অবশেষে মিরসরাইতে জনতার হাতে হাতেনাতে ধরা পড়লো সোনার কাঠি ভরা স্বর্ণের কলসী দাতা জ্বীনের বাদশা। পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে ও ব্যর্থ হয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে মিরসরাই থানা পুলিশে সোপর্দ হলো উপজেলার এই বহুল আলোচিত জ্বীনের বাদশা। ইতিমধ্যে এই ভন্ড প্রতারক বিভিন্ন সাধারন মানুষ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সর্বশেষ আমবাড়ীয়া গ্রামের কয়েকজন থেকে হাতিয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। একটি পিতলের কলসি ও ভিতরে কিছু পিতলের ছোট ছোট কাঠি দিয়ে অনেক সহজ সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে পথে বসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে ইতিমধ্যে। অবশেষে তারাকটিয়া, গড়িয়াইশ সহ বিভিন্ন গ্রামে ধোকা দেয়ার পর ধরা পড়লো উপজেলার আমবাড়ীয়া গ্রামে। মিরসরাই উপজেলার আমবাড়ীয়া গ্রামে স্থানীয় নোয়াপাড়া মসজিদের ইমাম আব্দুল হান্নান এর স্ত্রী খাদিজা আক্তারকে থেকে ৯০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে আবার টাকা নিতে আসলে গ্রামবাসীকে খবর দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয় এই ভন্ড প্রতারক মহিলা জ্বীনের বাদশাকে।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে অভিযোগকারী বৃদ্ধ মহিলা তাইতের নেছা (৬৫) এই প্রতিবেদককে বলে উপজেলার তারাকাটিয়া গ্রামের একটি ঝিল গাছের গোড়ায় মাটির নিচে থাকা স্বর্ণের কলসীটি পেলে অন্তঃত কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবে সে। আর সেই জন্য শর্ত অনুযায়ী ভন্ড জ্বীনের বাদশা নামক খোনার আছমাকে ৭লক্ষ টাকা জোগাড় করে হাতে তুলে দেয় বৃদ্ধা তাইতের নেছা। এতো টাকা কোথা থেকে ব্যবস্থা করেছে জানতে চাইলে বৃদ্ধা বলে তার মেয়ে জাহানারা বেগম এর মাধ্যমে মেয়ে জামাইয়ের ব্যবসার টাকা সহ কয়েক মেয়ে থেকে জোগাড় করে এনেছে। বিষয়টি ওদের স্বামীরা ও কেউ জানেনা। রাতের আঁধারে সেখান থেকে একটি কলসি উদ্ধার করে। অনেক লুকিয়ে কলসিটি ও ভেতরে থাকা সব স্বর্ণকারকে দেখালে স্বর্ণকার এটিকে পিতল বললে মাথায় বাজ পড়ে। এবার জ্বীনের বাদশা সেই আছমা আবার বলে পাওয়া কলসিটি স্বর্ণের কিন্তু জ্বীন বাবার নামে এক লক্ষ টাকা দামের একটি সাদা গরু দান করলে এই পিতলের কলসি ও কাঠিগুলো জ্বীনের আছর থেকে মুক্ত হয়ে স্বর্ণে রুপ লাভ করবে। এখন ধার করা টাকার জন্য মেয়েদের সংসার ভাংগার উপক্রম। আবার মৌলভি হান্নানের স্ত্রী খাদিজা আক্তার কে বলা পার্শ্ববর্তি মনির হোসেনের জমিতে থাকা স্বর্ণের কলসিটি পাইয়ে দিতে ৯০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। তিনি ধার করে ও গলার চেইন বিক্রি করে এই টাকা জোগাড় করে দেয়। অবশেষে রাতের আঁধারে একটি কলসি এসে দিলে দেখা যায় সেটি ও পিতলের। এবার তাকে ও বলে এবার আরো ৩০ হাজার টাকা দামের একটি গরু দিতে হবে তবেই কলসীটি জ্বীনের আছর থেকে মুক্ত হয়ে স্বর্ণে রুপ নিবে। এভাবে এক এক করে অনেক অভিযোগ একত্রিত হতে থাকলে অবশেষে হান্নান হুজুরের স্ত্রী খাদিজার বিষয়গুলো সন্দেহ হতে থাকে।
সে তার গরুর জন্য ৩০ হাজার টাকা এবং তাইতের নেছার গরুর একলক্ষ টাকা নিয়ে যেতে গতকাল ২৭ এপ্রিল রবিবার সকাল ১১টায় আমবাড়ীয়াস্থ তার ঘরে আসতে বলে এবং তার আগে গ্রামের লোকজনকে বলে রাখে। ঠিক সময় মতো উক্ত জ্বীন ফকির আছমা এসে পৌছালেই গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে মিরসরাই থানায় খবর দিলে এস আই আক্কাস ও এস আই মাসুদ মহিলা পুলিশ সহ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে জ্বীনের বাদশা আছমা (২৭) ও তার মা রুনা (৫০) কে পুলিশে সোপর্দ করে। এসময় পুলিশ ধোকা দেবার জন্য রাখা পিতলের একটি কলসি ও আরো কিছূ সামগ্রী জব্দ করে। থানায় নিয়ে আসার পর এই জ্বীনের বাদশা নামক মহিলার নাম ঠিকানা জানতে চাইলে সে তার নাম আছমা আক্তার ও বাড়ী মিঠাছরার গড়িয়াইশ গ্রামে বলে জানায়। এই বিষয়ে মীরসরাই থানার ওসি ইমজিয়াজ ভূঞা জানান অভিযোগ পেয়ে আমরা তাকে আটক করে এনেছি, এখন তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেয়া হবে। আবার আটককারী এসআই আক্কাস আলী জানান এমন অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে, এখন যেহেতু সাক্ষ্যপ্রমানে পাওয়া গেছে, অভিযোগের ভিত্তিতে পুরো চক্রই বেরিয়ে আসবে বলে আসা করছি। অভিযোগে আরা জানা যায় ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সাধারন মানুষদের বোকা বানিয়ে অন্তঃত ৫০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই আছমা আক্তার। এই চক্রের সাথে আছমার মা রুনা ভাই সহ পুরো পরিবারই জড়িত বলে ভুক্তভোগিরা জানান।