আমাদের দেশে রোজায় ইফতারি হিসেবে তেলে ভাজা খাবারই বেশি চলে। একবার ভাজার পর ব্যবহৃত বাকি তেলটুকু রেখে দেওয়া হয় ভাজাপোড়ার কাজে ব্যবহারের জন্য। পরবর্তী সময়ে পুরনো সেই তেলের সঙ্গে চাহিদামতো মেশানো হয় নতুন তেল। এভাবেই চলতে থাকে নতুন আর পুরনো তেলের মিশেল। চলতে থাকে একই তেলে বারবার ভাজার কাজ। তেল পুড়তে পুড়তে পুরনো হতে থাকে। ঘরে একপর্যায়ে নতুন তেলে নতুন করে ভাজার কাজ শুরু হলেও বাইরে অর্থাৎ দোকানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরনো তেলে নতুন তেল মিশিয়ে ভাজার কাজ চলতেই থাকে।
অবাক ব্যাপার হলো, পুরনো তেলে ভাজা খাবার অনেকেরই প্রিয় এর বিশেষ সুবাসের কারণে। কিন্তু আমাদের অনেকেরই হয়তো জানা নেই, একই তেলে বারবার ভাজা খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ ক্ষেত্রে শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হচ্ছে বারবার ভাজা তেল। একই তেল বারবার গরম করলে তেলের স্বাভাবিক রাসায়নিক গুণের পরিবর্তন ঘটে। আপন বৈশিষ্ট্য হারিয়ে তেল ক্ষতিকর চরিত্র ধারণ করে। এতে তেলের মধ্যে এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, বারবার গরম করা তেলে কয়েকটি পলি নিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন তৈরি হয় যার মধ্যে বেনজোপাইরিনের মাত্রা খুব বেশি থাকে। এই বেনজোপাইরিন একটি ক্ষতিকর রাসায়নিক যৌগ। এটি কারসিনোজেনিক বা ক্যান্সারের উদ্রেককারী উপাদান হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ পুরনো তেলে ভাজা খাবার খেলে ক্যান্সার হতে পারে।
এ ছাড়া এ কারণে সৃষ্ট অন্যান্য পলি নিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বনগুলোও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর বেনজোপাইরিন। এ কারণে একই তেলে বারবার খাবার তৈরি না করাই ভালো। শুধু ক্যান্সারের ঝুঁকিই নয়, পুরনো তেলে তৈরি খাবার খেলে বদহজম, পেটে অস্বস্তি, পেটব্যথা হওয়ার মতো ঘটনা হরহামেশাই ঘটতে পারে। তা ছাড়া যাদের এক আধটু গ্যাসের সমস্যা কিংবা পেপটিক আলসার ডিজিজের সমস্যা আছে পুরনো তেলে তৈরি খাবার খাওয়ার পর তাদের সমস্যাটি প্রকট হতে পারে। বাঁধতে পারে নতুন রোগ। সুতরাং প্রতিদিন নতুন তেলে ঘরে তৈরি খাবার গ্রহণ করাই নিরাপদ। ডুবো তেলে রান্না না করে অল্প তেলে ভেজে রান্না করলে তেল উদ্বৃত্ত থাকবে না এবং পুরনো তেলে ভাজারও দরকার পড়বে না।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।