রাজধানীতে অবৈধভাবে বসবাসকারী ৩১ বিদেশী নাগরিককে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। যাদের অধিকাংশই আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশের নাগরিক। এ সময় তাদের কাছ থেকে জাল পাসপোর্ট, মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসা, ইয়াবা ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন মাদকসামগ্রী উদ্ধার করা হয়। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ‘বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজধানীর গুলশান, উত্তরা পশ্চিম ও রামপুরা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশের ৩১ বিদেশী নাগরিককে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে নাইজেরিয়ার ১২, উগান্ডার ৫, ক্যামেরুনের ৪, গাম্বিয়ার ৩, আইভরিকোস্টের ২, সেনগালের ১, টোগোর ১, মালির ১, কেনিয়ার ১ এবং মোজাম্বিকের ১ জন নাগরিক রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যাদের আটক করা হয়েছে তারা অধিকাংশ ছাত্র, খেলোয়াড় ও ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসেছে। অনেকের ভিসার মেয়াদ আগেই উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু তারা ইমিগ্রেশন বিভাগকে অবহিত না করে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছিল। তারা কোন বৈধ নথিপত্র দেখাতে পারেনি। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকরা খুন, প্রতারণা, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে আলজেরিয়ান এক নাগরিকের বিরুদ্ধে উত্তরায় এক কিশোরকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। সে কারাগারে আছে। কৃষ্ণপদ রায় জানান, বৃহত্তর আফ্রিকা মহাদেশের অধিকাংশ দেশ অপরাধপ্রবণ। এ ছাড়া সেখানে রয়েছে কর্মসংস্থানের অভাব। এতে আফ্রিকার নাগরিকরা ওই দেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে। যার অধিকাংশ তরুণ। বাংলাদেশেও তারা আসছে এবং বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আটককৃতদের মধ্যে অধিকাংশ অবৈধ জাল ডলার ও মাদক ব্যবসায় জড়িত। হুন্ডির মাধ্যমে এরা এক দেশ থেকে আরেক দেশে জাল ডলার পাচার করে থাকে। ঢাকার অনেক নিরীহ লোকজন তাদের খপ্পরে পড়ে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এমন একাধিক অভিযোগ পুলিশের কাছে এসেছে। এরা যেসব বাড়িতে ভাড়া থাকে ওইসব বাড়ির মালিককে অন্য ভাড়াটিয়াদের চেয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে থাকে। এ জন্য ওইসব বাড়ির মালিক বেশি ভাড়ার আশায় বিদেশী নাগরিকদের ভাড়া দিয়ে থাকেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আটককৃত যেসব আফ্রিকার নাগরিক ঢাকার বিভিন্ন বাড়িতে ভাড়া থাকতো তাদের এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে ওইসব বাড়ির মালিক জড়িত আছে কিনা, তা তদন্ত চলছে। তদন্তে অবৈধ কর্মকাণ্ডে যদি তাদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ের অভিযোগ উঠে তাহলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। আটককৃতদের মধ্যে শেখ জামালসহ আরও কয়েকটি ফুটবল দলের খেলোয়াড় রয়েছে। তাদের বিষয়ে তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট ফুটবল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান, ডিবির উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) শেখ নাজমুল আলম ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ (উত্তর) কমিশনার আবদুল আহাদ প্রমুখ।