মৌসুমি ফলসহ খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন রোধে আগামী বুধবার (১১ জুন) রাত থেকে ঢাকার আটটি প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসাবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ‘যারা খাদ্যে ফরমালিনের মতো বিষ মেশাচ্ছে তারা সামাজিক গণহত্যা করছে’- গতকাল রবিবার জনসংযোগ দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘চেকপোস্ট বসানোর অর্থ গণহত্যাকরীদের কঠোর হস্তে দমন করা। এ জন্য দরকার সামাজিক আন্দোলন।’ সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (লজিস্টিকস) আবদুল জলিল মণ্ডল, অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) আবদুল জলিল, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মিলি বিশ্বাস ও যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।ডিএমপির তথ্য মতে, চেকপোস্ট স্থাপন করা স্থানগুলো হলো- যাত্রাবাড়ী থানাধীন সাইনবোর্ড, পোস্তগোলা ব্রিজ, ডেমরা চৌরাস্তা, বাবুবাজার ব্রিজ, সদরঘাট/ওয়াইজঘাট, গাবতলী পর্বত সিনেমা হলের সামনে, আবদুল্লাহপুর ব্রিজ ও ধউর ব্রিজ।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনের আগে ভেজালবিরোধী চলমান অভিযানের ওপর তথ্যসংবলিত একটি ভিডিও প্রদর্শনী দেখানো হয়। ওই ভিডিও প্রদর্শনী থেকে জানা যায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি হিসেবে চিহ্নিত ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ২১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। চলমান অভিযানে যেসব ফল ধ্বংস করা হয়েছে তাতে ৩.৫ থেকে ৪৬.০০ পিপিএম মাত্রায় ফরমালিন পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন গড়ে ১.৫ থেকে ১৪ মিলিগ্রাম বা ০.০৩ থেকে ০.১৫ পিপিএম মাত্রা পর্যন্ত ফরমালিন গ্রহণ করতে পারে। অধিক মাত্রায় ফরমালিন গ্রহণ করলে মানবদেহ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, কিডনি বিকল হয়, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়, চোখের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়।
উৎপাদনকারী, পরিবহনকারী, পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতা- এই চার স্তরের সবার কাছে খাদ্যে ফরমালিন না মেশানোর আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করব উৎপাদনকারী খাদ্যে ফরমালিন নামক বিষ মেশাবেন না, পরিবহনকারী তা পরিবহন করবেন না, আড়তদার আড়তে জমা করবেন না এবং খুচরা বিক্রেতা এসব অননুমোদিত কেমিক্যালযুক্ত ফল বিক্রি করবেন না।’মধু মাসে আটটি প্রবেশ পথে চেকপোস্ট বসানোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে কমিশনার বলেন, ‘খাদ্যসামগ্রীতে ফরমালিন নামক বিষ মেশানোর বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের পরস্পরবিরোধী তথ্য মেলে। খুচরা বিক্রেতা আড়তদারের ওপর দোষ চাপান। আড়তদার পরিবহনকারীর ওপর, পরিবহনকারী উৎপাদনকারীর ওপর দোষ চাপান। আমরা প্রবেশ পথে চেকপোস্টের মাধ্যমে জানতে চাই- আসলে কে দায়ী। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।’ডিএমপি সূত্র জানায়, এখন থেকে ঢাকা বিভাগীয় প্রশাসন ও বিএসটিআইয়ের সহযোগিতায় চেকপোস্ট পরিচালিত হবে। ফরমালিনযুক্ত ফল পাওয়া গেলেই সেখানে তা ধ্বংস করা হবে। জড়িতদের আইনের আওতায় আনার ব্যাপারেও ভাবা হচ্ছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা আশা করব আগামী বুধবার থেকে ঢাকায় কেমিক্যালমুক্ত ফল আসবে না।
উৎস- কালেরকন্ঠ