শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

ধূমপান বিষপান আর নয় সুখটান

i_image_1481005342

ধূমপান একটি মারাত্মক ক্ষতিকর ও বিপদজনক অভ্যাস। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এ সম্পর্কে জানে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ সিগারেটের প্যাকেটের গায়েই লেখা থাকে ‘সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’। তারপরও অনেকেই দেদারছে ধূমপান করছে। অধিকাংশ ধূমপায়ী ধূমপানের মারাত্মক ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে অবহিত নন।স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিই কেবলমাত্র সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী, আর শরীর সুস্থ থাকার অপর নাম সু-স্বাস্থ্য। আমাদের শরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গ স্বাভাবিক রাখার অণ্যতম কারণ স্বাভাবিক খাদ্য গ্রহন করা শরীর অসুস্থ্য হওয়ার কারণ গুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখার কোন বিকল্প নেই। শরীর সুস্থ রাখা এবং মানব দেহকে সঠিক ভাবে পরিচর্যার ক্ষেত্রে ধুমপান না গ্রহন করাই শ্রেয়। কারণ ধুমপানের অপর নাম বিষপান। এক কথায় বলা যায় ধুমপান এক নিরব ঘাতক। যা মানব দেহের বিভিন্ন ধরণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে অকেজো করে থাকে, এমন কি মরন ব্যাধি ক্যান্সারকে ধুমপান আলিঙ্গন করে থাকে। সম্প্র??? ধুমপান মানব দেহকে অকেজো করে এবং বিভিন্ন ধরণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে অকেজো করে ছাড়ে বিধায় ধুমপান ত্যাগের কোন বিকল্প নেই। শুধু ধূমপান নয় সব ধরণের তামাক দ্রব্য ও ধুমপানের ন্যায় মহা ক্ষতিকর। ধুমপানের কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যে ক্ষতির কবলে পড়ে তা থেকে রক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই আর সে কারণে শপথ গ্রহন করতে হবে আর ধুমপান নয়। কারণ ধুমপানের মাধ্যমে শরীরে যে ক্ষত সৃষ্টি হয় তা পুরন করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের বাস্তবতায় দোকান গুলোতে অহরহ ধুমপান বিক্রি হচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইন ধুমপানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে শাস্তির বিধান থাকলেও তা মানা হচ্ছে না এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটছে না। আগামীতে তাই আইন যেটা করা হয়েছে সেটি যেন প্রয়োগ করা হয় তবেই না বোঝা যাবে প্রকাশ্য ধুমপান নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিনা?।বিশ্বে প্রতিদিন যক্ষ্মা, এইডস বা ম্যালেরিয়ায় যত লোক মারা যায়, তার চেয়ে ঢের বেশি লোক মারা যায় ধূমপানের কারণে। খোদ আমেরিকাতেই প্রতিদিন ১,৪০০ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে ধূমপানের কারণে।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ তার ‘দ্য ওয়ে টু সেভ মিলিয়নস অফ লাইভস্‌ ইজ টু প্রিভেন্ট স্মোকিং’ গ্রন্থে বলেন, আমরা যদি এখনই কোনো পদক্ষেপ না নিই তাহলে এ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে গিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১ বিলিয়নে। ২০০২ সালে মার্কিন সিনেটে কর্মক্ষেত্রে ধূমপান নিষিদ্ধ করে আইন পাশ করা হয়। এটি সাধারণ মানুষের কাছে যেমন প্রশংসিত হয়েছে তেমনি রেস্টুরেন্টগুলোতেও বেড়ে গেছে বিক্রি।এর কিছুদিন পর ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইটালি এবং আয়ারল্যান্ডেও একই আইন প্রণয়ন করা হয়। সিগারেটের ওপর আরোপ করা হয় উচ্চহারের ট্যাক্স। ধূমপানবিরোধী প্রচারণা পায় ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। এ সবকিছুর ফলে এখন সেখানে ধূমপানের হার কমে গেছে ২১%। কিশোর ধূমপায়ীর সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধেকে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ চিত্রটা এত সুখকর নয়। বলা হয়, আগামী কয়েক দশকে ধূমপানজনিত কারণে মৃত্যুর ৮০ শতাংশই ঘটবে উন্নয়নশীল দেশে।তামাকের ধোঁয়ার ফলে শরীরে এমন সব ‘ফ্রি ব়্যাডিকাল’ বা আগ্রাসী ক্ষুদ্র পার্টিকেল তৈরি হয়, যা শরীরের অন্যান্য অণুর সংস্পর্শে এলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া ঘটে৷ ফলে সেই অণুগুলির ক্ষতি হয়৷ অধ্যাপক মন্টেনার বলেন, ”বীর্যের মধ্যে যে ‘ফ্রি ব়্যাডিকাল’ সৃষ্টি হয়, তা ফ্যাটি অ্যাসিড বদলে দেয়৷ এর ফলে মেমব্রেনও নষ্ট হয়ে যায়৷ তাছাড়া এই ব়্যাডিকাল কোষের মূলে গিয়ে জিনোম বদলে দেয়৷ এর পরিণাম সাংঘাতিক৷ কারণ পরে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করার সময় তাতে বিকৃতি দেখা দিতে পারে অথবা প্রক্রিয়াটি আদৌ ঘটতেই না পারে৷”’ফ্রি ব়্যাডিকাল’ ডিএনএ – অর্থাৎ বীর্যকোষের ক্রোমোজোমের উপর হামলা চালালে তার খোলস নষ্ট হয়ে যায় এবং ক্রোমোজোম ভেঙে যেতে পারে৷বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ পরিকল্পনায় ধূমপান বর্জনের জন্য আন্দোলন শুরু করেছে। এরই মধ্যে আমেরিকার ধূমপায়ীদের অন্ধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের দেশে ২০০৫  সালের ২৬ মার্চ থেকে ধূমপানবিরোধী আইন কার্যকর হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অফিস-আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ধূমপানমুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। ধূমপানবিরোধী সচেতনতার সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু ছয় মাস পরই আইনটি ঝিমিয়ে পড়ে। বর্তমানে দেশে ধূমপান বিরোধী কোনো আইন আছে বলে মনে হয় না। আইন আছে তবে দেখার কেউ নেই। ধূমপান বিরোধী আইনটি বাস্তবায়ন করতে কোনো অতিরিক্ত জনবল কাঠামোর প্রয়োজন নেই। শুধু আইন-শৃঙ্খখলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনটি মনিটরিং করলেই হয়। তাই ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সমাজ ও জাতিকে রক্ষার স্বার্থে ধূমপান আইনটি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা জরুরী। সেই সাথে সচেতন জনগনকে ধূমপান বিরোধী আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। আসুন আমরা সকলেই ধুমপান থেকে বিরত থাকি।