যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক বিজ্ঞানী ড. এন নীনা আহমাদ। যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্টের ‘এশিয়ান আমেরিকান অ্যান্ড প্যাসিফিক আইসল্যান্ডার (এএপিআই) বিষয়ক উপদেষ্টা কমিশন’-এর সদস্য হিসেবে তিনি এ নিয়োগ পান। তিনিসহ ১৪ জনকে এই কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ওবামা এই নিয়োগের অভিপ্রায় ঘোষণা করেন বলে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী ড. নীনা আহমাদ। তিনি মূলত চক্ষুরোগ ও হাড়বাতের ক্ষেত্রে কোলাজেন ও জিনগত প্রভাব নিয়ে গবেষণা ও আবিষ্কারের জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। এ-সংক্রান্ত তাঁর একটি প্যাটেন্টও রয়েছে। এ ছাড়া ফরেনসিক ডিএনএ বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তাঁর খ্যাতি রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিসহ এশিয়ান আমেরিকানদের উন্নয়নে তাঁর নিরলস কাজের জন্য তিনি এই সম্প্রদায়ের কাছে সমাজকর্মী হিসেবেই বেশি সমাদৃত। একই সঙ্গে রিয়াল এস্টেট ব্যবসায়ী হিসেবেও তিনি পরিচিত।হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আজ (বৃহস্পতিবার) তাঁর এশিয়ান আমেরিকানস অ্যান্ড প্যাসিফিক আইসল্যান্ডারস-বিষয়ক কমিশনের ১৪ জন উপদেষ্ট নিয়োগের অভিপ্রায়ের কথা ঘোষণা দিয়েছেন। এই কমিশন যুক্তরাষ্ট্রে এশীয় আমেরিকান ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপবাসী (এএপিআইস) সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কমিশন তাদের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করবে। এই কমিশন সদস্যরা দেশজুড়ে এএপিআই নাগরিকদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার উপায় উদ্ভাবনের বিষয়ে প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেবেন। একই সঙ্গে তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ ও মঙ্গলের জন্যও উপায় উদ্ভাবন করবেন। এই গুণী ব্যক্তিরা (কমিশন সদস্যরা) এএপিআই সম্প্রদায়সহ সমগ্র জাতির উন্নয়নে কাজ করবেন এবং আমেরিকায় এই সম্প্রদায়ের অবদান জাতির কাছে তুলে ধরবেন।’সংক্ষপ্তি জীবনী : বিবৃতিতে ড. এন নীনা আহমাদের সংক্ষপ্তি জীবনী তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ড. নীনা আহমাদ যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়াভিত্তিক রিয়াল এস্টেট ও ডেভেলপমেন্ট কম্পানি জেএনআই ক্যাপিটাল ইনকরপোরেশনের সরকারবিষয়ক নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সহ-স্বত্বাধিকারী (কো-ওউনার)। তিনি সংস্থাটির ৪৯ শতাংশ মালিক। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কম্পানিটির তিনি অন্যতম উদ্যোক্তা। ড. আহমাদ ২০১৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী আইনি সহায়তাকারী ‘লিমিডেট লায়াবিলিটি কম্পানি’ গে্লাবাল সিটি রিজিওনাল সেন্টারের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৯২ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাওয়ার রিসার্চ ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপর থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উইলস আই হসপিটাল ও জেফারসন মেডিক্যাল কলেজের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে সেবা দিয়ে আসছেন। এ সময়ের মধ্যেই তিনি উইলস আই হসপিটালের মিলকিউলার বায়োলজির গবেষণা বিভাগের পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ২০১১ সালে তিনি ফিলাডেলফিয়া ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব ম্যানেজার্স হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৯ সালে তিনি ফিলাডেলফিয়ার মেয়র মিশেল নুতারের এশিয়ান আমেরিকানবিষয়ক নগর কমিশনের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান। ড. আহমাদ ল্যরেন্স ইনস্টিটিউট থেকে রসায়নে বিএস ডিগ্রি এবং ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া থেকে জীবতাত্ত্বিক রসায়নে (বায়োলজিক্যাল) ক্যামেস্ট্রিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।এদিকে ফিলাডেলফিয়া ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ওয়েবসাইটে ড. এন নীনা আহমাদ সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি ফরেনসিক ডিএনএ বিশেষজ্ঞ। তিনি ফরেনসিক ডিএনএ পর্যালোচনা ও এ-সংক্রান্ত ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন এক ধরনের চক্ষুরোগের জন্য যে কোলাজেন (তন্তুজাতীয় টিসু্য) টাইপ-২-এর রূপান্তর দায়ী। চক্ষুবিজ্ঞানে কোলাজেন নিয়ে তিনি গবেষণাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া ‘হাড়ের বাতের ক্ষেত্রে বংশগতি প্রবণতার সনাক্তকরণ পদ্ধতির’ অন্যতম পেটেন্টের অধিকারী তিনি।