Saturday, January 25Welcome khabarica24 Online

সংসদ ভবনে বাণিজ্যমন্ত্রীর দপ্তর পুড়ে গেছে

26605_b4

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ-পূর্ব ব্লকের ৪৩৩ নং রুমের আসবাবপত্র পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। কয়েক দশক আগে তৈরী শক্ত কাঠের টেবিল-চেয়ার পুড়ে একেবারে কয়লা হওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। শুধু চেয়ার-টেবিল নয় রুমের মধ্যে থাকা কম্পিউটার, আলমারি ও কাগজপত্র পুড়ে গেছে। এছাড়া, রুমের পর্দা-কার্পেট ও কাঠের দরজা-জানালা পুড়েছে। পাশের ৪৩২ নং রুমের পার্টিশনসহ বেশ কিছু আসবাবপত্রও পুড়েছে। পুড়ে গেছে ৪৩৩ নং রুমের ঠিক উপরের রুম ৫৩২ নং রুমের জানালার পর্দা ও একটি কম্পিউটার মনিটর।
গতকাল বুধবার সকালে অফিস শুরুর আগেই ভয়াবহ এই অগ্নিকা- ঘটে। ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সংসদ ভবনের নিরাপত্তা রক্ষীরা দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ায় খুব অল্প সময়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। সময়মতো আগুন নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে তা আরও ভয়াবহ হতে পারতো বলে উপস্থিত সকলেই মন্তব্য করেছেন। ওই অগ্নিকা-ের সঠিক কোন কারণ জানা যায়নি। তবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকা-া ঘটতে পারে বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মন্তব্য করেছেন। সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকা সংসদ ভবনের অভ্যন্তরে আগুন এতটা ভয়াবহ হলো কিভাবে তা নিয়েও সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সরজমিন দেখা যায়, যে কক্ষে আগুন লেগেছিল তার সামনেই সংসদের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক মেশিন এবং প্রশিক্ষিত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা থাকায় আগুন নেভানো সহজ হয়েছে। বাইরে থেকে এসে আগুন নেভাতে হলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতো। সংশ্লিষ্টরা জানান, যে ঘটনা ঘটেছে সেটা সংসদ ভবনের ইতিহাসে সব থেকে বড় দুর্ঘটনা। এই ঘটনা তদন্তে জাতীয় সংসদের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) সুলতান মাহমুদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সংসদ সচিবালয়। ওই কমিটিকে যত দ্রুত সম্ভব রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া, গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষে দায়িত্বরত কর্মকর্তা শাহজাদী সুলতানা জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সংসদ ভবনে আগুন লাগে বলে খবর আসে। এরপর ফায়ার ব্রিগেডের চারটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৫ মিনিটের প্রাণান্তর প্রচেষ্টায় ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
সংসদ সচিবালয়ের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস আশরাফুল হক জানান, জাতীয় সংসদের দক্ষিণ-পূর্ব ব্লকের চতুর্থ তলায় বাণিজ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিবের কক্ষে আগুনের সূত্রপাত হয়। ওই রুমটি পুড়ে গেলেও মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ যে রুমে বসেন, সেই রুমে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তিনি আরও জানান, আগুনের শিখা উপরে উঠে পঞ্চম তলার কমিটি শাখা ২-এর কক্ষের জানালার পর্দায় আগুন ধরে যায়। পর্দার আগুন থেকে কম্পিউটারের মনিটরে আগুন লাগে। তবে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের চেষ্টায় আগুন আর বাড়তে পারেনি। নিরাপত্তারক্ষীরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর পুরো সংসদ ভবনে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকালে অফিসে এলে তাদের দীর্ঘ সময় বাইরে অপেক্ষা করতে হয়। ধোঁয়ার কারণে অনেকেই আতঙ্কে অফিসে ঢোকেননি। এদিকে আগুন লাগার পরপরই সংসদ ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। অবশ্য আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর দক্ষিণ-পূর্ব ব্লক ছাড়া সব জায়গায় পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয়। তবে এ ব্লকে আজ বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংসদ সচিবালয়ের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) জিয়াউল আহসান। তিনি জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে পানি ব্যবহারের কারণে বৈদ্যুতিক বোর্ডে পানি ঢুকে গেছে। পানি না শুকানো পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব ব্লকের নিচতলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যাবে না। সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রীর দপ্তরের কর্মচারী আসলাম জানান, ওই দপ্তরটি সাধারণত অধিবেশন চলাকালে নিয়মিত খোলা হয়। বাকি সময়ে বন্ধ থাকে। অধিবেশন শুরুর আগে মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সেখানে বসেন। গতকাল সংসদ অধিবেশন শুরুর দিনে অফিসটি খোলা হয়েছিল। মন্ত্রীও তার দপ্তরে বসেছিলেন। রাতে যথারীতি অফিস বন্ধ করে বাসায় ফিরে যান। সকালে এসে সাজানো অফিসটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত দেখতে পান। ক্ষয়ক্ষতির কোন তালিকা করা হয়নি বলে তিনি জানান।