রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

আইএস-এর বিরুদ্ধে মার্কিন বিমান হামলা শুরু

42891_f2

ইরাকের পর এবার সিরিয়ায় আইএস-এর ওপর বিমান হামলা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অভিযানে তাদের সঙ্গে রয়েছে মিত্র ৫টি আরব রাষ্ট্র। পেন্টাগন জানিয়েছে, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে। আইএস-এর শক্ত ঘাঁটি রাকাসহ কয়েকটি এলাকায় বিমান থেকে হামলা চালানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৪টি বিমান হামলায় আইএস-এর প্রশিক্ষণ এলাকা, নিয়ন্ত্রণ স্থাপনা, যানবাহন ও মজুতাগার ধ্বংস হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আইএস-এর বিরুদ্ধে হামলা জোরদার ও সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত করার ঘোষণা দেয়ার পর এটাই সেখানে প্রথম হামলা। সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, আইএস-এর বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু হওয়ার আগে জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলকে অবহিত করা হয়। পেন্টাগনের মুখপাত্র রিয়ার এডমিরাল জন শিরবি হামলার খবর নিশ্চিত করে বলেন, সিরিয়ায় মার্কিন সেনাবাহিনী ও মিত্ররাষ্ট্রের বাহিনী সামরিক অভিযান শুরু করেছে। মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টকম বলেছে, সুন্নি আরব রাষ্ট্র বাহরাইন, জর্ডান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এ হামলায় অংশগ্রহণ বা সহযোগিতা করেছে। তারা আরও জানিয়েছে, মার্কিন সামরিক বাহিনী ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা অব্যাহত রাখবে। সর্বোচ্চ পদমর্যাদার মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল মার্টিন ডেম্পসি বলেছেন, আইএস জঙ্গিদের কোন নিরাপদ অভয়াশ্রম নেই সেটা দেখাতেই এ হামলা চালানো হয়েছে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিতভাবে সেটা অর্জন করেছি। সেন্টকম আরও জানিয়েছে, পৃথকভাবে মার্কিন বাহিনী পশ্চিম আলেপ্পোতে আল কায়েদা যুদ্ধপ্রবীণদের একটি নেটওয়ার্ক ‘খোরাসান’-এর ওপর ৮টি হামলা চালিয়েছে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, রাকায় আইএস লক্ষ্যবস্তুতে দু’টি হামলায় ২০ জনেরও বেশি জঙ্গি নিহত হয়েছে। এর আগে তারা পশ্চিম আলেপ্পোতে চালানো হামলায় ৩০ জন আল-কায়েদা যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছিল। পরে এ সংখ্যা ৫০ বলে তারা জানায়। মৃতের মধ্যে রয়েছে ৩ শিশু সহ ৮ সাধারণ মানুষ। জর্ডান জানিয়েছে, তাদের বিমানবাহিনী কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠনের একাধিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করেছে। তারা জর্ডানের ভেতর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিল বলে উল্লেখ করা হয়। সিরিয়ার ভূখণ্ডে হামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে সিরিয়া সম্মতি প্রকাশ না করলেও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা  আগে ইরাকি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে তার কাছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির একটি চিঠি আসে। সিরিয়ার আইএস-এর বিরুদ্ধে অভিযানে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সঙ্গে সহযোগিতার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও তাদের মিত্র রাষ্ট্রগুলো। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে অনেক বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার জন্য তারা আসাদকে দায়ী করে আসছে। সিরিয়ায় আসাদ-বিরোধী প্রধান বিরোধী জোট ন্যাশনাল কোয়ালিশনের প্রেসিডেন্ট হাদি আল বাহরা আইএস-এর বিরুদ্ধে এ সামরিক অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, শুধুমাত্র হামলা দ্বারা মৌলবাদকে চিরতরে পরাস্ত করা যাবে না। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হলো মধ্যপন্থি, অংশগ্রহণমূলক সিরিয়ান শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যা মৌলবাদের উত্থানকে প্রতিহত করবে। এদিকে উত্তর সিরিয়ায় আইএস-এর আগ্রাসন পার্শ্ববর্তী দেশ তুরস্ককে ব্যাপক শরণার্থী সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। গত সপ্তাহের শেষে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কুর্দি শরণার্থী সীমান্ত পেরিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের বেশির ভাগ এসেছে তুরস্ক সীমান্তের নিকটবর্তী সিরিয়ান শহর কোবানে থেকে। ইতিমধ্যে শহরটির দখল নিয়েছে আইএস। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, তুরস্কের উদ্দেশ্যে পালাতে থাকা কোবানের বাকি ৪ লাখ নিবাসীর বিষয়ে তারা বিকল্প পরিকল্পনা করছেন। উল্লেখ্য, তুরস্কে সিরিয়ান শরণার্থীর সাম্প্রতিক এ ঢলের আগেই সেখানে রয়েছে ১০ লাখেরও বেশি সিরীয় শরণার্থী।