সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

পাসের হার বাড়িয়ে সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করছে

সরকার পরিকল্পিতভাবে পাসের হার বাড়িয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে নিজেদের সাফল্য তুলে ধরার জন্য পাসের হার জোর করে বাড়ানো হচ্ছে। ফলে এর প্রভাব পড়ছে উচ্চ শিক্ষায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী পাস করতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে দুর্নীতির আখড়া তৈরি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষা দিবস উপলক্ষে ‘শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ ও ছাত্ররাজনীতি’- শীর্ষক এ আলোচনা সভা আয়োজন করে নাগরিক ছাত্র ঐক্য। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ধূলায় মিশে গেছে। বর্তমান সরকার নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবি করে। অথচ এই সরকারের ৪ জন সচিব মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট জাল করেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বিদেশীদের দেয়া ক্রেস্টের স্বর্ণ চুরি করেছেন। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ নির্বাচন সংবিধানের বিরুদ্ধে। দেশের কৃষক-শ্রমিকরা এসব বোঝেন না। সরকার ভোটের হার নিয়েও মিথ্যাচার করেছে। প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা বলা শেখাচ্ছেন। এমনভাবে মিথ্যা বলা হয় যেন মানুষের বিশ্বাস হয়, সন্দেহ না হয়। সরকার দেশে একের পর নীতি বিবর্জিত কর্মকাণ্ড করছে উল্লেখ করে মান্না বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী পাসের হার বাড়াচ্ছেন। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের জোর করে পাস করাতে বলা হচ্ছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দুর্নীতির আখড়া হয়েছে। ইউজিসি’র চেয়ারম্যান নিজেই এটি স্বীকার করেছেন। ডাকসু নির্বাচন দিলে পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে দাবি করে মান্না বলেন, নয় বছরের স্বৈরশাসক এরশাদ দু’বার ডাকসু নির্বাচন দিয়েছিলেন। কারণ তার কোন সন্তান ছিল না। আমাদের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রী পরিকল্পিতভাবে ডাকসু নির্বাচন বন্ধ রেখেছেন। যেন সেখান থেকে কোন নেতৃত্ব তৈরি না হয়। নেতৃত্ব তৈরি হলে তাদের সন্তানরা আর নেতৃত্ব দিতে পারবেন না। নাগরিক ঐক্যের প্রধান উপদেষ্টা এসএম আকরাম বলেন, বর্তমান রাজনীতিবিদরা দেশের ভবিষ্যৎকে নিজের ভবিষ্যৎ মনে করেন না। তারা দেশে লুটপাট ও চাঁদাবাজি কায়েম করেছেন। তাদের পরিবার কোথায় থাকে এটা সবাই জানে। দেশে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন না কিনে সাবমেরিন কেনা হচ্ছে। অথচ গ্রামের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও শিক্ষা উপকরণের অভাব রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, যে ছাত্রসমাজ এক সময় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতো তারা এখন লুটেরা রাজনীতিবিদদের পক্ষেই স্লোগান দেয়। তারা এখন শাসক শ্রেণীর সকল দুষ্কর্মের পাহারাদারে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখন গণতন্ত্রের লেবাসে গণতন্ত্রের শত্রুরা দেশ শাসন করছে। এদের বিরুদ্ধে লড়াইটা অনেক কষ্টকর। সাপ্তাহিক সম্পাদক গোলাম মর্তুজা বলেন, দেশে অনেক সমস্যা রয়েছে কিন্তু কোন জায়গা থেকে প্রতিবাদ হচ্ছে না। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। কারণ তাদের ছাত্রসংগঠন কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না। সবচেয়ে খারাপ ছাত্ররা ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিচ্ছে। সম্প্রতি ২০ দলের হরতালে বিএনপি’র মাঠে না থাকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই হরতাল বিএনপি’র জন্য অনেক ক্ষতি করেছে। মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে বিএনপি আন্দোলন করতে পারবে না। আর বিএনপি’র নেতাকর্মীরা নিজেরাও আস্থা হারিয়েছেন। সাংবাদিক খায়রুল আলম বকুল বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির কালো অধ্যায় চলছে। ছাত্ররা লুটপাট, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। ছাত্রনেতৃত্ব বিকাশের পথ ছাত্রসংসদ নির্বাচন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আগে ছাত্র নেতাদের মূল্যবোধ ও আদর্শের বাইরে কিছু চাওয়া-পাওয়া ছিল না। নাগরিক ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক নাজমুল হাসানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।