সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

অনাবৃষ্টিতে হালদায় ডিম ছাড়ল মা মাছ ! জোয়ারে অতিরিক্ত লবনাক্ত পানি প্রবেশ বলে মনে করছেন হালদা বিশেষজ্ঞরা

a7e69a50-5ca9-4036-8e60-d8baa050e3c0-750x350

বিশেষ প্রতিনিধি: দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে বজ্র বৃষ্টি ও প্রবল বর্ষণ ছাড়াই রুই জাতীয় মা মাছ ডিম ছেড়েছে। তবে সংগ্রহের পরিমান কম হওয়ায় হতাশ জেলেরা। নদী পাড়ের লোকজন জানিয়েছেন হঠাৎ করে মেঘের গর্জন ও বৃষ্টি বিহীন মা মাছ ড়িম ছাড়াই তুলানা মূলক ডিম সংগ্রহ হয়েছে কম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণি বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হালদা বিশেষজ্ঞ মনজুরুল কিবরিয়া জানান, নদীতে জোয়ারের অতিরিক্ত লবনাক্ত পানি প্রবেশ করায় মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে। তার মতে, হতে পারে মা মাছ নমুনা ডিম ছেড়েছে। তিনি হালদার পানি পরীক্ষার পর বজ্র বিহীন মা মাছ ডিম ছাড়ার কারণ জানতে পারবেন বলে জানিয়েছেন। জানা যায়, গতকাল ৭ এপ্রিল ভোর সকালে নদীতে মা মাছের আনাঘোনা বেড়ে যাওয়ার সংবাদ কিছু কিছু জেলে জানতে পারলেও বেশি ভাগ জেলেদের ছিল অজনা। পরে অবগত হয়ে নানা প্রস্তুতি নিয়ে অনেক ডিম সংগ্রহকারী নদীতে নামেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা নিয়ে জাল পেতে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে। শুরু হয় হালদা নদীতে মা মাছের ডিম সংগ্রহের মহোৎসব। সকাল থেকে পর্যাপ্ত ডিম সংগ্রহের আশায় যারা জাল পেতে ছিল দুপুরের দিকে তারা হতাশা নিয়ে নৌকা নিয়ে ফিরে আসে নদী পাড়ে। সব মিলিয়ে তারা ড়িম সংগ্রহ করেছে মাত্র কয়েক বালতি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলেরা ডিম সংগ্রহের জন্য আগে থেকে সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। প্রবণ বর্ষণ হলে নিশ্চিত ছিল মা মাছ ডিম ছাড়বে এই আশায়। কিন্তু বৃষ্টির ও প্রবল বর্ষণ ছাড়াই মা মাছ ডিম ছেড়েছে এই খবরে স্বস্তিতে পড়ে যায় সংগ্রহকারীরা। সরোজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, নদী পাড়ে চলছে হতাশার চিত্র। ডিম সংগ্রহকারীদের একজন সাধন বড়–য়া, গত দুই যুগের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেছেন অনাবৃষ্টিতে ডিম ছাড়া জীবনের প্রথম দেখেছে তিনি। তবে হালদা বিশেষজ্ঞদের মতে, মা মাছ বৃষ্টি হলে পরিপূর্ণ ভাবে ডিম ছাড়বে। আবার অনেকের মতে, কয়েক দফায় ডিম ছাড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয় ডিম সংগ্রকারী মুহাম্মদ শফি জানান, হালদা নদীতে ডিমের নমুনা দেখা গেছে ভোর সকালে। এই খবর ছড়িয়ে পরলে হালদা নদীর রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার কাগতিয়া আজিমের ঘাট, খলিফার ঘোনা, পশ্চিম গহিরা অংকুরী ঘোনা, বিনাজুরী, কাগতিয়া, সোনাইর মুখ, আবুর খীল, খলিফার ঘোনা, সর্কদা, দক্ষিণ গহিরা, মোবারক খীল, মগদাই, মদুনাঘাট, উরকিচর এবং হাটহাজারী গড়দুয়ারা, নাপিতের ঘাট, সিপাহীর ঘাট, আমতুয়া, মার্দাশাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা, জাল ও বিভিন্ন সরমঞ্জাম নিয়ে জাল পেতে। উপজেলা মৎস্য অফিসার আমাদের রাউজান প্রতিনিধি প্রদীপ শীলকে জানিয়েছে, গত বছর হালদা নদী থেকে ৪শ ৩৯ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছিল ২শত ৯৮জন মৎস্যজীবিরা। তা থেকে পোনা হয় ৮১ কেজি। হাটহাজারী এলাকায় গত বৎসর হালদা নদী থেকে ১ হাজার ৫ শত কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। এ বছর আরো বেশি পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করতে পারেন বলে আশা করেছিল মৎস্যজীবিরা। উল্লেখ্য, স্থানীয় লোকজন হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে ডিমকে পোনা হিসেবে রূপান্ত করে থাকে কুয়ার সুষ্টির মাধ্যামে। এ পোনা বিক্রি করে প্রচুর পরিমাণ অর্থ উর্পাজন হয়। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা থেকে দেশে অনেক অর্থের যোগান দিয়ে থাকে বলে মনে করেন বিজ্ঞমহল। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে প্রতি বৎসরের ফেব্র“য়ারী থেকে শুরু করে জুন পর্যন্ত সময়ে গভীর সমুদ্র থেকে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ মাছ আসে ডিম ছাড়ার জন্য। বজ্র-বৃষ্টি ও স্রোতে নদীতে ঢল আসলে মা মাছ আমবস্যা ও পূর্ণিমার তিথিতে মূলত ডিম ছাড়ে। মা মাছ ডিম ছাড়ার পর রাউজান ও হাটহাজারীর দুই হাজারের বেশি মৎস্যজীবি নদী থেকে নৌকা ও জাল নিয়ে মা মাছের ডিম সংগ্রহ করে থাকে।