সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিরীন ও সাবেরকে বরণ

image_142439.saber
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) চেয়ারম্যান ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সাবের হোসেন চৌধুরীকে বরণ করে নিয়েছে জাতীয় সংসদ। এসময় অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তারা বিশ্বের সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোর দু’টি বৃহত্তর সংস্থার প্রধানের পদে জয়লাভকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের আস্থা বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বাংলাদেশে জনগণের উদ্দেশে এই বিজয়কে উৎসর্গ করেছেন।
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বড় ধরনের দুটি বিজয়ে আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়। শুরুতে দুই বিজয়ীকে ফুলের তোড়া ও ক্রেস্ট দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া ও সংসদ সচিবালয়ের পক্ষে সিনিয়র সচিব আশরাফুল মকবুল তাদের বরণ করে নেন। তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংসদ নেতা ও প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ বক্তৃতা পর্ব শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সংসদ ভবন জুড়ে ছিলো চোখ ধাধানো আলোকসজ্জা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে পাঠানো অভিনন্দন বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বক্তৃতা করেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জেপি সভাপতি ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট গিবসন, ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনার সন্দ্বীপ চক্রবর্তী। সংসদ সদস্য তারানা হালিমের পরিচালনায় স্বাগত বক্তৃতা করেন চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। এসময় সংসদ উপনেতা বেগম সাজেদা চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদসহ মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, কূটনীতিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমূর্তি অনেক ভাল হয়েছে। স্পিকার শিরীন শারমিন ও সাবের হোসেন চৌধুরী বিজয় সেটিই প্রমাণ করেছে। তিনি আরো বলেন, দেশ এখন শান্ত আছে। জনগণ শান্তিতে বসবাস করছে। বাংলাদেশের মাটিতে শিক্ষিত ও যোগ্য ব্যক্তি আছেন তাদের নেতৃত্ব ছিনিয়ে আনার মাধ্যমে এটি প্রমাণ হয়েছে। এবিজয় দেশের ১৬ কোটি মানুষের বিজয়।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন বলেন, আন্তর্জাতিক দুটি সংগঠনের প্রধানের পদ পাওয়া, বিশেষ করে ১৬৬টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত আইপিইউ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। এ বিজয় বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে অনন্য গৌরব। এই বিজয় বাংলাদেশের জনগনের বিজয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের বিজয়। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এখন আর পৃথিবীর বুকে অবহেলিত একটি দেশ নয়। বাংলাদেশ এখন বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর্যায়ে পেৌঁছে গেছে। আগামীতে এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, সিপিএ চেয়ারপার্সন হিসেবে স্পিকারের নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে শুধুমাত্র প্রথম বাঙালি কিংবা বাংলাদেশি নয় প্রথমবারের মতো কোনো নারী এই পদে আসীন হলেন। এবার বিশ্বের অন্যতম দুটি বৃহৎ সংগঠনের প্রধানের পদ ছিনিয়ে আনা হয়েছে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস আর স্থির লক্ষ্যের কারণে।
সভাপতির বক্তব্যে ডেপুটি স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কুটনৈতিক সফলতায় বাংলাদেশ একর পর এক অর্জন করে চলেছে। এটি দেশের বিজয়, জাতীয় বিজয়। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, একটি বৃহত্ দল এই বিজয়ে অভিনন্দন জানাননি। এটি তাদের হীনমন্যতা। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু দেশের অর্জন নিয়ে মতপার্থক্য উর্ধ্বে উঠে আসা জরুরি। রাজনীতিতে প্রতিহিংসা বর্জন করার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠান আয়োজনে বিশৃঙ্খলা : প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে করা এই অনুষ্ঠানের সর্বত্র ছিলো বিশৃঙ্খলা। অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র ঠিকমত বিলি করা হয়নি। অধিকাংশ গণমাধ্যম কর্মীর কাছে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছায়নি। তাই কেউ কেউ অনুষ্ঠানে স্থলে যেতে পারেননি। বিশৃঙ্খলার কারণে অনেক মন্ত্রী-এমপিকে এগেইট ওগেইট ঘুরতে দেখা গেছে। হয়রানির কারণে কেউ কেউ ফিরেও গেছেন। অনুষ্ঠানস্থলে যেতে না পারায় সংসদ সচিবালয়ের একাধিক কর্মচারীকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। আয়োজকরা তাদের পছন্দেও ব্যক্তিদেরই বেশি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বক্তৃতার সুযোগ পাইনি দু’টি দল : দশম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অধিকাংশই বক্তৃতার সুযোগ পেলেও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ও বাংলাদেশ ন্যাশনালষ্টি ফ্রন্ট (বিএনএফ) এর কোন প্রতিনিধি বক্তৃতার সুযোগ পাননি। এনিয়ে অনুষ্ঠানস্থলেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে। মঞ্চের সামনে বসা অন্য এমপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জেপি’র দুজন সংসদ সদস্য। আমারাও দুইজন। তাহলে আমরা কেন সুযোগ পাবো না?
গানে সুর মেলালেন প্রধানমন্ত্রী-স্পিকার : অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন। তাদের গানের সুরে সুর মেলান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম, বেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সাবিনা ইয়াসমিনসহ দেশের খ্যাতিমান শিল্পীরা অংশ নেন।