রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রশ্ন

image_102380.primary edu

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষার মানের যে অগ্রগতি হচ্ছে সেটা উৎসাহব্যঞ্জক।তবে প্রাথমিক শিক্ষাখাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংখ্যা দিয়ে বিবেচনা করলে দেখা যাবে উন্নতি হয়েছে ঠিকই, তবে যে গতিতে হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি।অবশ্য গ্রামীণ পর্যায় থেকে শিক্ষকরা বলছেন, ঘাটতির অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে তাদের কিছু করার নেই।বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করা শিক্ষার্থীদের এক তৃতীয়াংশের মৌলিক অক্ষর ও সংখ্যা জ্ঞানে দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে।বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার মান এবং উন্নয়ন নিয়ে বিস্তর কথা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে নানা তথ্য উপাত্ত হাজির করে এক্ষেত্রে অনেক সাফল্যের কথাও বলা হয়েছে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রাথমিক শিক্ষার মান এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে? আর গ্রামীণ এলাকায় এর চিত্রটিই বা কেমন?
গাইবান্ধার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নার্গিস সুলতানা বলেছেন, তার স্কুলসহ গ্রাম পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে যথেষ্ট সরকারি উদ্যোগ রয়েছে। তবে তারপরও চিত্রটি কিন্তু খুব একটা ভাল নয়।
তিনি বলেন, “স্কুল থেকে বিনামূল্যে তাদেরকে যা দিচ্ছি ঐটুকই তারা পাচ্ছে। তার বাইরে তারা আর কোন সুযোগ সুবিধা পায়না। ওরা আসলে, খাবার পাচ্ছে, টাকা পাচ্ছে। সেজন্য হয়তো আসছে। তবে শিক্ষিত হলে পরে তারা অনেক বড় কিছু হবে এমন আশা তাদের মধ্যে হয়তো সৃষ্টি হয়নি।”
“আমি যে বাচ্চাটিকে পড়াচ্ছি, দেখা গেলো হঠাৎ করে সে নেই। একেবারে এক মাস উধাও। ফলে এই একমাসে কিন্তু একটা বড় গ্যাপ হয়ে যায়।। পড়ে সেটা আর ঠিক হয় না।” বলেন তিনি।
বিশ্বব্যাংকের ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে স্কুলে ভর্তির হার বেড়েছে এবং এর মাধ্যমে নিরক্ষরতা দূরীকরণে অগ্রগতি হয়েছে।
তবে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর শিক্ষার্থীদের এক চতুর্থাংশ থেকে এক তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীর মৌলিক অক্ষর ও সংখ্যা জ্ঞানে দুর্বলতা থেকে যায়।
অবশ্য সরকারের পক্ষে বলা হচ্ছে, বর্তমানে মানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আকতার হোসেন বলেন, “বিগত পাঁচ ছয় বছরে এই সেক্টরে যে কাজ হয়েছে শিক্ষার গুণগত মানের ক্ষেত্রে তা বেশ উল্লেখ যোগ্য। বিগত ১৫ বছর আগে একজন ছাত্র বা ছাত্রী যে জ্ঞান অর্জন করতো এখন সেই তুলনায় সে অনেক বেশি জানে। সে তার পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে, ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সব দিক দিয়েই কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছে।”
সরকারের এমন বক্তব্যের সাথে একমত হলেও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলছেন, যে হারে এই উন্নতি হবার কথা ছিল ঠিক তেমনটা বাংলাদেশে ঘটেনি। তাছাড়া বাংলাদেশে যে হারে শিক্ষার্থী বাড়ছে সে হারে তাদের জন্য বরাদ্দ বাড়েনি।
অবশ্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বলছেন, সরকারি কার্যক্রম সত্বেও যেখানে যেখানে পরিস্থিতির উন্নতি করা প্রয়োজন সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এখন সরকারি কার্যক্রম চলছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত পুষ্টি, শিক্ষাদান পদ্ধতির মান বাড়ানো এবং শিক্ষাখাতে আর্থিক প্রণোদনা বৃদ্ধি করা দরকার।