রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন অবৈধ ঘোষিত হলে শূন্যতা তৈরি হবে

28420_f4

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত ঘোষণা সংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৯ ধারা অবৈধ ঘোষণা করা হলে শূন্যতা তৈরি হবে বলে মত দিয়েছেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার মতে এ ধারা অবৈধ ঘোষিত হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৪ সংসদ সদস্যও আইনের চোখে বৈধ বলে বিবেচিত হবেন না। তিনি বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণার বিধান অবৈধ নয়, অসাংবিধানিকও নয়। বিশ্বের বহু দেশেই এ বিধান রয়েছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই জন প্রেসিডেন্টও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণার বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের শুনানিতে অংশ নিয়ে গতকাল তিনি এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজাও এদিন শুনানি করেন। এ মামলায় আদালতে এখন পর্যন্ত পাঁচ জন এমিকাস কিউরি মত দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এবং বদিউল আলম মজুমদার ১৫৪ সংসদ সদস্যের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা অবৈধ বলে মত দেন। তাদের নির্বাচিত ঘোষণা বৈধ বলে মত দিয়েছেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি এবং ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। গতকালের শুনানিতে অংশ নিয়ে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুরুতে রিট আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ১৫৪ সংসদ সদস্যের পদ চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে অথচ তাদের বিবাদী করা হয়নি। এ সময় আদালত বলেন, মি. এটর্নি জেনারেল ১৫৪ জনের পদ তো চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। তখন এটর্নি জেনারেল বলেন, আলটিমেটলি ১৯ ধারা অবৈধ ঘোষণা করা হলে ১৫৪ জন তো আইনের চোখে বৈধ হবেন না। এটা জনস্বার্থ মামলা হতে পারে না। অসৎ উদ্দেশে এ রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। এটর্নি জেনারেল ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের পূর্বে এবং ভোটের দিন তখনকার বিরোধী দলের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের ব্যাপারে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, রোকনউদ্দিন মাহমুদ যথার্থই বলেছেন ওই সময় যদি নির্বাচন না হতো তাহলে অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতা দখল করে নিতো। এটর্নি জেনারেল বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৯ ধারা কিছুতেই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। কেউ প্রার্থী হতে না চাইলে কাউকে তো জোর করে প্রার্থী বানানো যাবে না। বাংলাদেশের ইতিহাসে অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনের উদাহরণ দেন এটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন, ১৯৮৬ সালের নির্বাচনের পর ৮৮ সালেই আবার নির্বাচন হয়েছিল। সে নির্বাচন হয়েছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ার কারণেই দ্রুত আরেকটি নির্বাচন হয়েছিল। আদালত কিন্তু নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করেনি। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি নির্বাচনও গ্রহণযোগ্য হয়নি। যে কারণে দ্রুত আরেকটি নির্বাচন হয়। কিন্তু ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে অবৈধ বলা যাবে না। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিধানের বৈধতা নিয়ে গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারি করেছিল। জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার আবদুস সালামের দায়ের করা রিট আবেদনে হাইকোর্ট ওই রুল জারি করে। রিট আবেদনে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৯ ধারা অনুসারে, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর বা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর একক প্রার্থী থাকলে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা যায়। এক্ষেত্রে ‘না’ ভোটের কোন বিধান রাখা হয়নি। অথচ সংবিধান স্পষ্ট বলছে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সংসদ গঠিত হবে। জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ ছাড়া কাউকে নির্বাচিত ঘোষণা করা সংবিধানের পরিপন্থি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৯ ধারা সংবিধানের ৭, ১১, ২৭, ৩১, ৬৫ (২), ১২১ ও ১২২ (২) অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে।’ সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিন শত সদস্য লইয়া এবং এই অনুচ্ছেদের (৩) দফার কার্যকরতাকালে উক্ত দফায় বর্ণিত সদস্যদিগকে লইয়া সংসদ গঠিত হইবে; সদস্যগণ সংসদ-সদস্য বলিয়া অভিহিত হইবেন।’ ১২২(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকার-ভিত্তিতে সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’ রিট আবেদনের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম।