সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না, আন্দোলন করে সরকারকে সরাতে হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের নেতারা। মঙ্গলবার এক বিক্ষোভ সমাবেশে তারা বলেন, সরকার গণতন্ত্রের লেবাস পরে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এজন্য নিজেদের পছন্দমতো আইন তৈরি করছে। কিন্তু কোনো কালো আইনই এ অবৈধ সরকারকে রক্ষা করতে পারবে না। দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে। সরকার পতনের সেই আন্দোলনে জোটের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামার আহ্বান জানান তারা।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বাতিলের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এ সমাবেশের আয়োজন করে। অসুস্থ থাকার কারণে সমাবেশে আসেননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, যে লড়াই চলছে, তা ২০ দলীয় জোটের ক্ষমতায় যাওয়া বা খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী করার লক্ষ্যে নয়, এটা গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই।
জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু কাজে বিশ্বাস করে না। তাদের কর্মকাণ্ডের কোনো সমালোচনা যেন না করা যায়, সেজন্য সম্প্রচার নীতিমালা করা হয়েছে।
বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে নিয়ে যাওয়ার কঠোর সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, এমন সংসদ যেখানে কোনো জনপ্রতিনিধি নেই, ৫ শতাংশ মানুষও ভোট দেয়নি, এই সংসদে অভিশংসনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটি দল, যারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে। অন্তরে বিশ্বাস করে না। তারা জনগণের কথা চিন্তা করলে, গণতন্ত্রের কথা ভাবলে সম্প্রচার নীতিমালা করতে পারত না। বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে তুলে দেয়ার কথা বলত না। সরকারের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না, আন্দোলন করে এ সরকারকে সরাতে হবে।
প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২০ দলীয় জোটের সমাবেশ চলে। এর আগে মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা থেকে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড হাতে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে জড়ো হয়। বিকাল ৩টা থেকে সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও দুপুরের মধ্যেই সমাবেশস্থল লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্বপাশে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের সামনের রাস্তায়, মৎস্য ভবন মোড়ে, পাশের রমনা উদ্যানে হাজার হাজার নেতাকর্মী অবস্থান নিয়ে থাকে।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বেলা ২টা ৫০ মিনিটে সমাবেশ শুরু হয়। এরপর ২০ দলীয় জোটের নেতারা বক্তব্য শুরু করেন। নেতাদের বক্তব্য চলাকালে মাঝে মাঝেই গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনও বা জোরে বৃষ্টির দমকা হাওয়া বয়ে যায়। বৃষ্টিতে ভিজে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে বক্তাদের বক্তব্য শোনেন। ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, এমকে আনোয়ার, হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, শওকত মাহমুদ, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকতউল্লা বুলু, মিজানুর রহমান মিনু, কেন্দ্রীয় নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবদুস সালাম, শিরিন সুলতানা, আনোয়ার হোসেন, কবি আবদুল হাই শিকদার, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মীর সরাফত আলী সপু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ। জোট নেতাদের মধ্যে জামায়াতের নায়েবে আমীর মুজিবুর রহমান, এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) টিআইএম ফজলে রাব্বী, আবদুল লতিফ নেজামী, মাওলানা ইসহাক, শফিউল আলম প্রধান, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ।
মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, সামনে কঠিন সময় আসছে। সরকার আমাদের জোটনেত্রীকেও গ্রেফতার করতে পারেন। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল উঠিয়ে দেয়া এবং সম্প্রচার নীতিমালা একই সূত্রে গাথা। এটা সরকারের দুরভিসন্ধিমূলক সিদ্ধান্ত। এসব কালো আইন জনগণ বাস্তবায়ন করতে দেবে না।
সভাপতির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার বলছে বিএনপিকে দিয়ে গণআন্দোলন সম্ভব নয়। কালো পতাকা মিছিল এবং আজকের সমাবেশ দেখুন। মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। আন্দোলনের মুখে আপনাদের বিদায় নিতে হবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আমরা আছি। এ আন্দোলন বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলন। বাংলাদেশকে ৪০ বছর পেছনে নেয়া যাবে না। ১৮ কোটি মানুষ এখন প্রতিবাদ করবে।’
অসুস্থ থাকায় সমাবেশে আসতে পারেননি খালেদা জিয়া : সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি যাননি। সমাবেশের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস জানিয়েছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে সমাবেশে উপস্থিত হতে পারেননি খালেদা জিয়া। এজন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।