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং করতে নিউজিল্যান্ড রস টেলরের সেঞ্চুরি আর কেন উইলিয়ামসনের ৮৮ রানের দুটো ইনিংসের সুবাদে করে ৫ উইকেটে ৩০৩ রান। অপরদিকে মাত্র ৭৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসা ভারত শেষ পর্যন্ত ২১৬ রানে অলআউট হলো। লজ্জাজনক পরাজয়, মাত্র কদিন আগে ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা ভারত কদিন আগে বাংলাদেশের কাছে ধবলধোলাই হওয়া ৭ নম্বর দলটির কাছে সিরিজে একেবারে নাস্তানাবুদ হলো।
নিকট অতীতে কোনো সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে ভারত সর্বশেষ হেরেছে ২০০৬ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। সেবার চার ম্যাচে ধবলধোলাই হয়েছিল ভারত। ১৯৮৩ এবং ১৯৮৯ সালে ভারতকে ৫-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথমবার ভারতে এসে, দ্বিতীয়বার নিজেদের দেশে। এর মধ্যে ১৯৮৩ সালের ভারত সফরের সেই ধবলধোলাইকে মনে করা হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ ফাইনালে হেরে যাওয়ার নির্মম প্রতিশোধ!
এসবের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের কাছে ভারতের এই পরাজয়ের লজ্জার তুলনা হয় না। সেই লজ্জা থেকে বাঁচাতে আজও প্রায় নিঃসঙ্গ লড়াই করেছেন ফর্মে থাকা বিরাট কোহলি। তাঁর ৮২ রান বাদে ভারতের ইনিংসে আর কোনো ফিফটিই নেই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭ করেছেন ধোনি।
৪১ রানে নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনারকে তুলে নিয়ে ভারতের বোলাররা বেশ ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু সিরিজে উইলিয়ামসের টানা পঞ্চম ফিফটির ইনিংস, টেলরের টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, তৃতীয় উইকেটে এই দুজনের ২৫.১ ওভার স্থায়ী ৬.০৩ করে ওভারপিছু রান তোলা ১৫২ রানের জুটিটা ভারতকে ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকে দেয়। উইলিয়ামসন শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরিটা পেলেন না। তবে ইয়াসির হামিদের গড়া পাঁচ ম্যাচের সিরিজের প্রতিটিতে কমপক্ষে ফিফটি করার বিশ্ব রেকর্ডটি ছুঁলেন।
এই দুজনের গড়ে দেওয়া ভিত্তির ওপর রানের চাকা শেষ দিকে বন বন করে ঘুরিয়েছেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, জেমস নিশমরা। টেলর নিজেও ৪৮ ওভার পর্যন্ত ছিলেন উইকেটে। শেষ ১০ ওভারে ৯১ রান তুলেছে নিউজিল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ডের শেষ আর ভারতের শুরুটা ছিল একেবারেই উল্টোপথের যাত্রা যেন। বিশ্বের ‘সেরা’ ব্যাটিং লাইনআপ এদিন ৩০৪ রানের লক্ষ্যের কথা ভেবেই যেন জবুথবু হয়ে যায়। প্রথম ১০ ওভারে আইপিএলের মারকাটারি ক্রিকেটের জনক ভারত আদ্দিকালের টেস্ট ঘরানার ব্যাটিং করেছে। তুলেছে মাত্র ২০ রান। রোহিত শর্মা আর শিখর ধাওয়ানরা সাপের ফণা তুলে শরীর লক্ষ্য করে ধেয়ে আসা শর্ট বলের ভয়েই যেন কাতর!
ইনিংসের প্রায় মাঝপথে, ২৪ ওভার শেষে স্কোরটা দেখে মনে হচ্ছিল, ভারত নয়, যেন ব্যাটিং করছে পাপুয়া নিউগিনি। ততক্ষণে ৪ উইকেটে মাত্র ৭৮ তুলেছে ভারত। রাইডু আর ধোনিকে নিয়ে কোহলি ঘুরে দাঁড়ানোর একটা চেষ্টা চালিয়েছিলেন বটে। এই দুই জুটিতে ১১৫ রানও যোগ হয়েছে। কিন্তু এরপর ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ জুটিটা ৩৪ রানের, সেই জুটিটাও হয়েছে নবম উইকেটে—সামি আর ভুবনেশ্বর কুমারের মধ্যে। এটাও তো ভারতের তারকা ব্যাটসম্যানদের জন্য নিদারুণ লজ্জার।
অভিষেকেই মাত্র ৩৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন ম্যাট হেনরি। ম্যাচ সেরা অবশ্য টেলরই।