বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড়

e3

 

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সারা দেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় অব্যাহত রয়েছে। যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় পাকিস্তান পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণের ঘটনায় গতকালও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষের ক্ষোভে-বিক্ষোভে উত্তাল ছিল সারা দেশ। রাজধানীতে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী-সমর্থকরা কূটনৈতিক পল্লী গুলশানে দ্বিতীয় দিনের মতো পাকিস্তান হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গেলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এ সময় গুলশান ২ নম্বর চত্বরে পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তি ও দফায় দফায় লাঠিপেটায় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে গণজাগরণ মঞ্চ আজ সারা দেশে বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে আজ বিকাল ৩টায় শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
গত বুধবার পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি থেকে সরকারকে ২০ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আলটিমেটাম দেয় গণজাগরণ মঞ্চ। গতকাল বিকাল ৩টায় আলটিমেটামের সময় পেরিয়ে গেলে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মঞ্চের নেতা-কর্মীরা গুলশান ২ নম্বর চত্বরে জমায়েত হন। সেখান থেকে পাকিস্তান হাইকমিশন অভিমুখে মিছিল শুরুর সময় পুলিশ কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে পথ আগলে দাঁড়ায়। এ সময় প্রথমে তর্কাতর্কি ও পরে ধ্বস্তাধ্বস্তির এক পর্যায়ে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মঞ্চের তরুণ-তরুণীসহ মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিসেবী, নারী নেত্রী প্রমুখের ওপর অন্তত তিন দফা হামলা চালায় পুলিশ। লাঠিপেটা, রাইফেলের বাঁট দিয়ে আঘাত ছাড়াও কিল, ঘুষি, লাথি মারতেও দেখা গেছে পুলিশকে। এক পর্যায়ে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। লাঠির আঘাতে ডা. ইমরান এইচ সরকারের মাথা ফেটে যায়। এক পর্যায়ে পুলিশ ডা. ইমরান এইচ সরকার ও ও নিজেরা করি’র নির্বাহী পরিচালক খুশী কবিরসহ বেশ কয়েকজনকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নেয়। তবে কিছু সময় পর এই দুজনকে ছেড়ে দিলেও বাকিদের থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, যাদের আটক করা হয়েছিল, তাদের সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে মঞ্চের অন্যতম সংগঠক মারুফ রসূল অভিযোগ করেছেন, পুলিশের হামলায় তাদের শতাধিক কর্মী আহত হন। গ্রেফতার করা হয়েছে ২০ জনকে। ঘটনার পর সন্ধ্যায় গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে আজ সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, আজ শুক্রবার বিকাল ৩টায় শাহবাগসহ সারা দেশে একযোগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম। ঘটনার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি এ কর্মসূচিতে ছিলাম। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চলছিল। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারপরও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর হঠাৎ লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের জবাবদিহি করতে হবে। আমি যতদূর জানি সব দূতাবাস থেকে সম্ভবত সরকারকে বলা হয়েছে নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়। তবে সরকার পুলিশকে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। সরকারের নির্দেশনা ছাড়াই পুলিশ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে। পুলিশের কোন কোন সদস্য এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা খুঁজে বের করতে হবে। ন্যায়কে ন্যায় আর অন্যায়কে অন্যায় বলতে হবে। জানা গেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্নের ২০ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষে বিকাল ৩টা থেকে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা মিছিল নিয়ে গুলশান ২ নম্বরে সমবেত হতে থাকে। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে গণজাগরণের কর্মীরা পাকিস্তান হাইকমিশনের সামনে যেতে চাইলে তাতে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় তারা বাধা উপেক্ষা করে সামনে এগোতে থাকলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা শুরু করে। এ সময় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও স্লোগানকন্যা শাম্মী আখতারসহ আরও তিন কর্মীকে কামাল আতাতুর্ক রোডের ল্যাবএইডের সামনে থেকে আটক করে পুলিশ। তারা আহতদেও দেখতে ল্যাবএইডে যাচ্ছিলেন। এর আগে গুলশানে শাম্মী সংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, তারা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে পাকিস্তান হাইকমিশন অভিমুখে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বিনা উসকানিতে পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয় এবং মারধর করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করার পাশাপাশি তাদের লাথি মারতে থাকে। শুধু তাই-ই নয়, এ সময় পুলিশের এপিসি কার গণজাগরণ মঞ্চের মিছিলের দিকে দ্রুতগতিতে ছুটে যেতে দেখা যায়। এ সময় গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে পাকিস্তান হাইকমিশনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ঘিরে ধরে ধাওয়া করে। এতে গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা অলিগলিতে ঢুকে পড়লে পুলিশ সেখানেও ধরপাকড় অব্যাহত রাখে। জানা গেছে, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ও খুশী কবিরকে কিছুক্ষণের জন্য আটকে রাখে পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জের এক পর্যায়ে ইমরান এইচ সরকার ও মুক্তিযোদ্ধাসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এর মধ্যে আবুল কালাম আজাদ বীরপ্রতীক নামে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাও রয়েছেন। পুলিশের লাঠিচার্জ ও আটকের পরে ইমরান এইচ সরকার বলেন, আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। পুলিশের এই ন্যক্কারজনক ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ সময় ইমরান এইচ সরকার পুলিশের বিরুদ্ধে মঞ্চের কর্মীদের ওপর নির্যাতন ও অসদাচরণের অভিযোগ তোলেন। গুলশান পুলিশের উপ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে কূটনীতিক এলাকায় মিছিল-মিটিং নিষেধ। এ কারণেই গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ঠিক কতজনকে আটক করা হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- চট্টগ্রাম : শুধু ক্ষমা প্রার্থনার দাবি নয়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার জোর দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রামে পেশাজীবী জনতার মানববন্ধন সমাবেশে। পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, চট্টগ্রামের উদ্যোগে এ মানববন্ধন সমাবেশ থেকে জাতিসংঘ, কমনওয়েলথসহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন-সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণীর পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠক, প্রতিনিধিরা এমন দাবি জানান। একই সঙ্গে ঢাকায় পাকিস্তান অ্যাম্বাসি ঘেরাওকালে গণজাগরণ মঞ্চকে বাধা প্রদান, তারানা হালিম এমপিসহ গণজাগরণের নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটায় নিন্দা জানানো হয়। বগুড়া : গতকাল বগুড়ায় জেলা যুব মহিলা লীগ ইমরান খানের কুশপুত্তলিকা দাহ ও পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে ফেলে। সিলেট : সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় এ মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ প্রমুখ। নারায়ণগঞ্জ : গতকাল শহরের চাষাঢ়া বিজয়স্তম্ভের সামনে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা ও ইমরান খানের কুশপুত্তলিকা দাহ করে মহানগর আওয়ামী লীগ।
গণজাগরণ মঞ্চের আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভ : সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী মারুফ রসূল। এ সময় তিনি মঞ্চের আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবি করেন। মারুফ রসূল জানান, মঞ্চের মুখপাত্র ইমরানের মাথা, বুক ও পিঠে আঘাত লেগেছে। তিনি আরও জানান, পুলিশের পিটুনিতে তাদের অন্তত ২০ জন কর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে মঞ্চের কর্মী মাহমুদুল হক মুন্সি ও আরিফ নূরের অবস্থা গুরুতর। তাদের মধ্যে মাহমুদুল হককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও আরিফ নূরকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উৎস- বাংলাদেশ-প্রতিদিন

Leave a Reply