সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

সিরিয়ায় দুপক্ষই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে : জাতিসংঘ

6

 

সিরিয়ায় সরকার ও বিরোধী দু’পক্ষই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। প্রধান জাতিসংঘ তদন্ত কর্মকর্তা একে সেলস্ট্রোর্মের ৮২ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়, সিরিয়ায় দু’পক্ষের মধ্যে চলমান সংঘর্ষে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে। সিরিয়ায় তদন্ত চালানো ৭টি হামলার ঘটনার মধ্যে ৫টিতেই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে বলে সংশয় প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে। তদন্তকারীরা বলছে, ৪টি হামলার ঘটনায় প্রাণঘাতী সারিন গ্যাস ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে। এর মধ্যে একটি হামলায় ব্যাপকমাত্রায় এ গ্যাস ব্যবহৃত হওয়ার আশংকাও উড়িয়ে দেননি তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েকটি হামলার শিকার হওয়াদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকসহ সরকারি সেনারাও আছে। যদিও এ হামলার ঘটনা, এর শিকার হওয়া মানুষ এবং ঘটনার স্থানের মধ্যে সরাসরি কোনো যোগসূত্র নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায়নি। মার্চে উত্তরাঞ্চলীয় আলেপ্পো শহরের কাছে খান আল আসাল, এপ্রিলে উত্তরাঞ্চলীয় শহর ইদলিবের কাছে সারাকেব এলাকায় এবং আগস্টে দামেস্কের কাছে জোবার ও আশরাফিয়াত এলাকায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের আলামত পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে সেলস্ট্রোর্মের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে ২১ আগস্টে রাজধানী দামেস্কের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ঘৌতা এলাকায় ব্যাপক মাত্রার সারিন গ্যাস হামলায় শত শত মানুষের মৃত্যুর পরিষ্কার এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেয়া হয়। আর এবার বৃহস্পতিবার প্রকাশিত সর্বশেষ ও চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিদবেদনে বিশেষজ্ঞরা সিরিয়ার জোবার, সারাকেব এবং আশরাফিয়াত শাহনায়ায় স্বল্পমাত্রায় রাসায়নিক সারিন গ্যাস ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন। সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখাই ছিল এ তদন্তের মূল লক্ষ্য।এ অস্ত্র কে ব্যবহার করেছে সে সম্পর্কিত বিষয়টি তদন্তের আওতাধীন ছিল না। সিরিয়ায় সরকার এবং বিদ্রোহী দু’পক্ষই একে অপরকে রাসায়নিক অস্ত্র হামলার জন্য দায়ী করে আসছে।এদিকে, সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধের কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়া সিরীয় শরণার্থীদের প্রতি সাহায্যের হাত না বাড়ানোয় লজ্জায় ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দের মাথা হেঁট হয়ে যাওয়া উচিত। শুক্রবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ‘সিরীয় শরণার্থী সংকট আন্তর্জাতিক ব্যর্থতা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দাতা দেশসমূহ শরণার্থীদের জন্য মাত্র ১২ হাজারের মতো স্থান দেয়ার প্রস্তাব করেছে, যেখানে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার স্থান নিশ্চিত করা। অ্যামনেস্টির মহাসচিব সলিল শেঠি বলেন, যেসব শরণার্থী সর্বস্ব হারিয়েছেন তাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরিতে ভূমিকা রাখতে ইইউ ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইইউভুক্ত দেশগুলো সিরীয় শরণার্থীদের জন্য যে সংখ্যক স্থান তৈরি করেছে তা সত্যিই লজ্জাজনক। তিনি সর্বস্ব হারানো শরণার্থীদের ‘অবৈধ পুশব্যাক অভিযানের’ হাত থেকে বাঁচাতে দেশের সীমান্ত খুলে দিতে ইইউ নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান। বর্তমানে পাশের ইউরোপীয় দেশগুলোতে সিরীয় শরণার্থীদের প্রবেশ কঠোর হাতে ঠেকানো হচ্ছে। খবর এএফপির।প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাত্র ১০টি ইইউর সদস্য দেশ সিরীয় শরণার্থীদের পুনর্বাসন বা মানবিক কারণে প্রবেশাধিকারের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবিত ১২ হাজার স্থানের মধ্যে জার্মানি ১০ হাজার, ফ্রান্স ৫শ ও স্পেন ৩০টি স্থানের প্রস্তাব দিয়েছে। লন্ডনভিত্তিক দাতব্য সংস্থাটি আরও জানায়, ব্রিটেন ও ইতালিসহ ১৮টি ইইউ সদস্য দেশ কোনো স্থান দেয়ার প্রতিশ্র“তি দেয়নি। শেঠি বলেন, এটা দুঃখজনক যে বহু শরণার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোতে প্রবেশ করতে গেলে তাদের হয় জোরপূর্বক ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে অথবা আটক করে অত্যন্ত খারাপ পরিবেশে রাখা হয়েছে। তাদের পর্যাপ্ত খাবার, পানি ও চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়নি। প্রতিবেদনে আরওবলা হয়, প্রায় ৫৫ হাজার সিরীয় শরণার্থী ইইউভুক্ত কয়েকটি দেশে প্রবেশ করে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থণা করেছে। সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরুর পর প্রায় ৯৭ শতাংশ শরণার্থী প্রতিবেশী লেবানন, জর্দান, তুরস্ক, ইরাক ও মিসরে আশ্রয় নিয়েছে।

Leave a Reply