রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

ভাগ্য নিয়ে খেলা আর নয় দেশ চলবে সংবিধানেই

3_118565

রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে অনেক খেলা হয়েছে আর নয়। সংবিধান অনুযায়ীই দেশ চলবে। তিনি বলেন, সহিংস আন্দোলন মেনে নেয়া হবে না। তিনি বিদেশী গণমাধ্যমে কথা বলার আগে আয়নায় নিজের চেহারা দেখার জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান। খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ওপর দোষ চাপানোর আগে আয়নায় আগে নিজের চেহারা দেখুন। আপনারা ক্ষমতায় থাকতে মানুষ হত্যা করেন, বিরোধী দলে থাকলেও হত্যাকাণ্ড চালান। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার দশম জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে সমাপনী ভাষণ দিচ্ছিলেন।তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এদেশে যাতে নির্বাচন না হয়, দেশ ও গণতন্ত্র ধ্বংস হয়, দেশ অগণতান্ত্রিক পথে যাক- সেটাই চেয়েছিলেন। আমরা তাদের সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবেলা করে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে সুসংহত ও অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমার চোখে অপরাধী- অপরাধীই। সে যেই হোক না কেন, তার বিচার হবেই হবে। অনেকেই বলেন, দেশে সুশাসন নেই। কিন্তু তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, দেশে সুশাসন না থাকলে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকত না। অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েই আমরা এগিয়ে চলছি। তবে কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। যেমন ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, লক্ষ্মীপুরে। তবে সরকার কিন্তু বসে নেই। অপরাধীরা ধরা পড়ছে। তাদের বিচার শুরু হয়েছে। বিচার হবে। আইন তার আপন গতিতেই চলবে। কেউ রেহাই পাবে না। সে যে দলেরই হোক।ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় প্রকাশিত খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, সাক্ষাৎকারে তিনি সব দায় আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেছেন। সংখ্যালঘুদের নিয়ে মায়াকান্না করেছেন। অথচ তিনি ক্ষমতায় থাকার সময় এদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ও মুসলমান কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ রেহাই পায়নি। সব ধর্মের মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে তারা নির্যাতন ও হত্যা করেছে। দেশের মানুষ বিএনপি-জামায়াতের এমন নিষ্ঠুরতার কথা কোনোদিন ভুলবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে না এসে বিএনপি নেত্রী সব হারিয়ে এখন মিথ্যা কুৎসা রটিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে এভাবে মানুষ হত্যা করে দেশের কী লাভ হল? আপনি কী অর্জন করেছেন? আপনি নির্বাচনে না এসে দেশের কষ্টার্জিত গণতন্ত্র ও দেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আপনার সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।
এরশাদকে উদ্দেশ করে এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আমরা অংশ নিলাম। কিন্তু ওই নির্বাচনে কোনো দলই সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ তখন রাষ্ট্রপতি। তিনি তখন আমাদের ডেকেছিলেন, বঙ্গভবনে আলোচনা হয়েছিল। ইচ্ছা করলে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারতাম। কিন্তু নীতিগতভাবে আমি ক্ষমতা গ্রহণ করতে চাইনি। যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলাম, তাদের নিয়ে একটি দুর্বল সরকার গঠন করতে চাইনি। তিনি বলেন, ওই সময় বিএনপি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করল। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে প্রথম নির্যাতন চালাল জাতীয় পার্টির ওপর। আমার প্রশ্ন- যে ভাবী সাহেবার (খালেদা জিয়া) জন্য আপনি (এরশাদ) এত কিছু করলেন, গাড়ি দিলেন, বাড়ি দিলেন। সন্তানদের পড়ালেখার ভরণপোষণের টাকা দিলেন। এত চেষ্টা করলেন ভাবী সাহেবার মন পেতে কিন্তু তিনিই (খালেদা জিয়া) ক্ষমতায় গিয়ে আপনাকে, আপনার স্ত্রীকে আপনার সরকারের মন্ত্রীদের গ্রেফতার করলেন। আমি আপনাকে (এরশাদ) বলব, যদি কোনো দিন সুযোগ পান তাহলে ভাবী সাহেবাকে জিজ্ঞেস করবেন কেন আপনি মন পেলেন না? প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসন জারি করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেন জেনারেল জিয়া। বঙ্গবন্ধুর খুনি মীরজাফর মোশতাক এই জিয়াকেই সেনাবাহিনী প্রধান করেছিল। বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি ফারুক-রশিদও বিবিসিতে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জেনারেল জিয়া তাদের সঙ্গে ছিল।রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েমকে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে জিয়া হাজার হাজার সেনাবাহিনীর অফিসার ও সদস্যকে হত্যা করে। একমাত্র বিমান বাহিনীতেই ৫৬২ জন অফিসারকে হত্যা করেন তিনি। বিএনপি নেতারা দাবি করেন তারা নাকি গণতন্ত্র দিয়েছেন! জিয়া প্রতি রাতে কারফিউ দিয়ে দেশ চালিয়েছেন। কারফিউ দিয়ে দেশ চালানো কী গণতন্ত্রের নমুনা? তিনি বলেন, জেনারেল জিয়ার পথ অনুসরণ করে জেনারেল এরশাদও তিন মাসের মাথায় রাষ্ট্রপতি আহসান উদ্দিন চৌধুরীকে হঠিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। বাংলাদেশে অস্ত্র, সন্ত্রাস, কালো টাকা, ঋণখেলাপি ও নির্বাচনে কারচুপি-ডাকাতি সামরিক স্বৈরাচাররাই সৃষ্টি করেছিল। তারা অবৈধ ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতেই ভোট কারচুপি ও ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে নতুন দল সৃষ্টি করেছিল। তিনি বলেন, আমরা সব সময় গণতন্ত্র চেয়েছি, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছি।