শাইখ নুরুল ইসলাম ফারুকী শরীয়ত ও সুফিবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই বিভিন্ন সময়ে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিতো দুর্বৃত্তরা। এমনকি ফেসবুকেও তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হতো। কিন্তু ফারুকী ছিলেন নির্ভীক। সমঝোতা করে চলেননি বলেই ধর্মীয় উগ্রবাদীরা তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা। গতকাল দুপুরে ফারুকীর পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই অভিযোগ করেন। উগ্রবাদীরা যে তাকে হত্যা করেছে তা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে মন্তব্য করে আহমদ রেজা ফারুকী জানান, বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে ওই উগ্রবাদীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন তার পিতা। এ সংক্রান্ত ভিডিও তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে ফেসবুকে ফারুকীর ছবিতে ক্রস চিহ্ন এঁকে একটি চক্র প্রচারণা চালিয়েছে। ওই চক্র অনলাইনে এখনও সক্রিয় বলে দাবি করেন তিনি।
এটিকে একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে আহমদ রেজা ফারুকী বলেন, অথচ মামলাটি ৩৯৬ ধারায় ডাকাতিসহ খুন হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি আরও জানান, ফারুকীকে হত্যার পর শেরেবাংলানগর থানা পুলিশ মামলার এজাহার তৈরি করে ফারুকীর সেজ ছেলে ফয়সাল ফারুকীকে দিয়ে সই করিয়ে নেয়। ওই সময়ে ফারুকীর বড় ছেলে মাসুদ রেজা ফারুকী চাকরি সূত্রে নেদারল্যান্ডে ছিলেন। হজ এজেন্সি সংক্রান্ত কাজে মেজ ছেলে আহমদ রেজা ছিলেন সৌদি আরবে। আহমদ রেজা ফারুকী বলেন, ফয়সাল বয়সে ১৮ হলেও মামলা সম্পর্কে তার ধারণা কম। এখন আমরা মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারা যুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি।
নুরুল ইসলাম ফারুকী ব্যক্তিগত জীবনে দু’টি বিয়ে করেছেন জানিয়ে তার সন্তান আহমদ রেজা ফারুকী জানান, দু’টি সংসার হলেও তাদের মধ্যে কোন প্রকার বিরোধ বা মনোমালিন্য নেই। বরং তাদের সকল ভাই-বোনের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে। নুরুল ইসলাম ফারুকী মেঘনা ট্রাভেলসের ম্যানেজিং পার্টনার ও ফারুকী ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। কিন্তু ব্যবসা ক্ষেত্রে কারও সঙ্গে তার কোন শত্রুতা ছিল না। তিনি বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আমরা অপেক্ষা করতে রাজি আছি। তবু চাই এই হত্যা মামলার তদন্ত যেন মাঝপথে থেমে না যায়। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীয় ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তদন্তকারী কর্মকর্তারা নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। সেই সঙ্গে তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে বাসার ফটকে সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
টেলিভিশনের ইসলামি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক নুরুল ইসলাম ফারুকী ছিলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ইসলামি ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য। তাকে হত্যার পরপর তার দলের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন এ ঘটনায় টেলিভিশিনের ইসলামি অনুষ্ঠানের সাতজন উপস্থাপক, জামায়াতে ইসলামী এবং হেফাজতে ইসলামের হাত থাকতে পারে। এ বিষয়ে ফারুকীর ছেলে আহমদ রেজা ফারুকী বলেন, হত্যাকাণ্ডের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে কোন ইসলামি দলের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ করতে চাই না। আমরা চাই তদন্তে সত্য প্রকাশ পাবে এবং জড়িতদের কঠোর শাস্তি হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফারুকীর প্রথম স্ত্রী আয়শা বেগম, দ্বিতীয় স্ত্রী লুবনা ফারুকী, ফারুকীর ছোট ভাই আবদুর রউফ, বড় ছেলে মাসুদ বিন নূর, সেজ ছেলে ফয়সাল ফারুকী, ছোট ছেলে ফুয়াদ ফারুকী, বড় মেয়ে তাবাসসুম তুবা ও ছোট মেয়ে লাবিবা হুসনা লুবা। উল্লেখ্য, গত ২৭শে আগস্ট রাতে ফারুকীর পূর্ব-রাজাবাজারের বাসায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা পরিবারের সবাইকে অস্ত্র উঁচিয়ে জিম্মি করে বেঁধে রাখে। পরে ফারুকীকে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়।