নূর হোসেনের নেটওয়ার্কের খোঁজে মাঠে নেমেছে কলকাতার পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে গ্রেপ্তার ছাড়া আরও দুই ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে নূর হোসেনের সঙ্গে কলকাতায় প্রবেশ করে। তারা সহ নূর হোসেন স্থানীয়ভাবে কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কাদের আশ্রয়ে ছিল, অর্থের যোগান দেয় কারা- এসব প্রশ্ন সামনে রেখে তদন্তে এগোচ্ছে কলকাতা পুলিশ। নূর হোসেন ও তার সঙ্গীদের জেরা করে যে সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তার ভিত্তিতেই পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। নূর হোসেন ও তার সঙ্গীদের কাছে পাওয়া ১১টি সিম কার্ডের কল লিস্ট বের করা হয়েছে। এই কল লিস্ট অনুযায়ী তারা গত দু’মাসে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তা খতিয়ে দেখার জন্য এটিএসের তিন সদস্যের একটি টিম তৈরি করা হয়েছে। গত রোববারই দুই সঙ্গীসহ নূর হোসেনকে বাগুইআটি থানা থেকে সরিয়ে নিয়ে উত্তর বিধাননগর থানার অ্যান্টি টেররিস্ট সেলের লকআপে রাখা হয়েছে। সোমবার বিধাননগর কমিশনারেটের প্রধান রাজীবকুমার নিজে নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। উল্লেখ্য, রাজীব কুমার অতীতে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডির প্রধান হিসেবে বাংলাদেশী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করায় মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন। আর তাই পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশী অপরাধীদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকার কারণেই তিনি জেরা করে কিভাবে নূর হোসেন পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় পেয়েছে এবং কারা তাকে সাহায্য করেছে তা জানতে চাইছেন। এমনকি নূর হোসেন হাওয়ালা ব্যবসা বা অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিনা বা এই ধরনের কাজ যারা করে তাদের সাহায্য পেয়েছেন কিনা তা-ও পুলিশ জানার চেষ্টা করছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, নূর হোসেন আগেও বহুবার কলকাতায় এসেছে। কলকাতায় তার নিজস্ব নেটওয়ার্ক থাকা মোটেই অসম্ভব নয়। তবে এদিন পর্যন্ত নূর হোসেন ও তার দুই সঙ্গী পুলিশকে চাঞ্চল্যকর কোন তথ্য জানায়নি বলেই জানা গেছে। তবে অসমর্থিত খবরে বলা হচ্ছে, নূর হোসেন নাকি নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছে। তবে পুলিশের এক অফিসার বলেছেন, বাংলাদেশে নূর হোসেনের অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের চেয়ে পুলিশ পশ্চিমবঙ্গে আসার পর তার তৎপরতা সম্পর্কেই বেশি জানার চেষ্টা করছে। গত দু’মাস কোথায় কোথায় সে আত্মগোপন করেছিল সে সব জেনে সেখানেও অভিযান চালানো হবে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যেই কোন সন্ত্রাসী বা জঙ্গির সঙ্গে নূর হোসেনের যোগাযোগ হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে পুলিশ বিস্তারিত অনুসন্ধান চালাচ্ছে। তবে এদিন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে এই গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে কোন তথ্য মিডিয়াকে জানায়নি। বরং জিজ্ঞাসাবাদে দায়িত্বপূর্ণ কর্তারা তাদের অপারগতাই জানিয়েছেন। ফলে নানা বিভ্রান্তির খবর মিডিয়াতে প্রকাশিত হচ্ছে। পুলিশই জানিয়েছে, অপরাধীদের কাছ থেকে কোন অস্ত্র পাওয়া যায়নি একথা সরকারিভাবে আদালতে জানানো সত্ত্বেও অনেক জায়গায় লেখা হয়েছে অস্ত্র পাওয়া গেছে এবং অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের অন্যতম আসামি নূর হোসেনকে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ গত শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করে। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় তার দুই সঙ্গী ওহিদুল জামান শালিম ও খান সুমনকে। এদের ৮ দিনের জন্য পুলিশ রিমান্ডে রাখা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, নূর হোসেনের বিষয়ে ইন্টারপোলের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেলেও সঙ্গী দু’জনের সঠিক পরিচয় জানতে চেষ্টা করছে তারা। পুলিশ সূত্র জানায়, নূর হোসেন বাংলাদেশ এবং ভারতে অবস্থানকালে যেসব লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তাদের বিষয়ে অনেক তথ্যই তাদের কাছে এসেছে। এর আগে ঢাকায় অবস্থানকালে নূর হোসেন নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সাহায্য চান। দুই জনের ওই ফোনালাপ প্রকাশ হওয়ায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। ফোনে শামীম ওসমানকে নূর হোসেন বলেছিলেন ‘ভাই ভাই ভাই আমার বহুত প্রবলেম ভাই। ভাই আমি লেখাপড়া করি নাই, আমার অনেক ভুল আছে ভাই। ভাই আমি লেখাপড়া করি নাই, আমার অনেক ভুল আছে ভাই। আপনে আমার বাপ লাগেন ভাই। আপনেরে আমি অনেক ভালবাসি ভাই।’ জবাবে শামীম ওসমান বলেছিলেন ‘খবরটা পৌঁছে দিলাম না, পাইছিলা?’ নূর জবাবে বলে ‘হ, আপনেরে আমি অনেক ভালবাসি ভাই, আমার পোলাডা ছোট মইরা যাইবো ভাই। আমার কান্দে বন্দুক ভাই।’ অপর প্রান্ত থেকে শামীম বলেন, ‘সময় দাও একটু। তুমি এত চিন্তা করো না, সময় দাও। আর তুমি একটু গৌরদার লগে দেখা করে আসো না।’ পরে নূর হোসেন বলে, ‘ভাই আমারে দিল্লি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন।’ জবাবে শামীম বলেন, ‘এখনও কোন সমস্যা হবে না। কোন জায়গার ইয়া নাই? সিল নাই?’ নূর হোসেন বলে ‘না না, আছে আছে ই আছে। সিল আছে কিন্তু যামু ক্যামনে সব জায়গায় নাকি এলার্ট? শামীম বলেছিলেন ‘মনে হয় না।’ ‘আগাইতে থাকো।’ নূর হোসেনের সঙ্গে শামীম ওসমানের কথোপকথনের এই অডিও প্রচারের পর নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে তিনি নূর হোসেনকে পালাতে সহায়তা করেছেন। তবে শামীম দাবি করেছিলেন তিনি নূর হোসেনকে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
ফ্ল্যাটের মালিক লাপাত্তা: কলকাতা বিমানবন্দরের অদূরে ভিআইপি রোডের উপর অবস্থিত ইন্দ্রপ্রস্থ আবাসনের যে ৫০৩ নম্বর ফ্ল্যাটে নূর হোসেন ও তার সঙ্গীরা গত ১০ দিন ধরে আশ্রয় নিয়েছিল সেই ফ্ল্যাটের মালিক লাপাত্তা বলে পুলিশ জানিয়েছে। ফ্ল্যাটটির মালিক সীমা সিং ও কাজল সিং তাদের ফ্ল্যাট থেকে তিন বাংলাদেশী অপরাধী ধরা পড়ার খবর জানার পরও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আর তাই তাদের সম্পর্কেও পুলিশ খোঁজ খবর শুরু করেছে। পুলিশের এক অফিসার এই প্রতিবেদককে বেেলছেন, এই ধরনের ক্ষেত্রে মালিকরাই পুলিশের কাছে ছুটে আসেন। কিন্তু নূর হোসেন যে ফ্ল্যাটে ছিলেন সেই ফ্ল্যাটের মালিক সোমবার পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে দেখা করেনি। তাই পুলিশ মনে করছে, ৫০৩ নম্বর ফ্ল্যাটের মালিকরা এলাকার অপরাধীদের পরিচিত। তাদের মাধ্যমেই মোটা অঙ্কের বিনিময়ে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেয়া হয়। এক্ষেত্রেও দু’মাসের জন্য প্রায় ২০ হাজার রুপির চুক্তিতে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। বাপী সাহা নাম দিয়ে নূর হোসেন ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিল দু’মাসের জন্য। অতিথিদের সম্পর্কে পুলিশের সতর্কতা সত্ত্বেও ফ্ল্যাটের মালিক কোন রকম খোঁজখবর করার প্রয়োজন মনে করেনি। পুলিশের মতে, এলাকার পরিচিত অপরাধীর মাধ্যমে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়া হয়েছিল। কে বা কারা সেই ব্যক্তি যাদের মাধ্যমে নূর হোসেন ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিল তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
নূর হোসেনকে ফেরত চেয়ে চিঠি পাঠাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
বিশেষ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারের প্রধান আসামি নূর হোসেনকে ফেরত চেয়ে চিঠি পাঠাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতিমধ্যে চিঠির খসড়া তৈরি হয়েছে। আজ দিনের কোন এক সময় চিঠিটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিকিউকে মুসতাক আহমেদ মানবজমিনকে জানান, ফেরত আনার জন্য চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যে চিঠিটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহিত উদ্দিন গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে নূর হোসেন ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার কথা জানানো হয়। এর ভিত্তিতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নূর হোসেনকে ফেরত আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ পাওয়ার পরই দ্রুত দেশে ফেরত আনতে ভারত সরকারের কাছে চিঠি দেয়া হবে। ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা নূর হোসেন সম্পর্কে দূতাবাসের মাধ্যমে তথ্য চেয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানালেন, নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনতে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করা হয়েছে। আমরা ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে নূর হোসেন ও তার সহযোগীদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে তথ্য চেয়েছি। এর আগে গত শনিবার রাতে ভারতের কলকাতা পুলিশ নূর হোসেন ও তার সহযোগীদের কলকাতার দমদম নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস বিমানবন্দরের পাশে কৈখালী এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার করে। এনিয়ে গত রোববার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, নূর হোসেন ও তার সহযোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরই তাদের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবো। ওদিকে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের বিরুদ্ধে গত ২৭শে মে রেড ওয়ারেন্ট জারি করে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল। ফ্রান্সভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি ২৭শে মে বিকালে তাদের ওয়ানটেড পারসনের রেড ওয়ারেন্ট পাতায় নূর হোসেনের নাম সংযুক্ত করে। যদিও রেড ওয়ারেন্টভুক্ত করতে গত ২২শে মে পুলিশ সদর দপ্তরকে চিঠি দেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ প্রশাসন। পরে পুলিশ সদর দপ্তর রেড ওয়ারেন্টের জন্য ইন্টারপোলকে চিঠি দেয়।
নূর হোসেনের গ্রেপ্তারের তথ্য সরকারের কাছে নেই: আশরাফ
কলকাতায় নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন গ্রেপ্তারের বিষয়ে সরকারের কাছে কোন তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। রাজনৈতিক বক্তব্যে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের আরও শালীন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজনীতিতে শিষ্টাচার থাকা উচিত। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বলে লাভ হবে না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, তবে রাজনৈতিক বক্তব্যে নেতাদের শালীনতা বজায় রাখতে হবে। গতকাল রাজধানীর খামার বাড়িতে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরে ৩ দিনের জাতীয় ফল উৎসবের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। নূর হোসেনের গ্রেপ্তারের বিষয়ে সরকার যা জেনেছে, পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছে বলে উল্লেখ করেন আশরাফ। ফলে ফরমালিন মেশানোর বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ফরমালিন যারা দেয় তারা ‘পাবলিক এনিমি’ (জনগণের শত্রু)। এটা পুলিশ-দারোগা দিয়ে বন্ধ করা সম্ভব নয়। জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
এ সময় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বৃক্ষরোপণ করে ‘ফলজ বৃক্ষরোপণ পক্ষ’র উদ্বোধন করেন। পরে তারা ফলের বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। অধিদফতর প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপণ করেন সৈয়দ আশরাফ। এর আগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নিয়ে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি হয়। র্যালিটি সংসদের দক্ষিণ প্লাজা হয়ে আবার খামার বাড়ি এসে শেষ হয়। এবারের ফল প্রদর্শনীর মূল প্রতিপাদ্য ছিল; ‘দেশী ফলের অনেক গুণ, নেইকো জুড়ি তার। স্বাদে অর্থে তুলনাহীন পুষ্টি কিংবা আহার।’ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. এসএম নাজমুল ইসলামের সভাপতিত্বে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন।
নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে আইনজীবীদের বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, কলকাতায় গ্রেপ্তার হওয়া নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার প্রধান আসামি কাউন্সিলর নূর হোসেনকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আইনজীবীরা। চলমান আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে সোমবার দুপুরে আদালতপাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও শ্বশুর সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলামকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। আইনজীবীদেরও হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমরা এই হুমকিতে ভীত না হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবো। খুনিরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন বলেন, নূর হোসেন গ্রেপ্তার আইওয়াশ করলেই হবে না। ইতিমধ্যে র্যাবের চাকরিচ্যুত ২ কর্মকর্তা ও নূর হোসেনের বডিগার্ডের স্বীকারোক্তিতে অনেক রাঘব বোয়ালের নাম এসেছে। যারা এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। অবিলম্বে ওই সব খুনিদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দিতে হবে।
মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন মাহবুবুর রহমান মাসুম, রমজান আলী, আওলাদ হোসেন, সরকার হুমায়ুন কবির, আবদুল হামিদ ভাসানী, মশিউর রহমান শাহীন, রাকিবুল হাসান শিমুল, নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।ড়
এদিকে নূর হোসেন কলকাতায় গ্রেপ্তারের খবরে অনেকেই নড়ে চড়ে বসেছেন। সাত হত্যাকা-ের বিষয়ে নূর হোসেনের জবানিতে কার নাম উঠে আসে এই চিন্তায় অনেকেরই ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারা গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। সূত্রমতে, দুই র্যাব কর্মকর্তা তাদের জবানবন্দিতে সাত হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে নূর হোসেনের নাম বলেছেন। এছাড়াও সাত হত্যাকা-ের সঙ্গে নূর হোসেনের জড়িত থাকার বিষয়ে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের হাতে। আবার নূর হোসেনের কাছেও তথ্য রয়েছে কারা কারা এই অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত। নূর হোসেন যদি তাদের নাম প্রকাশ করে দেয় তাহলে অনেকেই নতুন করে ফেঁসে যেতে পারেন। এই আশঙ্কায় রয়েছেন কেউ কেউ।
আরেকটি সূত্র জানায়, নূর হোসেনের কাছে পাওয়া সিম কার্ডগুলোর কললিস্ট পরীক্ষা করছে কলকাতা পুলিশ। ১০টি সিমকার্ডের মধ্যে বাংলাদেশের গ্রামীণ ফোনের একটি সিম কার্ডও রয়েছে। কলকাতায় এবং বাংলাদেশে কার কার সঙ্গে নূর হোসেন যোগাযোগ করেছে তা বেরিয়ে আসবে এই কললিস্ট পরীক্ষায়। এতে যাদের সঙ্গে নূর হোসেনের কথা হয়েছে তারা রয়েছেন চরম আতঙ্কে।
সাত হত্যাকা-ের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ওসি মামুনুর রশিদ ম-ল জানান, এ পর্যন্ত ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৪ জনকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এছাড়া দুটি মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দুই র্যাব কর্মকর্তা ও নূর হোসেনের বডিগার্ড চার্চিলের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সাত হত্যাকা-ের আদ্যপ্রান্ত উঠে এসেছে। তাদের প্রত্যেকের জবানবন্দিতে নূর হোসেনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি পরিষ্কার।