রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ পাকিস্তান

4_141873

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় তিনজন নিহত ও চার শতাধিক বিক্ষোভকারী আহত হয়েছে। প্রায় ১০০ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে নওয়াজের বাসভবন অভিমুখে শুরু হওয়া বিক্ষোভ রোববারও অব্যাহত ছিল। বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ইসলামাবাদের সরকারি বাসভবন ছেড়ে লাহোরে পারিবারিক বাসভবনে গেছেন। এ দিন বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে দেশটির তথ্যমন্ত্রী পারভেজ রশিদ বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সরকার বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আবারও আলোচনা শুরু করতে চায়। তবে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইমরান খান। এ দিকে দেশের সার্বিক আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে আজ কমান্ডারদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন সেনাপ্রধান জেনারেল রাহেল শরিফ। ডন, এএফপি, আল জাজিরা ও জিও টিভিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এসব তথ্য দিয়েছে।
নওয়াজ শরিফের পদত্যাগের দাবিতে ১৫ দিন ধরে আন্দোলন করছে ইমরান খানের দল পিটিআই ও ধর্মীয় নেতা তাহির-উল-কাদরির দল পিএটি। দুই সপ্তাহ ধরে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট ভবনের সামনে সুরক্ষিত রেড জোনে। এর মধ্যে সরকারের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনা হলেও তা ব্যর্থ হয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ।
রোববার সকালে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও লাঠিপেটা করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় দু’পক্ষের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংসদ ভবন এভিনিউতে টানা প্রায় ১৫ ঘণ্টা সংঘর্ষ চলে। ইসলামাবাদ পুলিশ-প্রধান খালিদ খাত্তাক বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা মিছিলসহকারে শরিফের সরকারি বাসভবনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীদের অনেকের কাছে কুড়াল, হাতুড়িসহ দেশীয় অস্ত্র ছিল এবং আমি নিশ্চিত তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল। তবে আমরা তা দেখিনি। তিনি জানান, সংঘর্ষে ৯২ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
পাকিস্তান ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স হাসপাতালের মুখপাত্র ড. ওয়াসিম খাজা জানান, সংঘর্ষের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিক্ষোভকারী নাভিদ রাজ্জাক মারা গেছেন। তিনি তাহির-উল-কাদরির দলের সমর্থক ছিলেন। বাকি দু’জন সংঘর্ষে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর মারা যান। তিনি জানান, কমপক্ষে ৪৮১ বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১১৮ জন নারী ও ১০ শিশু রয়েছে।
এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় পার্লামেন্ট ভবনের সামনে থেকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে অগ্রসর হতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন ইমরান ও কাদরি। প্রায় আড়াই হাজার বিক্ষোভকারী নওয়াজ শরিফের বাসভবনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। তাদের সঙ্গে ইমরান খান ও তাহির-উল-কাদরিও ছিলেন। এর পর মধ্যরাতে তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ইসলামাবাদ, লাহোর ও করাচি শহরে। বিক্ষোভকারীরা নওয়াজ শরিফের বাসভবনের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের প্রথমে বাধা দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস ও একপর্যায়ে গুলি ছোড়ে। বিক্ষোভকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়তে থাকলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
নওয়াজ ও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের হুমকি দিয়েছেন ইমরান খান। তিনি বলেন, নওয়াজ সরকারের সময় ফুরিয়ে গেছে। আমি সব পাকিস্তানিকে বলব, এটা কোনো সাংবিধানিক সরকার নয়, এই খুনি সরকারের বিরুদ্ধে তোমরা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়। আমরা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। পিটিআই দলের টুইটারে পোস্ট করা বার্তায় ইমরান বলেছেন, যে পরিমাণ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছ, তা অবৈধ ও হত্যাচেষ্টার শামিল। আমরা হত্যার অভিযোগে এফআইআর করব। বিরোধী পক্ষকে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে জিও টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী পারভেজ রশিদ বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সরকার বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে চায়। তিনি বলেন, সরকার এ সংঘর্ষ শুরু করেনি। তারা (বিক্ষোভকারী) গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করলে এ ঘটনা ঘটে। তিনি আরও বলেন, তারা বন্দুক ঠেকিয়ে তাদের দাবি আদায় করতে চায়। কিন্তু সরকার আলোচনার সব দরজা খুলে রেখেছে। এদিকে পিএমএলের (এন) একটি সূত্র বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেছে, বিক্ষোভকারীদের ভয়ে শুক্রবার ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ছেড়ে লাহোরের বাসভবনে গেছেন নওয়াজ। ব্যক্তিগত কর্মকর্তারাও তার সঙ্গে গেছেন। নওয়াজের ভাই পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও সেখানে বাস করেন। লাহোরেও নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। আন্দোলনকারীদের না সরান পর্যন্ত ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ফিরবেন না তিনি। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে শরিফ ও তার পরিবারের সদস্যরা সড়কপথে ভ্রমণ করবেন না।
সামরিক হস্তক্ষেপ? : পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকটে সেনা হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা জোরদার হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। আজ সেনা কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠক আহ্বান করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল রাহেল শরিফ। এ ব্যাপরে আইএসপিআর মুখপাত্র জানিয়েছেন, রাহেলের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশের সার্বিক আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে রাজধানী ইসলামাবাদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে এ বৈঠক হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নওয়াজ যদি এ সংকট ভালোভাবে উতরাতে ব্যর্থ হন, তাহলে পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবার সেনাবাহিনী সামনে আসছে এটা এক রকম নিশ্চিত। তবে বিশ্লেষক মোশাররফ জাইদি বলেন, বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়া ইমরান ও কাদরির পক্ষে খুব সহজ হবে না। তাই তারা সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতার দিকেই ঝুঁকবে বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, তারা সেনাবাহিনীর মাধ্যমে নওয়াজকে পদত্যাগে বাধ্য করাতে পারে।