রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

ওরা প্রবীন হলেও, ফুটবলের দৌড়ে এখনো তরুণ……

14390

রাত সাড়ে ১১ টা। চারদিকে নিকষ কালো অন্ধকার। মীরসরাইয়ে মলিয়াইশের মাঠে তখনও আলোক রশ্মি উপচে পড়ছে। সহস্র দর্শকের সমাগমে পরিপূর্ণ মাঠ। কি হচ্ছে এখানে? হঠাৎ দেখি- ষাট উর্ধ্ব বয়সী ফুটবলার কেশব চৌধুরীকে কাঁদে নিয়ে, বিজয় উল্লাসে মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসেন প্রবীন লাল দলের খেলোয়াড়রা। কোমর দুলিয়ে বিজয়ের নাচ-উল্লাস। এক সময় তাদের সাথেও যোগ দেন টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে পরাজিত প্রবীন সবুজ দল। বলছিলাম সামাজিক সংগঠন দুর্বার প্রগতি সংগঠন কর্তৃক ৪৫ উর্ধ্ব বয়সীদের নিয়ে ঈদুল আযহার পরের দিন রাতে আয়োজিত দুর্বার প্রবীন ফুটবল ম্যাচ-২০১৬ এর কথা। ঈদের আনন্দকে আরেকটু বাড়িয়ে দিতে দুর্বার’র ছিল এ ব্যাতিক্রমী আয়োজন। সাধারণত তরুণরা ফুটবল খেলবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু যখন বলা হবে প্রবীনরা ফুটবল খেলবে, তখন বিষয়টা একটু অন্যরকম দাঁড়ায়।যেটি মীরসরাইয়ের সকল পর্যায়ের ফুটবলপ্রেমী মানুষদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে । তাও আবার রাত্রিকালীন। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা দুঃসাধ্য হলেও দুর্বারদের অদম্য চেষ্টায় সেটাও সফল হয়েছে। দূর-দরান্ত থেকে এসেছে অনেক মানুষ। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসেও এসকল মানুষরা এখনও যে ফুটবলের দৌড়ে তরুণ-তা নিজ চোখে প্ররখ না করলে বুঝা মুশকিল। অদম্য তারুণ্যে এসকল ফুটবলার’রা এক সময় বিভিন্ন মাঠে ফুটবল খেলে নন্দিত হয়েছেন। ছন্দের খেলা দেখিয়ে মন কেড়েছিলেন সবার। এখন বয়সের ভারে অনেকটা নুয়ে গেলেও এতটুকুও কমেনি বুকের মনোবল। এখনও সে উচ্ছ্বাস, রয়েছে পায়ের যাদু। যা দেখে মুগ্ধ এ প্রজন্মের ফুটবলার’রা। প্রবীনদের নিয়ে আয়োজিত এ ম্যাচে খেলেছেন ৪৫ উর্ধ্ব ৪০ জন প্রবীন ফুটবলার। যাদের অনেকেরই চুল পেকেঁ সাদা, কারো আবার মুখ পুরো ধব-ধবে সাদা দাঁড়ি। এসকল উদ্যমী ফুটবলার’রা হাফ প্যান্ট, টি-শার্ট পরে রাত ৯ টায় নেমে গেলেন ফুটবল নিয়ে। মাঝখানে ১০ মিনিট বিরতি দিয়ে ৬০ মিনিট অবধি গড়ালো খেলা। দর্শকদের ছিল হইহই -রইরই চিতকার-করতালি । এক সময়কার কিংবদন্তি ফুটবলার স্বর্গীয় মিহির চৌধুরী (কেশব) এর স্মরণে উৎসর্গ করা হয় ম্যাচটি। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মঘাদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহীনুল কাদের চৌধুরী।সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মির্জা মিশকাতের রহমানের সঞ্চালনায়, ক্রিড়া সম্পাদক আহাদ উদ্দীনের পরিচালনায়,অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হাসান মো.সাইফ উদ্দীন। খেলার শেষ পর্যায়ে বিজয়ী ও বিজীত দলের খেলোয়াড়দের মাঝে পুরস্কার তুলেদেন দুর্বার। এ ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন প্রবীন সবুজ দলের জাহাঙ্গীর। উল্লেখ্য যে, প্রবীন লাল দলের মালিক ছিলেন অসিম কে চৌধুরী,পরিচালক – হারেছ আহমদ নাজিম (মেম্বার),কোচ – হুমায়ুন কবির,অধিনায়ক – কেশব লাল চৌধুরী ও প্রবীন সবুজ দলের মালিক ছিলেন নুরন্নবী চৌধুরী নওশাদ, পরিচালক – তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মাসুদ, কোচ – শাহ আলম, অধিনায়ক – গিয়াস উদ্দীন (মেম্বার)। দু দলের প্রধান পরিচালক হিসেবে ছিলেন নুরুল আবছার (মেম্বার)।ম্যাচ রেফারি ছিলেন তরুন ক্রিড়াবিদ মহিবুল হাসান সজিব, সহ-রেফারি ছিলেন নাজমুল হক রিগান ও ফরহাদ উদ্দীন।বিচারকেরর দায়িত্ব পালন করেন সমির বরণ পাল ও আনোয়ার হোসেন। ধারাভাষ্য দেন নাহিদুল আনসার। নবীন – প্রবীনের সম্মিলনে এক অপরূপ মেলবন্ধনের নাম দুর্বার প্রগতি সংগঠন তা আবারও প্রমান করলো এ সংগঠনের অদম্য দুর্বার’রা। ফুটবলের এ উৎসবের মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক ভালবাসার অনাবিল পরশ। দৃঢ় হোক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন – এই চাওয়া মীরসরাইয়ের সকলের।