বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

এবার ভাল কলেজে ভর্তিযুদ্ধ

24718_31

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন শিক্ষার্থী। সবারই প্রত্যাশা ভাল কলেজে ভর্তি। কিন্তু এত ভাল কলেজ কোথায়? ভাল ফল করেও প্রত্যাশিত কলেজে ভর্তির নিশ্চয়তা নেই শিক্ষার্থীদের। জ্যামিতিক হারে ফল বৃদ্ধির সঙ্গে ভাল মানের কলেজ না বাড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি। বিষয়টি স্বীকার করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। সরকার ইতিমধ্যে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির নীতিমালা ঘোষণা করেছে। ঘোষিত নীতিমালা অনুযায়ী ১লা জুলাই থেকে ক্লাস শুরু হবে। ৩০শে জুনের মধ্যে এদের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। তবে বিলম্ব ফি দিয়ে ২২শে জুলাই পর্যন্ত ভর্তি হওয়া যাবে। ফল প্রকাশের আগেই এভাবে ভর্তির সময়সূচি ঘোষণার কারণে অনেক শিক্ষার্থীই পরের দিন বিভিন্ন কলেজে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। নটর ডেম, ভিকারুন নিসা, রাজউক উত্তরা মডেলসহ রাজধানীর কলেজগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা ভর্তি ও আসন সংখ্যাসহ নানা সুযোগ-সুবিধার তথ্য সংগ্রহ করছে। শনিবার প্রকাশিত ফলে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের চোখে ঘুম নেই। সেই সঙ্গে টেনশনে বাড়ছে অভিভাবকদেরও। ফল প্রকাশের পরদিনই তাদের মুখ থেকে মিলিয়ে গেছে আগের দিনের স্বস্তির হাসি। এখন কেবল ভর্তির টেনশন। মূলত ভাল ফল করেও পছন্দের কলেজে ভর্তি অনিশ্চয়তা থেকেই সৃষ্টি হয়েছে এই পরিস্থিতি। এবার সব মিলে পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৩৩১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে এসএসসিতে ১০ লাখ ৮ হাজার ১৭৪ জন, মাদরাসায় দাখিলে ২ লাখ ১১ হাজার ২০৩ জন এবং কারিগরি বোর্ড থেকে এসএসসি ও দাখিল (ভোকেশনাল) পাস করেছে ৮৩ হাজার ৯৫৪ জন। ভাল ফল করা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই কলেজমুখী হয়। এর বাইরে মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ড থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের অনেককে কলেজে ভর্তি হতে দেখা যায়। সরকারি হিসাব মতে, এই মুহূর্তে সারাদেশে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ১২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৬৯টি। মাদরাসায় আলিম স্তরে আসন রয়েছে দুই লাখের বেশি। কারিগরির একাদশ শ্রেণীতে আসন রয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ৬৮০টি। আসন সংখ্যা অনুযায়ী একাদশে ভর্তিতে সঙ্কট হবে না। কিন্তু সঙ্কট দেখা দেবে মানসম্পন্ন ও পছন্দের কলেজে ভর্তি নিয়ে। তবে এক্ষেত্রে বিশেষ করে জিপিএ-৫ এবং এর নিচে জিপিএ-৩.৫ পর্যন্ত পাওয়া শিক্ষার্থীদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এবার এসএসসি পরীক্ষায় ১ লাখ ২২ হাজার ৩১৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এটা গতবারের চেয়ে ৪৪ হাজার ৯৩২জন বেশি। জিপিএ-৪ পেয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৮৯ শিক্ষার্থী। ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মূলত এই দু’টি ক্যাটিগরির শিক্ষার্থীর ভর্তির লক্ষ্য থাকবে নামী কলেজ। কিন্তু রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোসহ সারাদেশে জেলা পর্যায়ে ভাল কলেজের সংখ্যা হাতেগোনা। সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩৭৫৭টি। এর মধ্যে মানসম্মত কলেজের সংখ্যা মাত্র পৌনে ২০০। এসব কলেজে আসন সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। অথচ এ বছর কেবল এসএসসি পরীক্ষায়ই জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৩১৩ জন। এর বাইরে দাখিল আর ভোকেশনালের জিপিএ-৫ পাওয়া কিছু শিক্ষার্থী কলেজে ভিড় করলে সাদা চোখেই সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জনকারীদের ভর্তি সঙ্কট দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় জিপিএ ৫-এর নিচে জিপিএ-৩.৫ পর্যন্ত মধ্যম মানের শিক্ষার্থীদের জন্য অপেক্ষা করছে ঘোর অনিশ্চয়তা। আবার এসএসসির পরে ঢাকাসহ বিভাগীয় বড় কলেজে শিক্ষার্থীদের ভিড় করতে দেখা যায় ভর্তির জন্য। কিন্তু শুধু জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদেরই সুযোগ করে দেয়ার মতো প্রতিষ্ঠান ঢাকা ও দেশের বড় শহরগুলোয় নেই। বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যুরোর (ব্যানবেইস) হিসাবে, ঢাকা বিভাগে ৭০টি, রংপুর বিভাগে রয়েছে ২৯টি, বরিশাল বিভাগে ১২টি, রাজশাহী বিভাগে পাঁচটি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭টি, খুলনা বিভাগে ১১টি এবং সিলেট বিভাগে ২২টি মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কলেজে স্ব স্ব বিভাগের জিপিএ-৫ ধারীরাও ভিড় করলে সবার সংস্থান হবে না। সেক্ষেত্রে বাকিদের জন্য সুখবর তেমনটা নেই। রাজধানীতে মোট ১৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণী রয়েছে। এসব কলেজে মোট আসন আছে প্রায় ৫০ হাজার। এর মধ্যে ভাল মানের কলেজ আছে মাত্র ২০-২৫টি। আর আসন সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। বিপরীত দিকে ঢাকা বোর্ডেই এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৬ হাজার ৭৯৫ জন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীর স্কুলগুলো থেকেই জিপিএ-৫ পেয়েছে প্রায় ১৮ হাজার। ভাল ফলের পর রাজধানীতে ছুটে আসাদের সুখবর নেই বললেই চলে। বরং জিপিএ-৪ এবং তারও কম নম্বর অর্জনকারীদের জন্য এ সঙ্কট আরও তীব্র। তবে এবারও শহরাঞ্চলের কলেজে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩ ভাগ আসন সংরক্ষণ করার নির্দেশনা রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিতে কোন সমস্যা হবে না। সবাই ভর্তি হতে পারবে। তবে এটা ঠিক যে, ভাল ফলাফলের সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে, সে হারে ভাল কলেজের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হয়নি। নতুন ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে ২৮শে মে। চলবে ১২ই জুন পর্যন্ত। ভর্তির জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করা হবে ২২শে জুন। তবে পুনঃনিরীক্ষণের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ভর্তির আবেদনের শেষ তারিখ ১৭ই জুন। বিলম্ব ফি ছাড়া ভর্তির শেষ তারিখ ৩০শে জুন। আর বিলম্ব ফিসহ ভর্তির শেষ তারিখ ২২শে জুলাই।