রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

আসছে দেড় লাখ টিয়ার শেল

36117_b4

সম্ভাব্য রাজনৈতিক কর্মসূচি মাথায় নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে প্রস্তুতি নিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশৃঙ্খলা এড়াতে কৌশল নির্ধারণের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় অস্ত্র-গোলাবারুদ ও নিরাপত্তা উপকরণ সংগ্রহ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ৫০ হাজার টিয়ার গ্যাসের শেল ও ৩০০০ গ্যাস গ্রেনেড কেনা হয়েছে। এছাড়া, আরো দেড় লক্ষাধিক টিয়ার গ্যাসের শেল ও ১৫ হাজার গ্যাস গ্রেনেড আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, রাজপথে আন্দোলনের নামে যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে পুলিশ ফৌজদারি আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আর আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সবসময় প্রস্তুত থাকে। বিশেষ কোন সময়কে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি নেয়ার কিছু নেই। কিছু কৌশল হয়তো অবলম্বন করা হয় সেটা প্রকাশ করা সমীচীন হবে না। নতুন করে দেড় লক্ষাধিক টিয়ারশেলসহ অন্যান্য নিরাপত্তা উপকরণ সংযোজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা কাগজপত্র না দেখে বলা যাবে না। তবে অস্ত্র-গোলাবারুদসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা উপকরণ কেনা পুলিশ বিভাগের নিয়মিত কাজ। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যখন যেটা প্রয়োজন হয় তখন তা সংগ্রহ করা হয়।
সূত্র জানায়, গত বছরের প্রথম দিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রচুর অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করে। কারণ গত বছর ছিল সরকারের মেয়াদের শেষ বছর। সাধারণত সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে বিরোধী দলের আন্দোলন চাঙ্গা হয়। একারণে গত বছরের প্রথম দিকেই প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা উপকরণ সংগ্রহ করেছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এর বেশির ভাগই শাপলা চত্বরে হেফাজত নেতাকর্মী উচ্ছেদ ও দমন এবং চলতি বছরের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় ব্যবহৃত হয়। এরপর গত ৩০শে জানুয়ারি পুলিশ সদর দপ্তর নতুন করে লং ও শর্ট রেঞ্জের ৫০ হাজার টিয়ার গ্যাস শেল ও ৩০০০ টিয়ার গ্যাস গ্রেনেড সংগ্রহের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি ৫০০০ ব্যাটন (লাঠি), ৫০০০ লাইফ জ্যাকেট ও ১৫ হাজার বডি ব্যাগ কেনারও দরপত্র আহ্বান করা হয়। সম্প্রতি এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং নিরাপত্তা উপকরণ সংগ্রহ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, ঈদের পর বিরোধী আন্দোলন আবার চাঙ্গা হতে পারে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়ার পর আবারও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অস্ত্র-গোলাবারুদ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা উপকরণ সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এবার একসঙ্গে লং ও শর্ট রেঞ্জের এক লাখ ৬০ হাজার টিয়ার শেল কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। গত ১৬ই জুলাই এই দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে লং রেঞ্জের টিয়ার শেল ৯০ হাজার, শর্ট রেঞ্জের টিয়ার শেল ৭০ হাজার, ১৫ হাজার টিয়ার গ্যাস গ্রেনেড কেনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, একদিন আগে ১৫ই জুলাই আহ্বান করা পৃথক দুটি দরপত্রে ১০ হাজার বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও ১৫ হাজার স্প্লিন্টার প্রুফ জ্যাকেট, ১০ হাজার সেফটি হেডগিয়ার, ২৫ হাজার লেগ সাইন গার্ড, ২০ হাজার হ্যান্ডকাফ ও এক হাজার ভিআইপি হেলমেট কেনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং নিরাপত্তা উপকরণ সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। সূত্র জানায়, রাজারবাগের আইজি স্টোর বা কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারে এসব অস্ত্র- গোলাবারুদ এবং নিরাপত্তা উপকরণ সংরক্ষণ করা হয়। পরে চাহিদামতো মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশের কাছে এসব সরবরাহ করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরাবরের মতো এবারও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জন্য সব কিছুই সর্বাধিক সংখ্যায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও কয়েকটি বিশেষ জেলার জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়। কারণ হিসেবে জানা গেছে, রাজনৈতিক উত্তেজনা শুরু হলে রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলায় বেশি বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।
সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে রক্তপাত না ঘটিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ওপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে। এ কারণে কম প্রাণঘাতী অস্ত্র বেশি ব্যবহারের বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। সূত্র জানায়, বিরোধী দলের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলায় কোন প্রাণঘাতী ঘটনা যাতে না হয় সে বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। কারণ বিরোধী কোন নেতাকর্মী মারা গেলে তা বিশেষ ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্য আন্দোলনের সময় তারা ‘লেস লেথাল উইপন’ ব্যবহার করতে চান, যাতে কেউ শারীরিকভাবে গুরুতর আহত বা নিহত না হন। সূত্র জানায়, বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যানবাহনে পেট্রল বোমা ও হাত বোমা নিক্ষেপের বিষয়টি নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মহানগর গোয়েন্দারা বোমাবাজদের চিহ্নিত করার জন্য নজরদারি করছেন। একই সঙ্গে হাত বোমা ও পেট্রল বোমা নিক্ষেপের সময় হাতেনাতে কাউকে ধরতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাদণ্ড দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে নতুন করে আরও সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোরও পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল বলেন, রাজপথে বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশ আইন অনুযায়ী যা করার তাই করবে। তাদের উদ্দেশ্য গণতান্ত্রিক কোন আন্দোলনে বাধা দেয়া নয়। কেউ বিশৃঙ্খলা করলে পুলিশ ফৌজদারী আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

উৎস- মানবজমিন