প্রশাসনিক ব্যস্ততা তাঁকে ছুটি দেয়নি ঈদের দিনও। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যানকে স্বাগত জানাতে ছুটতে হয়েছিল বিমানবন্দরে। আর কাল ছুটি শেষের অফিস খোলার প্রথম দিনে তো ওই ‘ঝক্কি’র চেয়েও বড় ধাক্কার মুখোমুখি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী। অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের দায়ে সোহাগ গাজীকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করার বার্তাটি যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল থেকে পেলেন কালই! একই কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং করতে পারবেন না জিম্বাবুয়ের অফস্পিনার প্রসপার উতসেয়াও।
গতকাল আইসিসি একটি ই-মেইল বার্তায় জানিয়েছে, ‘বোলিং অ্যাকশন পর্যবেক্ষণের পর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল নিশ্চিত হয়েছে, বাংলাদেশের সোহাগ গাজী ও জিম্বাবুয়ের প্রসপার উতসেয়ার বোলিং অ্যাকশন অবৈধ।’ বাংলাদেশের ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিশ্বাস ছিল, সম্ভবত
সোহাগের একটু জোরের ওপর করা বলটা নিয়ে আপত্তি করবেন আইসিসির বিশ্লেষকরা। কিন্তু কাল সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘তাঁদের (সোহাগ ও উতসেয়া) সব ডেলিভারির সময়ই কনুই ১৫ ডিগ্রির চেয়ে বেশি ভাঁজ হয়।’ এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং করতে পারবেন না এ দুজনের কেউই। তবে প্রেরিত বার্তাতেই সোহাগের জন্য মৃদু আশার আলো দেখিয়েছে আইসিসি, ‘দুজনই চাইলে পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করতে পারবেন।’ এ ক্ষেত্রে আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশনের ২.৪ ধারা অনুসরণ করতে হবে, যেখানে বলা আছে, অভিযুক্ত খেলোয়াড় যেকোনো সময় পুনর্মূল্যায়ন করতে পারবেন, তবে সেটিও উতরাতে না পারলে আর কখনোই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং করতে পারবেন না অভিযুক্ত বোলার।
এ ধারা মেনেই এগোনোর আভাস মিলেছে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর কণ্ঠে, ‘আইসিসি জানিয়েছে, সোহাগের কনুই ১৫ ডিগ্রির চেয়ে বেশি বেঁকে যায়। যে কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওকে এখন আর খেলানো যাবে না।’ পরবর্তী করণীয় সম্পর্কেও ধারণা দিয়েছেন তিনি, ‘ওর বোলিং অ্যাকশন ঠিক করাতেই আমাদের মূল মনোযোগ। ত্রুটি যেহেতু ধরা পড়েছে, এখন সেটি সারাতে হবে। আবার পরীক্ষা দিয়ে যদি কনুই বাঁকা ১৫ ডিগ্রির ভেতরে নিয়ে আসা যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবে সোহাগ।’ উল্লেখ্য, আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আম্পায়াররা প্রশ্ন তুলেছিলেন এই অফস্পিনারের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে। যে কারণে টেস্ট সিরিজ না খেলিয়ে দেশে ফেরত আনা হয় সোহাগকে। এরপর সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে পাঠানো হয় কার্ডিফে। সেখানকার মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি ল্যাবে ১৯ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা করা হয় বোলিং অ্যাকশন। যার ফল আনুষ্ঠানিকভাবে এল গতকাল।বাংলাদেশের জার্সিতে ১০ টেস্ট ও ২০ ওয়ানডে খেলা সোহাগ বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পরও ছিলেন নির্ভার। ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরুর পর দুই বছর যেমনভাবে বোলিং করেছি, এবারও তাই। তো আগে যদি আম্পায়ারদের কাছে আমার অ্যাকশন শুদ্ধ মনে হয়, এখন কেন সেটি অশুদ্ধ হবে’- সোহাগের এমন কথার ভাঁজে আত্মবিশ্বাসের ঝিলিক স্পষ্ট। সতীর্থ আবদুর রাজ্জাকও ভরসা দিয়েছিলেন তাঁকে। অবৈধ অ্যাকশনের জন্য নিষিদ্ধ ওই বাঁহাতি স্পিনারের চেয়ে তাঁর অ্যাকশন তুলনামূলক ভালো বলেই ছিল আশা। এমনকি কার্ডিফে পরীক্ষা দিয়ে আসার পরও এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন না সোহাগ। বরং আইসিসির সবুজ সংকেত পেয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের খেলার জন্য ছিলেন মুখিয়ে।কালকের আইসিসির ই-মেইলটি তাই সোহাগের জন্য বড় এক ধাক্কা। তাঁর নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য। অবশ্য আইসিসির আইন অনুযায়ী ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে বাধা নেই সোহাগ গাজীর। কারণ ২.৪ ধারাতেই বলা আছে, সংশ্লিষ্ট বোর্ড চাইলে অভিযুক্ত ক্রিকেটারকে ঘরোয়া আসরে খেলার অনুমতি দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলায় আইনি কোনো বাধা নেই সোহাগের সামনে।
অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ এই অফস্পিনারের খেলা হচ্ছে না নিশ্চিতভাবে। ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপে অংশগ্রহণও পড়ে গেল হুমকির মুখে। আর শুধু কি সোহাগ? ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তো আম্পায়ারদের প্রশ্নের মুখে পড়েছিল আল-আমিন হোসেনের অ্যাকশনও। সতীর্থ নিষিদ্ধ হওয়ায় এই পেসারের পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যাবে নিশ্চিত।
আর বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে আশঙ্কা, আইসিসির অবস্থান। আগে বোলিং অ্যাকশনের বিষয়ে যতটা ‘উদার’ ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা, এখন ততটাই ‘কঠোর’! যে কারণে আগের অ্যাকশনে বোলিং করেও এখন পার পাচ্ছেন না সোহাগ। আল-আমিনও কি পাবেন?