বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১খবরিকা অনলাইনে আপনাকে স্বাগতম।

নজিরবিহীন অবরোধে আওয়ামী লীগেও উদ্বেগ

নির্দলীয় সরকার এবং একতরফা তফসিলের প্রতিবাদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট সারা দেশে নজিরবিহীন অবরোধ পালন করেছে। কর্মসূচির প্রভাব রাজধানীতে তেমন না পড়লেও সারা দেশ থেকে ঢাকা ছিল কার্যত বিচ্ছিন্ন। আর এমন কর্মসূচিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেও।আন্দোলনবিমুখ হিসেবে পরিচিত বিএনপি এবং রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা জামায়াতে ইসলামী অবরোধ ডেকে তাৎক্ষণিকভাবেই দেশ অচল করে দিতে পারবে- এমনটা আশঙ্কা সরকারের ছিল না। তাই ‘সফল’ এই অবরোধ সরকারকে ভাবিতে তুলেছে।আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সরকারের কর্তৃত্ব বলতে এখন শুধু আছে ঢাকা কিছুটা সচল থাকা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা।ঢাকার বাইরে সব বিভাগীয় এবং জেলা শহর এখন কার্যত বিএনপি-জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে। ঢাকায় আওয়ামী লীগ নেতারা হুমকি দিয়ে চললেও ঢাকার বাইরে আওয়ামী লীগ মাঠে নামে খুব কমই।আওয়ামী লীগের উদ্বেগের আর একটি কারণ হচ্ছে- এবারের অবরোধে ব্যাপক প্রাণহানি। তবে প্রাণহানি আর একতরফা থাকছে না। ৭১ ঘণ্টা অবরোধের তৃতীয় দিন পর্যন্ত বিজিবির এক জওয়ান যেমন মারা গেছেন, তেমনি আওয়ামী লীগের তিনজন নেতাকর্মীও নিহত হয়েছেন।আওয়ামী লীগ নেতারা স্বীকার করছেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের টানা অবরোধে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ভেঙে পড়ায় কার্যত দেশ অচল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রেলপথে সহিংসতায় নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এতে ক্ষমতাসীনদের কাছে বিষয়টা এখন অনেকটাই স্পষ্ট যে, একতরফা নির্বাচন করা হবে দুরূহ।আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে বিএনপি নেতারা যে দাবি করেছেন ৩০টি জেলায় ব্যালট পেপার পৌঁছানো যাবে না কিংবা পৌঁছানো গেলেও ভোট শেষে তা ফেরত আনা যাবে না তা প্রায় নিশ্চিত। এমনকি এ ধরনের জেলার সংখ্যা আরো বাড়বে বৈ কমবে না।সূত্র জানায়, ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলটির প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয় এবং সম্প্রতি দেশি-বিদেশি একাধিক প্রতিষ্ঠানের কয়েটি জরিপে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির আশঙ্কা জোরাল হওয়ায় এখন নেতাকর্মীরাও আর মাঠে নামতে চাইছেন না। ফলে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলকে মোকাবিলা করতে পারছে না, তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর।আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী প্রবীণ নেতা বলেন, ‘নেতাকর্মীদের মাঝে এখন আলোচনা হচ্ছে, একরফতা নির্বাচন ছাড়া বিএনপিকে ঠেকানো যাবে না। তাই তারা একতরফা নির্বাচনের দিকেই তাকিয়ে আছেন। পরিস্থিতি অনুধাবণ করে আওয়ামী লীগের হাই-কমান্ডের সিদ্ধান্তও একতরফা নির্বাচন।’কিন্তু দলটির ভেতরেই এখন আলোচনা হচ্ছে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সরকারকে সেই সুযোগ দেবে কিনা, তা নিয়ে।তাছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচনের দাবিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে, তাতে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাই সন্দিহান।তারাও পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে সুযোগ পেলে দলীয় সভানেত্রীকে আরো কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনার জন্য অনুরোধ করছেন।

Leave a Reply