রেলওয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি মামলার অভিযোগপত্রে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বরখাস্ত হওয়া বহুল আলোচিত মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধাকে বাদ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই অভিযোগে দায়ের হওয়া আরও ৪টি মামলার অভিযোগপত্রে মৃধাকে আসামি করা হলেও এবার মামলা দুটিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়েছে। রোববার রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের গুডস সহকারী ও রেকর্ড কিপার পদে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি মামলার অভিযোগপত্র চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর ?হাকিম (সিএমএম) মশিউর রহমানের আদালতে দাখিল করা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের কৌঁসুলি মাহমুদুল হক মাহমুদ জানান, দুটি মামলার অভিযোগপত্র সিএমএম আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। মামলা দুটির এজাহারে ইউসুফ আলী মৃধার নাম ছিল। কিন্তু তদন্তে তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এজন্য তাকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। আদালত ২৭ আগস্ট অভিযোগপত্রের ওপর আদেশের সময় নির্ধারণ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুডস সহকারী পদে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৩ সালের ১০ ফেব্র“য়ারি নগরীর কোতোয়ালি থানায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বরখাস্ত হওয়া মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধা এবং সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক শেখ ফাইয়াজ আলম। একই দিন রেকর্ড কিপার পদে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় ইউসুফ আলী মৃধা, গোলাম কিবরিয়া ও রেকর্ড কিপার সরওয়ার আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। বাদী শেখ ফাইয়াজ আলম ও মোস্তাফিজুর রহমান নিজেই মামলা দুটির তদন্ত করেন। তদন্তের পর গত ২৬ জুল?াই অভিযোগপত্র দুটি চট্টগ্রাম আদালতে দুদকের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় জমা দেন সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তারা। অভিযোগপত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ সালের ৩২ ধারা এবং দুদক বিধিমালা ২০০৭ সালের উপবিধির ১(এ) ক্ষমতাবলে এজাহারভুক্ত আসামি ইউসুফ আলী মৃধাকে বাদ দেয়া হয়। গুডস সহকারী নিয়োগ দুর্নীতির মামলার অভিযোগপত্রে শুধু গোলাম কিবরিয়াকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আর রেকর্ড কিপার নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে গোলাম কিবরিয়া ও সরওয়ার আলমকে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২), দণ্ডবিধির ১৬৬, ১৬৭, ৪৭৭(ক), ২১৭ ও ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী কেমিস্ট এবং ফুয়েল চেকার পদে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি মামলায় বর্তমানে ইউসুফ আলী মৃধাসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। মৃধার বিরুদ্ধে থাকা টিকিট ইস্যুয়ার নিয়োগ দুর্নীতির একটি মামলায় ৭ আগস্ট এবং টুল কিপার নিয়োগ দুর্নীতির একটি মামলায় ৬ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর সময় নির্ধারিত রয়েছে।
২০১২ সালের ৯ এপ্রিল তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের গাড়ি আকস্মিকভাবে ঢুকে যায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দফতরে। সেই গাড়ি থেকে বস্তাভর্তি ৭০ লাখ টাকা পান বিজিবির সদস্যরা। এ সময় ওই গাড়িতে ইউসুফ আলী মৃধা ছাড়াও রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর ঢাকা বিভাগীয় কমান্ডেন্ট এনামুল হকও ছিলেন। পরে ওই ঘটনার জের ধরে রেলমন্ত্রীর পদ ছাড়েন সুরঞ্জিত। বরখাস্ত হন ফারুক এবং সাময়িক বরখাস্ত হন মৃধা ও এনামুল। এ ঘটনার পর দীর্ঘদিন পলাতক থাকা ইউসুফ আলী মৃধা সম্প্রতি আÍসমর্পণ করে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।