রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

চিকিৎসা যখন খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা পরিবর্তনে

1_32053

হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে কোলেস্টেরল নামক চর্বি জাতীয় পদার্থ স্তূপাকারে জমা হয়ে রক্তনালির ভেতর দিকের রক্তপ্রবাহের পথে বাধার সৃষ্টি করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে ব্লক বলে অভিহিত করা হয়। এসব ব্লক বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংখ্যায় ও আকারে বৃদ্ধি পেতে থাকে যা মানবদেহে মাঝারি ও বড় বড় রক্তনালিতে খুব বেশি পরিমাণে পরিলক্ষিত হয়। হৃৎপিণ্ডে রক্তনালির ব্লক নির্ণয়ের জন্য করোনারি এনজিওগ্রাম নামক টেস্ট করা হয়ে থাকে। এনজিওগ্রামের মাধ্যমে বড় রক্তনালিতে অবস্থিত বড় বড় ব্লকগুলোকে শনাক্ত করা যেতে পারে। আপনারা অনেকে দেখেছেন, হৃৎপিণ্ডের তিনটি প্রধান রক্তনালির মধ্যে একটিতে ১০০% একটিতে ৮০% এবং আর একটিতে ৭০% ব্লক, অনেক রোগীরই এমনটা থাকে, তার মানে তিনটিতে মোট ২৫০% ব্লক আছে এবং মাত্র ৫০% পথ রক্তপ্রবাহের জন্য খোলা আছে এবং সেই ব্যক্তি মোটামুটিভাবে সুস্থ জীবনযাপন করছেন। এখানে প্রশ্ন হলো ৩০০% এর জায়গায় মাত্র ৫০% রক্তপ্রবাহে লোকটি কিভাবে বেঁচে আছেন? উত্তর হলো এই ৫০% এর পরও ছোট ছোট রক্তনালির মাধ্যমে আরও অনেক বেশি পরিমাণ রক্ত হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিতে প্রবাহিত হচ্ছে, যার ফলে রোগীর অবস্থার মারাত্দক অবনতি না ঘটে মোটামুটিভাবে সুস্থ জীবনযাপন করে বেঁচে আছেন। মূলত সঠিক রক্তপ্রবাহের মাত্রার ওপর রোগীর হার্টের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। তাই বড় বড় রক্তনালিতে ব্লক সৃষ্টি হওয়া এবং প্রকৃত রক্তপ্রবাহের মাত্রার সঙ্গে বহুলাংশে তারতম্য দেখা যাচ্ছে। সঠিক খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও কায়িক শ্রম এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারা, এসব ছোট ছোট রক্তনালির মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্তপ্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এবং বড় বড় রক্তনালিতে ব্লকের পরিমাণও কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি অধিক রক্তপ্রবাহ পেয়ে থাকে। ফলে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে অপারেশন ছাড়াই হৃদরোগ চিকিৎসা ত্বরান্বিত করা যায়। কাজেই এক কথায় বলা যেতে পারে, হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে বড় বড় ব্লকের তীব্রতাই হৃদরোগের একমাত্র পরিমাপক হিসেবে পরিগণিত হয় না। তবে সঠিকভাবে নির্বাচিত মেডিসিন, হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী খাদ্য ব্যবস্থা, নিরাপদ কায়িক শ্রমের মাত্রা ও জীবনধারা রোগীকে প্রায় সময়ই রিং পরা ও বাইপাস অপারেশন করার চেয়েও অধিক কার্যকরি ভূমিকা পালন করে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, রিং পরা বা বাইপাস অপারেশন করা রোগীকে ওষুধ সেবন, খাদ্যাভ্যাস ও কায়িকশ্রম সম্পর্কে চিকিৎসকরা বিশেষভাবে জোর দিয়ে থাকেন, তা ছাড়া শুধু রিং পরা ও বাইপাস করার পর মেডিসিন, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা পরিবর্তন ব্যতীত রোগী সুস্থ থাকার কোনো রকম সুযোগ নেই। যদি কোনো রোগীর এ ধরনের চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় উন্নতি না ঘটে তবে রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে রিং ও বাইপাস অপারেশনের জন্য নির্বাচিত করা হয়ে থাকে। এমন অনেক রোগী আছেন যাদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে এবং ব্লকের পরিমাণ মূল্যায়ন করে রিং ও বাইপাস অপারেশনের অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়, তাদের ক্ষেত্রে মেডিসিন খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা পরিবর্তনই একমাত্র চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত। যে সব রোগী হৃদরোগের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য জটিল অসুস্থতায় ভুগছেন যেমন- কিডনি ও লিভার ফেইলুর, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, থাইরয়েড সমস্যা ইত্যাদি রোগে ভুগছেন তারা মেডিসিন, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে চিকিৎসায় প্রভূত উন্নতি লাভ করতে পারেন। হতে পারেন পুরোপুরি সুস্থ্য।

ডা. এম. শমশের আলী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট,

ঢাকা মেডিকেল কলেজ। ফোন : ০১৯৭১-৫৬৫৭৬১

– See more at: http://www.bd-pratidin.com/2014/09/22/32053#sthash.8zkyZ5Uq.dpuf