রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

জোটের ১৪৭ নেতা-কর্মীর বিচার শুরু

1_26219

রাজধানীর পল্টন থানায় করা দ্রুত বিচার আইনের একটি মামলায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জশিট) গঠন করেছেন আদালত। একই সঙ্গে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৫ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা মহানগর দ্রুত বিচার আদালতের হাকিম মোহাম্মাদ তারেক মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া এ আদেশ দেন। এ বিষয়ে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী মো. ফজলে রাব্বী খোকা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এ মামলায় অভিযোগ গঠনের আগে জামিনে থাকা আসামিদের মধ্যে রিজভী, ফারুক, আমান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানসহ ৯৯ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাদের মামলার অভিযোগ পড়ে শোনানো হলে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। এ ছাড়া মামলার অন্য ৪৮ আসামি আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। পরে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে হাকিম এ মামলার ১৪৭ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ২৫ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন। ফলে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। এর আগে এ মামলার আসামি ওমর ফারুক নামে একজনের মৃত্যু হওয়ায় তাকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেন হাকিম।গতকাল সকাল থেকেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা আদালত এলাকায় তাদের আইনজীবীদের চেম্বারে আসতে শুরু করেন। এ সময় তাদের সঙ্গে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে আদালত এলাকায় সকাল থেকেই পুলিশ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা জোরদার করে। মোতায়েন করা হয় বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিপুলসংখ্যক সাদা পোশাকের পুলিশ। এ ছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোক আদালত ঘিরে রাখেন। আদালত এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচলও সীমিত করা হয়। সন্দেহভাজনদের ব্যাগ ও শরীর তল্লাশি করা হয়। এর আগে এ মামলার আসামি রুহুল কবির রিজভী, জয়নুল আবদিন ফারুকসহ অন্যরা মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করলে হাকিম তা নাকচ করে দেন। এর আগে আসামি পক্ষে সানাউল্লাহ মিয়া, মোহসীন মিয়া, মোসলেহ উদ্দিন জসীম, মাসুদ আহমেদ, ইকবাল হোসেনসহ শতাধিক আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন। তারা আদালতকে বলেন, মাননীয় আদালত! এ মামলার কোনো সত্যতা নেই। এ মামলায় বর্ণিত অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করার জন্য। এ ছাড়া মামলার ঘটনা সাজানো ও বানোয়াট। আসলে এ মামলায় আসামিরা কোনো ত্রাস সৃষ্টি করেননি। আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগও নেই। এ মামলার অনেক আসামিই দেশের বিশিষ্ট ও সম্মানিত ব্যক্তি। এ ছাড়া বিএনপি আত্মঘাতী দল নয়। তারা বোমাবাজি করতে পারে না। হয়রানির উদ্দেশ্যে পুলিশ এ আলামত কোথা থেকে উদ্ধার দেখিয়েছে সে বিষয়ে আসামিরা কিছুই জানেন না। পুলিশ বোমার নাটক করে ঘটনার দিন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ঢুকতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। একজন সাংবাদিককেও সেদিন পুলিশ ঢুকতে দেয়নি। বোমার নাটক তৈরি করে পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এ ছাড়া এ মামলার আসামি জয়নুল আবদিন ফারুক আদালতের কাছে কিছু বলার জন্য অনুমতি চাইলে আদালত অনুমতি দেন। তখন তিনি আদালতে বলেন, ‘সেদিন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ছিল। সেখানে আমাদের বহু নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। আমাদের জনসভায় আমরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যার চেষ্টা করব, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।’ এর আগে ১১ মার্চ বিকালে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ১৮ দলের সমাবেশের শেষ দিকে হঠাৎ কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে এবং সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। এর ঘণ্টাখানেক পর বিএনপি কার্যালয় ও আশপাশ এলাকা থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮-দলীয় জোটের ১৫৫ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ ১০টি হাতবোমা উদ্ধারের কথা জানায়। পরদিন বিএনপির তিন নেতা মির্জা ফখরুল, সাদেক হোসেন খোকা ও আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে ছেড়ে দিলেও জোটের ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে পল্টন থানা পুলিশ। মামলায় রুহুল কবির রিজভী, জয়নুল আবদিন ফারুক ছাড়াও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান ও মো. শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এবং বিএনপির সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিবকে মামলায় হুকুমের আসামি করা হয়। পরে মামলার তদন্ত করে ১৪৮ জনের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনের ৪ ও ৫ ধারায় পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর আগে তদন্তে ‘ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা’ না পাওয়ায় মামলার ১৫৪ আসামির মধ্যে ছয়জনের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তারা হলেন মো. সোবহান, মো. জুনায়েদ ওসমান, মো. শাকিল, সোহেল রানা, মাহবুবুর রহমান ও হাজি মো. নাঈম আহম্মেদ। আর অভিযোগপত্রে রাষ্ট্র পক্ষে সাক্ষী করা হয় ৪২ জনকে।অভিযোগপত্রে বলা হয়- ছয় হুকুমের আসামি ঘটনার দিন বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ১৮-দলীয় জোটের সমাবেশে মাইকের মাধ্যমে ত্রাস ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য কর্মীদের উত্তেজিত করে তোলেন। এর ফলে দলীয় কর্মীরা ওই এলাকায় ১৮ থেকে ২০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। তারা জনসাধারণের চলাচলের রাস্তায় টায়ার, চট, কাঠ ও কাগজ দিয়ে সাতটি জায়গায় আগুন দিয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ক্ষতি করেন এবং পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এদিকে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় করা নাশকতার একটি মামলায় বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। একই সঙ্গে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম হাসিবুল হক এ আদেশ দেন। এ সময় মামলার ১৪ জন আসামির মধ্যে আমানসহ ১২ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আমানউল্লাহ আমান বিদেশ থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলে তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য উল্লেখিত আসামিরা বিমানবন্দরে অবস্থান করেন। পরে ডিবি পুলিশ মোহাম্মদপুর থানার একটি হত্যা-চেষ্টা মামলায় আমানকে গ্রেফতার করে। এ সময় অন্য আসামিরা তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করেন। এ ছাড়া তারা একতাবদ্ধ হয়ে পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকলে দায়িত্বরত পুলিশের একজন এসআই আহত হন। এ সময় আসামিরা রাস্তায় চলাচলরত যানবাহন, ডিভাইডার ও ডিভাইডারে লাগানো গাছের ক্ষতিসাধন করতে থাকেন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০১১ সালের ২৪ আগস্ট ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।